পুঠিয়ায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মিলেনি সরকারি সহায়তা বিধবা মায়ের, লাশ ধোয়া ও ঝিয়ের কাজ করে পড়াচ্ছেন ছেলে-মেয়েকে

পুঠিয়ায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মিলেনি সরকারি সহায়তা বিধবা মায়ের, লাশ ধোয়া ও ঝিয়ের কাজ করে পড়াচ্ছেন ছেলে-মেয়েকে

রাজশাহী

মোঃ ইসরাফিল হোসেনঃ

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় এমন এক অসহায় মায়ের সন্ধান পাওয়া গেছে, যিনি এলাকায় মানুষের মৃত লাশ ধুয়ে এবং অন্যের বাসায় কাজ করে তার দুই সন্তানকে পড়াশোনা করাচ্ছেন। অসহায় ওই মায়ের নাম মোছাঃ রোকেয়া বেগম। তার বাড়ি উপজেলার ভালুকগাছি ইউপির এসআরজি এলাকায়।

প্রায় ৯ বছর আগে হারিয়েছেন তার স্বামীকে। তারপর থেকে বহু লড়াই সংগ্রাম করে দুই ছেলে মেয়ে কে নিয়ে চরম অসহায় হয়ে পড়েন। এরপর থেকে এলাকায় কেউ মারা গেলে তার লাশ ধোয়ানো কাজ এবং অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে দুই সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করার প্রত্যয়ে স্বপ্ন দেখছেন দিবা রাত্রি। বিধবা ওই মায়ের চোখ যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে একটু সুখের। ছেলে মেয়ে চাকরি করে মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে এই আশায় বুক বেঁধে পার করছেন দিন।

জানা যায়, বিধবা রোকেয়া পারভীনের স্বামী মোঃ আব্দুল হালিম উপজেলার এসআরজি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় চাকরি করতেন। স্বামী বেঁচে থাকতে সময়টা ভালোই কাটতো। সেরকমভাবে সংসারে অভাবের দেখা মেলেনি। ২০১৬ সালে স্বামী আব্দুল হালিম এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবার পর থেকেই অভাব যেন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে রোকিয়া পারভীনের।

ছোট ছেলে-মেয়েকে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়েছে বহুদিন। সংসারের হাল ধরতে যে কাজটি কেউ করতে চায় না, মৃত মানুষের লাশ ধোয়া, সে কাজটি বেছে নেয় রোকিয়া পারভীন। পাশাপাশি অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে দুই সন্তানকে বুকে নিয়ে চলে অসহায় ওই মায়ের পথ চলা। রোকিয়া পারভিন কে দেখে এতোটুকু বোঝা গেছে যে, একটি মেয়ের জীবনে স্বামী ছাড়া যেন তার জীবন মূল্যহীন আর অসহায়।

যদিও বাড়ির ভিটা ছাড়া, সম্পদ বলতে কিছুই নেই। ছেলে-মেয়ে বড় হয়েছে পড়াশোনা করছেন অনার্সে। এতদিনে হয়তো মায়ের জীবন কিছুটা সার্থক হয়েছে। কষ্টের ফল যেন গাছে ধরতে শুরু করেছে। অন্যদিকে বহু বার সংসারের অভাব নামের দুঃখ ঘোচাতে হাজির হয়েছিলেন ভালুকগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট সেখানেও পাননি কোন সরকারি সহায়তা বা বিধবা ভাতার কোন কার্ড।

তাই সরকারি কোনো সহায়তা পাবার আশা একদমই ছেড়ে দিয়েছেন এখন। ঘুরেছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও নেতা-নেত্রীদের কাছে কোথাও কোন সহায়তা না পেয়ে, রোকেয়া পারভীন বুঝে গেছেন হয়তো সরকারি সহায়তা বা ভাতা সেগুলো তার চেয়েও যারা বেশি অসহায় অবস্থানে রয়েছে, তাদের জন্য, আমার জন্য নয়। বড় ছেলে আবু সায়েম তিনি রাজশাহী কলেজে ভূগোল বিষয়ের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। আর ছোট মেয়ে মোছাঃ হালিমাতুস সাদিয়া অগ্রণী কলেজ রাজশাহীতে এইচএসসিতে পড়াশোনা করছে।

রোকিয়া বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার স্বামী মারা যাবার পর, না খেয়ে না পরে বহু কষ্ট করে ছেলেমেয়ে দুজনকে পড়াশোনা করাচ্ছি। মানুষ যে কাজটি কেউ করতে চায় না অন্যের বাসায় কাজ করা ও এলাকায় কেউ মারা গেলে তার লাশ ধোয়ানো এসব কাজ করে আমার ছেলে মেয়ে দুটিকে আজ বড় করেছি বড় ছেলে অনার্সে পড়ছে আর মেয়েটা কে রাজশাহী অগ্রণী কলেজে ভর্তি করে দিয়েছি।

আমি বহুবার সরকারি অনুদানের জন্য চেয়ারম্যান, মেম্বার ও নেতা নেত্রীদের কাছে গিয়েছি কেউ আমাকে সহায়তা করেনি। এই সহায়তা গুলো হয়তো আমার জন্য নয়। আমার প্রশ্ন মানুষ আরো কতোটা অসহায় হলে তার জন্য সরকারি সহায়তা বরাদ্দ মিলে আর বিধবা হবার কতো বছর পার হলে তাকে বিধবা বলা হয় আমার জানা নেই।

এসব বিষয়ে কথা হয় ভালুকগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জিল্লুর রহমানের সঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টা আমি জানতাম, কিন্তু মনে থাকে না। এবার যদি কোন অনুদান আসে তাহলে তার জন্য রাখার চেষ্টা করব। আসলেই সে সরকারি অনুদান ও বিধবা ভাতা পাবার যোগ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *