পাবনা আটঘরিয়ায় ৮ ঘন্টার মধ্যে নৃশংস হত্যার রহস্য উৎঘাটন ও আসামী গ্রেফতার

পাবনা আটঘরিয়ায় ৮ ঘন্টার মধ্যে নৃশংস হত্যার রহস্য উৎঘাটন ও আসামী গ্রেফতার

রাজশাহী

মোঃ ইসরাফিল হোসেনঃ

পরকিয়া প্রেমের জের ধরে স্ত্রীর যোগসাজসে স্বামীর গলা কেটে নৃশংস হত্যা, ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতার, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু সহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার ।

ঘটনাঃ গত ১৩/০৪/২০২৩ খ্রিঃ দিবাগত রাত অনুমান ১০.০০ ঘটিকায় আটঘরিয়া থানাধীন দেবোত্তর ইউনিয়নের জুমাইখিরি গ্রামের মৃত নাগরের পুত্র মোঃ আলহাজ্ব প্রামানিক (৩৬) খাওয়া দাওয়া শেষে তার নিজ শয়ন কক্ষে তার স্ত্রী মোছাঃ সুরাইয়া খাতুন (৩২) ও কন্যা মোছাঃ সানজিদা আক্তার (০৫) সহ ঘুমিয়ে পড়ে। ১৪/০৪/২০২৩ খ্রিঃ অনুমান ০৭.০০ ঘটিকায় প্রতিবেশী মোছাঃ মিনা খাতুন (২০) আলহাজ্ব এর ফ্রিজে রাখা মাছ নেওয়ার জন্য তার বাড়ীতে গেলে ঘরের বারান্দার সামনের উঠানে গলাকাটা লাশ দেখতে পেয়ে মিনা খাতুন ডাক চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন আলহাজ্ব এর বাড়ীতে এসে আলহাজ্ব এর গলাকাটা লাশ উঠানে পড়ে থাকতে দেখে আটঘরিয়া থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়। সংবাদ পেয়ে আটঘরিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধারপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এই ঘটনার আটঘরিয়া থানার মামলা নং-০৭, তাং- ১৪/০৪/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।

উক্ত হত্যাকান্ডের পর পাবনা জেলার মাননীয় পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আকবর আলী মুনসী মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মোঃ মাসুদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোঃ জিয়াউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ঈশ্বরদী সার্কেল বিপ্লব কুমার গোস্বামী দের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অফিসার ইনচার্জ, আটঘরিয়া থানা ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মামলাটির সঠিক রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামী গ্রেফতারের লক্ষ্যে বুদ্ধিদীপ্ত সাহসিকতা ও কৌশল অবলম্বন করে আলহাজ্ব এর স্ত্রী মোছাঃ সুরাইয়া খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার কথাবার্তা অসংলগ্ন ও সন্দেহজনক মনে হয়।

স্থানীয় সূত্র, গোপন সংবাদ ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুনের সাথে জড়িত মোছাঃ সুরাইয়া খাতুনের পরকিয়া প্রেমিক আসামী মোঃ ইসমাইল হোসেনকে গ্রেফতার করে। আসামী ইসমাইল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার সাথে আলহাজ্ব এর স্ত্রী সুরাইয়া খাতুন এর দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক আছে। তাদের প্রেমের সম্পর্কে আলহাজ্ব বাধা সৃষ্টি করায় আলহাজ্বকে তারা মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।

তার প্রেক্ষিতে গত ১৩/০৪/২০২৩ খ্রিঃ রাত্রী অনুমান ২০.৩০ ঘটিকার দিকে ইসমাইল হোসেন এবং সুরাইয়া খাতুন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসমাইল এর নিয়ে আসা ঘুমের ওষুধ সুরাইয়া লাউয়ের পাতার ভর্তার সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে আলহাজ্ব ঘুমিয়ে পড়ে। আলহাজ্ব ঘুমিয়ে পড়লে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪/০৪/২০১৩ খ্রিঃ রাত্রী অনুমান ০১.০০ ঘটিকার সময় আসামী সুরাইয়া খাতুন এর সহায়তায় আসামী ইসমাইল আলহাজ্ব এর শয়ন কক্ষে ঢুকে তাকে কক্ষের বারান্দার সামনের উঠানে নিয়ে এসে ঘুমন্ত আলহাজকে চাকু দিয়ে জবাই করে হত্যা করে।

আলহাজ্বের লাশ উঠানে ফেলে রেখে সুরাইয়া নিজ ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে এবং ইসমাইল হোসেন বাড়ী থেকে বের হয়ে হত্যার কাজে ব্যবহৃত চাকুটি জুমাইখিরি গ্রামের জনৈক মোঃ হাজী সোরাব আলী এর পুকুরে ফেলে দেয়। আটঘরিয়া থানা পুলিশ আসামী ইসমাইলের দেখানো মতে সকলের সামনে সোহরাব আলীর পুকুর হতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু ও ঘুমের ওষুধের খালি ০১টি পাতা উদ্ধার করে।

উদ্ধারকৃত আলামত সমূহঃ

০১। ০১ টি ধারালো চাকু, যাহা বাঁশের বাটসহ লম্বা ১১.৭৫ ইঞ্চি, লোহার অংশ ৭ (সাত) ইঞ্চি।

০২। ০১ টি ওষুধের খালিপাত, যাহাতে ১০ টি ক্লোনাট্রিল নামক ঘুমের বড়ি ছিল।

০৩। নীল রংঙ্গের জিন্স প্যান্টের ০২টি পায়ের অংশের ছেঁড়া অংশ।

অভিযানে গ্রেফতারকৃত আসামীঃ

০১। মোঃ ইসমাইল হোসেন (২৬), পিতা- মোঃ আব্দুল হালিম, সাং-জুমাইখিরি, থানা-আটঘরিয়া, জেলা-পাবনা।

০২। মোছাঃ সুরাইয়া খাতুন (৩২), স্বামীঃ মৃত আলহাজ্ব, সাং-জুমাইখিরি, থানা- আটঘরিয়া, জেলা পাবনা।

আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও তদন্তে জানা যায় আসামী মোঃ ইসমাইল হোসেন ও মোছাঃ সুরাইয়া খাতুন এর মধ্য অনৈতিক পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক আছে। পরকীয়া প্রেমের কারণে আসামীদ্বয় পরিকল্পিতভাবে যোগসাজশে আলহাকে ঘুমের ওষুধ লাউ এর পাতার ভর্তার সাথে মিশাইয়া অচেতন করে রাতের আধারে ধারালো চাকু দ্বারা জবাই করে হত্যা করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *