‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে খোলা চিঠি সার্বভৌমত্ব ও বিচার বিভাগের ওপর হুমকি’

‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে খোলা চিঠি সার্বভৌমত্ব ও বিচার বিভাগের ওপর হুমকি’

জাতীয় স্পটলাইট

রাজশাহী টাইমস ডেক্সঃ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দেয়ার সমালোচনা করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। তারা বলছেন, ওই খোলা চিঠিতে যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর স্পষ্ট হুমকি বলে মনে হচ্ছে।

এ ধরনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলছেন, বিবৃতিদাতারা যে আহবান জানিয়েছেন তা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং বিচার প্রক্রিয়াকে হেয় প্রতিপন্ন করার শামিল।

বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিতের দাবি জানিয়ে নোববেলজয়ী ইউনূসের পক্ষে খোলা চিঠির সমালোচনা করে শুক্রবার এই বিবৃতি দিয়েছেন ১৭১ জন বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী। এর আগের দিন ইউনূসের পক্ষের চিঠির সমালোচনা করে আলাদা দুটি বিবৃতি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ।

সোমবার নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি লেখেন ১৬০ বিশ্বনেতা। এদের মধ্যে রয়েছে শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ ও শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের ব্যক্তিরা।

বিষয়টি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় অযাচিত হস্তক্ষেপ বলার পরও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন টুইট করে ইউনূসের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকে বলেছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিভিন্ন দেশের কয়েকজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সদস্যের লেখা খোলা চিঠি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

‘খোলা চিঠির বক্তব্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর স্পষ্ট হুমকি হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। চিঠিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত চলমান মামলাসমূহের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।’

বিশিষ্ট নাগরিকরা বলছেন, ‘দেশের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে আমরা বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার ওপর এ-ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’

ইউনূসের পক্ষে বিদেশিদের ওই খোলা চিঠির প্রেক্ষিতে বেশ কিছু আইনি ও নৈতিক প্রশ্ন সামনে চলে আসে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা।

তারা বলছেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪(৪) অনুযায়ী বিচারকগণ তাদের বিচারিক কাজে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত কারোরই বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার কোনো এখতিয়ার নেই।

‘উল্লিখিত চিঠির বক্তব্য বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা স্বীকৃত শ্রমিকদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এই চিঠিতে নিরপেক্ষ বিচারকের মাধ্যমে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিচারের যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে হেয় প্রতিপন্ন করার শামিল বলে আমরা মনে করি।’

বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকই আইনের দৃষ্টিতে সমান। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই সংবিধানে সকলেরই আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ও স্বাধীনভাবে হচ্ছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সেই প্রেক্ষাপটে ‘বিচারিক হেনস্তার অভিযোগ অমূলক ও অনভিপ্রেত। পাশাপাশি ড. ইউনূস বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে সবসময়ই দেশে ও বিদেশে ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সকল কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন।’

বিবৃতি দেয়া বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- শিল্পী অধ্যাপক নিসার হোসেন, নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. সনৎ কুমার সাহা, এমিরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক শিল্পী হাশেম খান, সমাজবিজ্ঞানী ও লেখক অধ্যাপক বুলবন ওসমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক শিল্পী রফিকুন নবী।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ, বিশ্ব শিক্ষক পরিষদের সভাপতি ও এশিয়াটিক সোসাইটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

শিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন, অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম, নাট্যব্যক্তিত্ব শ্রী রামেন্দু মজুমদার, কৰি নির্মলেন্দু গুন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. বজলুল হক খন্দকার, অর্থনীতিবিদ ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল বায়েস।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, সাবেক বিচারপতি মমতাজউদ্দীন আহমেদ, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ আলী জহির, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এ কে এম মনোয়ার উদ্দিন আহমদ।

কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্য, চলচ্চিত্রকার মানজারে হাসিন মুরাদ, নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান, নাট্যজন ম. হামিদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান, সাংবাদিক ও লেখক অজয় দাশগুপ্ত।

মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুর রশীদ, মেজর জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ আলী শিকদার, মেজর জেনারেল (অব:) নাসির উদ্দিন।

নাট্য ব্যক্তিত্ব সুবর্ণা মুস্তাফা, কবি তারিক সুজাত, কবি অসীম সাহা, নাট্যজন পীষুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি ও চিকিৎসক হারিছুল হক, নারী নেত্রী রোকেয়া কবির, নাট্যব্যক্তিত্ব ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস।

লেখক শাহরিয়ার কবির, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, কবি ও ছড়াকার অধ্যাপক ড. খালেদ হোসাইন, অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনেওয়াজ প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *