অভিযুক্ত ই-কমার্সগুলো ব্যবসার সুযোগ পাচ্ছে ভোক্তার স্বার্থে

অভিযুক্ত ই-কমার্সগুলো ব্যবসার সুযোগ পাচ্ছে ভোক্তার স্বার্থে

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেক্সঃ

প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভোক্তার স্বার্থে ব্যবসা করতে দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।

তিনি বলেছেন, তারা যদি ব্যবসার মধ্যে না থাকে তবে কীভাবে ভোক্তার টাকা পরিশোধ করবে। যারা দেশে রয়েছে, একটি পাওনা পরিশোধের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে তারা সেটা করছে। যারা টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছে, কার্যক্রম বন্ধ, তাদের টাকা ফেরত আসছে না। সেটা আরও বড় সমস্যা।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘ই-কমার্স ও ই-সেবা খাতে ভোক্তার অধিকার ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সফিকুজ্জামান জানান, এ পর্যন্ত ভোক্তাদের ৩৮৭ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কিউকম পরিশোধ করেছে ৩০৮ কোটি টাকা, আলিশা মার্ট ৪০ কোটি টাকা ও ইভ্যালি ১০ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল বলে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে পেরেছে। কিন্তু ই-অরেঞ্জের মতো যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্তারা পালিয়ে গেছে, তাদের টাকা ফেরত আনা যাচ্ছে না। তারা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করে ফেলেছে। তাদের আমরা ধরতে পারছি না।

সফিকুজ্জামান আরও বলেন, অনেক সময় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে ই-কমার্স লাগবে। এটির একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা রেখেছে। কোভিডের সময় প্রয়োজনীয় পণ্য মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছে।

তিনি বলেন, তবে শুরুতে নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই এসব স্ক্যাম করে ফেলেছে। তখন ধরা সম্ভব হয়নি। এখন আমরা নিয়ম করেছি। ডেলিভারি সিস্টেম ক্যাশ অন করা হয়েছে। ডিবিআইডি বাধ্যতামূলক করেছি, যেন এসব প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করলে ধরতে পারা যায়। এছাড়া সিসিএমএস (কাস্টোমার কমপ্লেন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) সিস্টেম আসছে। যা শুধু ই-কমার্সের অভিযোগ নিয়ে কাজ করবে। এছাড়া তাদের জন্য পৃথক কর্তৃপক্ষ করা হচ্ছে।

ইভ্যালি সম্পর্কে তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে বলেই ভোক্তাদের টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হচ্ছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি তারা ১০০ ক্রেতাকে পাওনা টাকা ফেরত দেবে। পর্যায়ক্রমে এ কার্যক্রম চলবে। আমরা মনিটর করবো।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের পরিচালক গাজী গোলাম তৌসিফ, ই-ক্যাবের জেনারেল সেক্রেটারি আব্দুল ওয়াহেদ তমাল, ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ মুঠোফোন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।

এর আগে অন্য বক্তারা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ই-কমার্সের বাজার প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের। দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ওপর। বাণিজ্যিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিচার্জ অ্যান্ড মার্কেট ডটকম-এর মতে, ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে এর পরিমাণ হবে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার। দেশের সার্বিক খুচরা বিক্রির মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশের হিস্যা ই-কমার্সের।

এর আগে বিভিন্ন প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অভিযুক্ত ৩২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করে। ৩২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহকদের মোট পাওনার পরিমাণ ৫৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৮টি প্রতিষ্ঠানই গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়নি। প্রথম বছরে, অর্থাৎ ২০২২ সালে টাকা ফেরত দেওয়ার কার্যক্রম ভালোভাবেই চলে।

সে বছর গ্রাহকেরা ফেরত পান ৩১০ কোটি টাকা। কিন্তু দ্বিতীয় বছরে, অর্থাৎ ২০২৩ সালে ফেরত দেওয়া হয় মাত্র ৭৭ কোটি টাকা। গ্রাহকরা এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ফেরত পেয়েছেন ৩৮৭ কোটি টাকা। এখনো ১৪৪ কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় ঘুরছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *