নওগাঁয় প্রধান শিক্ষকের রুমে নারী সহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকান্ডের ভিডিও ভাইরাল

নওগাঁয় প্রধান শিক্ষকের রুমে নারী সহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকান্ডের ভিডিও ভাইরাল

রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী :

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় প্রধান শিক্ষকে অফিস কক্ষে নারী সহকর্মীর সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক কর্মকান্ডের একাধিক ভিডিও ক্লীপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ওই অনৈতিক কর্মকান্ডের ভিডিও ক্লীপগুলো উপজেলার বেগুনজোয়ার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহাম্মেদ মিঠু ও তাঁর এক নারী সহকর্মীর।

এই দুই শিক্ষকের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা। এঘটনায় মঙ্গলবার ( ৪ জুলাই) নওগাঁ জেলা প্রশাসক (ডিসি) র’ কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ওই অভিযোগের অনুলিপি বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকেও দেওয়া হয়েছে।

দুই শিক্ষকের অনৈতিক কর্মকান্ডের ঘটনা তদন্তে জন্য উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লা আল মামুনকে আহ্বায়ক করে আজ বুধবার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার অঞ্জন কুমার কুন্ড ও বেগুনজোয়ার উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম।
বদলগাছী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াসিউর রহমান বুধবার বিকেল ৩টায় এই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও এলাকাবাসীরা বলেন, বেগুনজোয়ার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহাম্মেদ মিঠু ও তাঁর স্ত্রী সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে রয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী প্রায় দিনই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। মাসের মধ্যে যে কোন একদিন বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতার স্বাক্ষর করেন। প্রধান শিক্ষকের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে।

এই প্রধান শিক্ষক এলাকাবাসী, স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধর্তন প্রশাসনের কাউকেই তোয়াক্কা করেন না। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে বলেও তাঁরা কোন সুফল পাননি। প্রধান শিক্ষক তাঁর অফিস কক্ষে তাঁর এক সহকারী শিক্ষিকা (সহকর্মী)কে ডেকে নিয়ে যৌন্য নির্যাতন ও উত্ত্যক্ত করছিলেন।

পরে তাঁরা দুজন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষক-কর্মচারীরা বিষয়টি জানতে পারেন। তবে তাঁরা ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি। ঈদের পর তাঁদের দুজনের অনৈতিক কর্মকান্ডের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারের ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।

বিলাশবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ও পারসোমবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার বলেন, বেগুনজোয়ার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এক সহকারী শিক্ষিকা (সহকর্মী)র” সঙ্গে প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহাম্মদে মিঠরু অনৈতিক কর্মকান্ডের ভিডিও ফেসবুক ও অনলাইন মাধ্যম ছড়িয়ে পড়েছে। এতেকরে তাঁরা দুজন শিক্ষকতার মহান পেশায় থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। বিদ্যালয় থেকে তাঁদের অপসারণ দাবি জানাচ্ছি।

অভিযোগকারী শেখর আহমেদ বলেন, আমি এলাকার একজন সচেতন মানুষ হিসাবে এই ঘটনার ভিডিও ক্লিপ দেখে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি ওই দুই শিক্ষকের যথাযথ ব্যবস্থা চাই। ঈদের ছুটির পর বিদ্যালয় খোলা হলে আমরা মানববন্ধন করব।

তিনি আরো বলেন, ঐ বিদ্যালয়ের মানেজিং কমিটিও একটি পুতুল কমিটি হিসেবে তৈরি কওে রেখেছে তিনি। যা বিগত কয়েক বছর যাবৎ অভিভাবকের আশা-আকাঙ্খার কমিটি গঠন হয় নাই। তাই তিনি এই অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উদ্ধর্তন কতৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেছেন।

প্রধানশিক্ষক ও সহকারী অনৈতিক কর্মকান্ডের কয়েকটি ভিডিও ক্লীপ দৈনিক সংবাদ এর প্রতিনিধির কাছে এসেছে। একটি ভিডিও ক্লীপে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহাম্মেদ তাঁর চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর টেবিলের সামনে চেয়ারে তাঁরই এক নারী সহকারী শিক্ষিকা (সহকর্মী) একা বসে আছেন। প্রধানশিক্ষক তাঁর চেয়ার থেকে উঠে এসে নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানীর চেষ্টা করছিলেন।

তখন নারী সহকর্মী হাত দিয়ে মুখ মুন্ডল আড়াল করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে প্রধান শিক্ষক ওই নারী সহকর্মীকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এরপর প্রধান শিক্ষক তাঁর চেয়ারে গিয়ে বসেন। আরেক ভিড়িও ক্লীপে দেখাযায় প্রধান শিক্ষক তাঁর চেয়ার থেকে উঠে এসে নারী সহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকান্ড করছিলেন।

বিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ঐ নারী সহকর্মীর সঙ্গে প্রধান শিক্ষক আবু সাদত শামীম আহাম্মেদ মিঠুর অনৈতিক কর্মকান্ডে ঘটনাটি অনেক আগে জানতে পারেন। ওই নারী সহকর্মী প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গেলে প্রধান শিক্ষক কাউকে সেখানে থাকতে দিতেন না। তাঁরা সেখানে অনৈতিক কর্মকান্ড করতেন। কয়েক জন শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রধান শিক্ষকের এই অনৈতিক কর্মকান্ডে দৃশ্য ধারণের জন্য ভিডিও করার পরিকল্পনা করেন। ঈদের ছুটির তিন দিন আগে তাঁরা গোপনে প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে একটি আইপি বাল্ব ক্যামেরা লাগান।

আইপি ক্যামেরায় প্রধান শিক্ষকের এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের দৃশ্য ধরা পড়ে। এবিষয়টি জানাজানি হলে প্রধান শিক্ষক তাঁদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। এরপর অন্য একটি পক্ষ ভিডিও ফাঁস করেদেন। এতে ঐ স্কুলের অভিভাবক ও এলাকায় সচেতন লোকজনের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

এবিষয়ে জানতে বেগুনজোয়ার উচ্চবিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহাম্মেদ মিঠুর মুঠোফোনে একাধিক বার কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ.জ.ম শফি মাহমুদ বলেন, আমি ভিডিও ক্লীপ দেখে মঙ্গলবারে প্রধান শিক্ষক ও তাঁর নারী সহকর্মীকে ডেকে পাঠিয়ে ছিলাম। তাঁরা দু’জন পৃথকভাবে আমার সঙ্গে দেখা করে ভিডিওগুলোর দৃশ্য সত্য নয় বলে দাবি করেছেন। একটি মহল তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে তাঁরা আমাকে বলেছেন।

বদলগাছী উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, আমি ভিডিও ক্লীপ পেয়েছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াসিউর রহমান বলেন, বেগুনজোয়ার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তাঁর নারী সহকর্মীর অনৈতিক কর্মকান্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এঘটনাটি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্য তদন্তে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মেহেদী হাসান বলেন, অভিযোগটি এখনো আমার হাতে আসেনি। হাতে এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *