জাল স্বাক্ষর ও দুই শিক্ষা অফিসকে ভেলকি লাগিয়ে স্কুলে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা

জাল স্বাক্ষর ও দুই শিক্ষা অফিসকে ভেলকি লাগিয়ে স্কুলে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা

রাজশাহী

মোঃ ইসরাফিল হোসেনঃ

রাজশাহীর পুঠিয়ার ভালুকগাছি উচ্চ বিদ্যালয়ে জোর করে এক ব্যক্তিকে চাকরি থেকে অপসারণ করে, সাক্ষর জাল করে অন্য আরেক জনকে নিয়োগ দিতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় পদ বাঁচাতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা শিক্ষা অফিস বরাবর লিখিত দরখাস্ত দিয়েছেন সাগর আলী নামের এক ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী।

জানা যায়, ২০১৪ সালে মেম্বার লেয়ার অফ সাব-ওডিনেট স্টাফ (এমএলএসএস) পদে সাগর আলী নামের ওই ব্যক্তি যথাযথ নিয়ম মেনেই চাকরি পান তিনি। সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে পরিপত্র দারায়, এমএলএসএস, পিয়ন, দপ্তরি, চাপরাশি, আর্দালি প্রভুতি পদবী পরিবর্তন করে, অফিস সহায়ক নাম করণ করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে সাগর আলী নামের ওই অফিস সহায়ক পদে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিকে, নিরাপত্তা প্রহরী পদে সমন্বয় করে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ তিনি অন্য আরেকজনকে অফিস সহায়ক পদে চাকরি দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। ২০২২ সালের শিক্ষক-কর্মচারী প্যাটার্নের সই ও তারিখ জালিয়াতি করে, ২০২৩ সাল দেখিয়ে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অজ্ঞাত কোনো কারণে স্হানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, এমপি এবং প্রধান শিক্ষক নিজেও সুপারিশ করে পদ সমন্বয় করতে পারেনি প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ নিজেই।

এছাড়াও ওই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করা সকল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রশংসা পত্র দেয়া বাবদ, অবৈধভাবে নেয়া হয় ৫০০ টাকা করে। এতে করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। অন্যদিকে উপজেলার প্রায় প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা আরো বেশি ভয়াবহ। সকাল ৯ টায় স্কুল এর ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কোন কোন স্কুলে দেখা যায় দশটার পরে ক্লাস শুরু করতে।

শিক্ষা দেবার ব্যাপারে ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মাঝে অনীহাও দেখা গেছে। এ বিষয়ে ডিগ্রী পাস করা অফিস সহায়ক পদে পদ সমন্বয় চাওয়া সাগর আলী বলেন, হেডমাস্টার আমাকে নিরাপত্তা প্রহরী পদে দিয়ে তিনি মোটা অংকের বিনিময়ে অফিস সহায়ক পদে আবারো নিয়োগ দিতে চাচ্ছেন। অথচ আমি একজন ডিগ্রী পাস ছেলে কি করে তারা এমন কাজ করে আমি ভেবে পাইনা।

এ বিষয়ে আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও জেলার দুই অফিসে দরখাস্ত দিয়েছি। যেখানে আমাদের চেয়ারম্যান এমপি মহোদয় এবং প্রধান শিক্ষক নিজেই সুপারিশ করেছেন আমাকে পথ সমন্বয় করার জন্য সেখানে কিসের লোভে প্রধান শিক্ষক আমার সাথে এমন করছে আমি জানিনা। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাগর আলীর পিতা আব্দুস সোবান তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক পদ সমন্বয় করার জন্য ২ লক্ষ টাকা চেয়েছিল, যেই টাকা দিতে পারিনি, তারপর থেকে প্রধান শিক্ষক বলে, আমার ছেলেকে নাকি গেটে দাড় করিয়ে দারোয়ানী করাবে, এমন কথাও বলে হুমকি দেয়।

বিভিন্ন জায়গায় দরখাস্ত দেওয়ার কারণে বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রধান শিক্ষক জোর করে বিভিন্ন জায়গায় স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি সাদা কাগজেও স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা চালায়। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে, ভালুকগাছি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, এভাবে পদ সমন্বয় করে উলট-পালট করে নিয়োগ দেওয়া যায়।

আমি যা কিছু করছি বৈধভাবে আইন মোতাবেক করছি। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন বিভিন্ন জায়গায় এভাবে উলটপালট করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জাল সাক্ষর এবং নিয়োগের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে ভালুকগাছি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আরিফুল ইসলাম বলেন, আমি শিক্ষক কর্মচারী প্যাটারনে সই করেছি। কোন অনিয়ম করে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।

প্রতিটি স্কুলেই ৫০০ টাকা করে প্রশংসা পত্র নেয়ার সময় দেয়, আমিও দিয়েছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঠিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লায়লা আখতার জাহান বলেন, ওই প্রধান শিক্ষক আমাকে ভুল বুঝিয়ে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে নিয়োগের ব্যাপারে কাগজপত্র চূড়ান্ত করেছে। আবার জেলা শিক্ষা অফিসকে ভুল বুঝিয়ে আমার কাছ থেকে কাগজপত্র চূড়ান্ত করার চেষ্টা করেছে।

এ বিষয়ে জেলায় জানিয়েছি নির্দেশনা দিয়েছে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। চলতি মাসের ২৭ তারিখে নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য আমার কাছে সই নিতে এসেছিল আমি স্বাক্ষর করিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন বলেন, নিয়ম বহির্ভূত কোন কাজ হওয়ার কথা না। এবং হবেও না। আমি যতটুকু বুঝতে পারছি তাতে মনে হচ্ছে ওই প্রধান শিক্ষক সবকিছু চালাকি করে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছে। আমি নিয়োগ বন্ধের চিঠি পাঠিয়ে দিচ্ছি আর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *