কোচিং-নোট ব্যবসায়ীরাও নতুন শিক্ষাক্রমের পেছনে লেগেছে : শিক্ষামন্ত্রী

কোচিং-নোট ব্যবসায়ীরাও নতুন শিক্ষাক্রমের পেছনে লেগেছে : শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষা

রাজশাহী টাইমস ডেক্সঃ

নতুন শিক্ষাক্রম চালু হলে শিক্ষার্থীদের দক্ষতার উন্নয়ন হবে ও তারা মুক্ত চিন্তার সুযোগ পাবে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তাবায়িত হলে কোচিং ও নোট-গাইড বন্ধ হয়ে যাবে। এরা (কোচিং ও নোট-গাইড ব্যবসায়ীরা) অনেক শক্তিশালী। তারাও আমাদের পেছনে লেগেছে। শুধু ধর্মের নামে যারা মুক্ত চিন্তা ও বিজ্ঞান চর্চাকে দমন করে রাখতে চান শুধু সেই অপশক্তি নয়, তারসঙ্গে এ গোষ্ঠীগুলোর অনৈতিক বাণিজ্যের লোভ যুক্ত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমিতে জাতীয় শিক্ষা সেবা পরিষদের (জাশিপ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বক্তব্যের শেষে পরিষদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। 

নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই নিয়ে অপপ্রচার চলছে জানিয়ে এর প্রতিবাদ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে বলে দেয়া হলো যে, বই বলছে বানর থেকে মানুষ হয়েছে। সত্য কথা হলো, বইয়ের মধ্যে শিক্ষার্থী শিক্ষককে প্রশ্ন করছে, আমরা কি বানর থেকে হয়েছি। তখন শিক্ষক উত্তরে বলছেন, এটা ভুল কথা, মানুষ বানর থেকে হয়নি। আরও দুই তিনটা জায়গায় আছে যে, বানর বা শিম্পাঞ্জি আমাদের পূর্বপুরুষ না। যারা এগুলো বলছেন তারা মিথ্যাচার করেছেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, তারা বলছেন আমরা (বইয়ে) পর্দা প্রথাকে আক্রমণ করেছি, হেয় করেছি। কিন্তু বইয়ে বেগম রোকেয়ার ‘অবরোধ-বাসিনী’ থেকে তিনটি প্যারগ্রাফ তুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার আগে যে প্যারাগ্রাফটি লেখা হয়েছে এর ভূমিকা সম্পর্কে, সেটির কথা কেউ বলছেন না। সেখানে ১০০ বছর আগে আমাদের নারীরা কি অবস্থায় ছিলেন সে বিষয়ে বলা হয়েছে। এটা কি পর্দা প্রথাকে হেয় করবার জন্য, প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ডা. দীপু মনি আরও বলেন, এরপর বইয়ে বহু পৃষ্ঠায় হিজাব পড়া আমাদের শ্রমিক বোনেরা কাজ করছে। আমার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাথায় ঘোমটা, মাননীয় স্পিকারের মাথায় ঘোমটা। তাহলেতো সেই ছবিগুলোও থাকতো না। 

তিনি বলেন, পোষাক মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত। তারপরও সমাজের রীতিনীতি আছে, সেগুলো নিয়ে কথা বলবার এখতিয়ার আমাদের নেই। কাজেই পর্দ প্রথাকে হেয় করবার দৃষ্টতা আমাদের নেই, সেই চেষ্টাও নেই। 

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী নামে একটি সংগঠন, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা বিরোধীতা করেছে। তারা বলছেন, তারা ১১ তারিখ বিক্ষোভ করবেন। তাদের মূল কথা হলো ইসলাম বিরোধী শিক্ষাক্রম। 

নতুন শিক্ষাক্রমের কোথায় ইসলামের বিরোধিতা করা হয়েছে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষামন্ত্রী। নতুন শিক্ষাক্রম ইসলাম বিরোধী বলে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন শিক্ষক্রমের বই আপনারা যারা পড়েছেন, তারা আমাকে দেখান কোথায় ইসলামের বিরোধীতা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোর কোরআন সুন্নাহর বিরোধীতা করে না। কখনো করেওনি। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদের (জাশিপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাশিপের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান (এন আই খান), বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও পরমানু বিজ্ঞানী ড. এম শমশের আলী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, এনসিটিবির চেয়ার‌ম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম, জাশিপের কনভেনার মো. মাছুম বিল্লাহসহ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকরা।  

আয়োজকরা জানান, ‘জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ’ (জাশিপ) একটি অরাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক সংগঠন। এতে দেশের শুভাকাঙ্ক্ষী শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবীসহ শিক্ষিত সমাজ একত্রে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে। এলাকাভিত্তিক শিক্ষা-সেবা সমাজ তৈরি করবে। সমাজের কাউন্সিলরদের সমাজ উন্নয়নে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে।

জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ ও শিক্ষা-সেবা সমাজ দলমত নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করবে এবং শিক্ষা ও সেবা কার্যক্রমকে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেবে। সরকারের শিক্ষা ও সমাজ সেবা নীতিমালার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও কর্মকৌশল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে। জনগোষ্ঠীকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে মানবসম্পদ রূপে গড়ে তুলতে কাজ করবে।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য করুন :