ছিটকে পড়ার আতঙ্কে তারা এখন লিটনের পাশে

রাজশাহী

লিয়াকত হোসেন রাজশাহী:

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নওহাটা ও কাটাখালী নিয়ে এরিয়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

কিন্তু এতে বাধা দেন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত রাজশাহী-৩ পবা-মোহনপুর এর সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। কারন, রাসিকের সীমানা বাড়লে আয়েন উদ্দিনের নির্বাচনী এলাকার অবস্থিত দুটি পৌরসভা সিটি কর্পোরেশন সিমানায় ঢুকে পরবে।

এতে কর্তৃত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল তার। ফলে আয়েন উদ্দিনের বিরোধিতার মুখে সে প্রক্রিয়া থমকে পরে। এতে করে মেয়র লিটনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় এমপি আয়েন উদ্দিনের।

তবে দূরত্বকে পাশ কাটিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকায় মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে লিটনের পক্ষে ভোট চাইছেন যদিও তার এলাকা সিটি কর্পোরেশনর এলাকার বাইরে।

শুধু আয়েন উদ্দিন নন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ও অনেক ‘বিদ্রোহী’ নেতা মাঠে নেমেছেন লিটনের পক্ষে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন,
জাতীয় চার নেতার অন্যতম নেতা শহীদ কামারুজ্জামানের ছেলে হিসেবে খায়রুজ্জামান লিটনকে স্নেহ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে লিটন পরিবারের সম্পর্ক বহু আগে থেকেই। কিন্তু এ সম্পর্ক মানতে নারাজ অনেকেই। এ কারণে তারা লিটনবিরোধী অপতৎপরতা চালান। এমন কি দলীয় এমপিদের মধ্যে অনেকেই লিটনকে মানতে নারাজ।

দলের বাইরে ১৪ দল থেকে মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি হওয়া রাজশাহী সদর আসনের এমপি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাও লিটনের সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। সভা-সমাবেশে লিটনের বিপক্ষে কুৎসা রটিয়েছেন। কিন্তু পরিশেষে তিনিও ভিড়েছেন লিটনের পাশে।

এ দিকে, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার কয়েক মাস ‘অবাঞ্ছিত’ থাকার পর লিটন না ডাকলেও নৌকার পক্ষে মাঠে নেমে লিটনের জন্য ভোট চাইছেন।

সম্প্রতি আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর থেকে বেকায়দায় আছেন ডাবলু সরকার।
এমনকি নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো কমিটি বা নীতি-নির্ধারণী ফোরামেও রাখা হয়নি তাকে। বরং তাকে দল থেকে বহিষ্কার করতে মহানগর আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচি পালন করে। এরপর থেকে ডাবলু সরকার একঘরে হয়ে পড়েন। তবে হঠাৎ করে কয়েকদিন আগে তিনি কিছু অনুসারী নিয়ে লিটনের পক্ষে মাঠে নামেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ভিডিও ফাঁস ইস্যুতে পদ থেকে ছিটকে পরার আতঙ্কে আছেন ডাবলু সরকার। এ অবস্থায় নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় কেন্দ্রের মন যোগাতেই লিটনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন।

আর এ দিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার আশায় ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে মাঠে নামলেন ফজলে হোসেন বাদশা।

একই আশায় একই পথে হাঁটলেন এমপি আয়েন উদ্দিনও।

গত বুধবার পবার নওহাটায় পৌর মেয়র হাফিজ উদ্দিন এর সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সিটি নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আয়েন উদ্দিন।

সভায় তিনি বলেন, ‘আসন্ন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে জয়যুক্ত করার লক্ষ্যে বিশেষ করে পবার নেতাদের বিভিন্ন মহল্লায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও আলোচনায় অংশ নিতে হবে। কারণ পবা উপজেলার অধিকাংশ জনগণের আত্মীয়-স্বজন সিটি কর্পোরেশনের ভোটার। লিটনকে আবারও মেয়র নির্বাচিত করতে হবে।

এদিকে রাসিক নির্বাচনে আবারো লিটন মনোনয়ন পাওয়ায় তার সাথে যোগাযোগ শুরু করেন বাদশা।

নির্বাচন নিয়ে গত ২ মে রাজশাহী ১৪ দলের সভায় অংশ নিয়ে লিটনের পাশাপাশি বসেন বাদশা।

গত দুই বছরে লিটনকে নিয়ে বাদশার করা সমালোচনা গুলোকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলছেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা।

দীর্ঘদিন থেকে লিটনের বিরোধিতা করা আসা নেতা ও এমপিদের বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জমান বলেন, ‘নিজেদের কর্মফলের কারণে দল থেকে ছিটকে পড়ার ভয়ে তারা এখন পথ খুঁজছেন। দলীয় হাইকমান্ডের দৃষ্টিগোচর করতে কায়দা করে তারা সিটি ভোটের মাঠে নেমেছেন। এমপি আয়েন তো সিটির বাইরের লোক। অথচ তিনি নিজ এলাকায় লিটন ভাইয়ের প্রচারণা চালাচ্ছেন এটি হাস্যকর। অতিভক্তি নীতিতে নেমেছেন আয়েন।

এ বিষয়ে জানতে, এমপি আয়েন উদ্দিন ও
ফজলে হোসেন বাদশার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদেরকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

তবে এ বিষয়ে, আওয়ামী লীগ নেতা ডাবলু সরকার বলেন, ‘আমাকে কেউ না চাইলেও আমি নৌকার পক্ষে আছি। নৌকাকে বিজয়ী করতে কাজ শুরু করেছি।

এ বিষয়ে, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, এমপি আয়েন উদ্দিন ও ডাবলু সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ‘এতদিন তারা কেনই বা খায়রুজ্জামান লিটনের বিরোধিতা করে এলেন। এখন কেনই বা তার জন্য মাঠে নামলেন, সেটা একটু ভাবার বিষয়।
এ জন্য আমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে আছি। তাদের কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

আর এ পর্যবেক্ষণ শেষে তাদের ব্যাপারে মন্তব্য করা যাবে বলে জানান এই নেতা।

আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণের পর তাদের ব্যাপারে মন্তব্য করা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *