মোঃ ইসরাফিল হোসেনঃ
বগুড়া’য় ফাঁদে ফেলে অপহরণ পূর্বক মুক্তিপন আদায়কারী চক্রের মূলহোতা সহ ০৬ সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার ও অপহৃত ভূক্তভোগিদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার।
বাদী মোঃ পুটু মিয়া মোল্লা বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানায় হাজির হয়ে মৌখিক অভিযোগ দায়ের করেন যে, তার ছেলে মোঃ তাজনুর আহম্মেদ রানা(৩০) ও তার ছেলের বন্ধু মোঃ শরিফুল ইসলাম (২৮), পিতা-মোঃ শামীম হোসেন, সাং-বাঁশবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া, থানা-শাজাহানপুর, জেলা-বগুড়াদ্বয় গত ০২/০৪/২০২৩ খ্রি. তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৬.৫০ ঘটিকার সময় মাঝিড়া বাজারে যাওয়ার কথা বলে তার ছেলের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী হতে বাহির হয়ে যায়।
পরবর্তীতে একই তারিখ রাত্রী অনুমান ০৯.৩০ ঘটিকার সময় তার ছেলে মোঃ রানা এর মোবাইল নাম্বার হতে বাদীর অন্য ছেলে মোঃ রাজু এর মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়ে জানায় যে, তাকে কয়েকজন লোক অপহরন করে আটক করে রেখেছে এবং মুক্তিপন হিসেবে তাৎক্ষনিকভাবে ২,০০,০০০/- টাকা দুইটি ভিন্ন ভিন্ন বিকাশ দিয়ে উক্ত নাম্বারে দিতে বলে। মুক্তিপনের টাকা দিলে তার ছেলেকে ছেড়ে দিবে বলে জানায়। বাদীসহ তার ছেলে রাজু তাদের বলেন এতটাকা কিভাবে দিব এবং এত রাতে বিকাশের দোকানও বন্ধ। তখন তার ছেলে মোঃ রানা এর ফোন হতে বার বার তার ছেলে মোঃ রাজু এর নাম্বারে ফোন দিয়ে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে এবং তার ছেলে ভিকটিম মোঃ রানাকে মারপিটসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করছে।
এ সংক্রান্তে বাদীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক বগুড়া জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, বিপিএম, পিপিএম মহোদয়ের সার্বিক দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জনাব মোঃ শরাফত ইসলাম এর তত্তাবধানে ডিবি বগুড়া’র ইনচার্জ মোঃ সাইহান ওলিউল্লাহ এর নেতৃত্বে টিম ডিবি বগুড়া ও শাজাহানপুর থানার একটি যৌথ টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অদ্য ০৩/০৪/২০২৩ খ্রি. তারিখ রাত্রী অনুমান ০২.৩০ ঘটিকার সময় হতে বিভিন্ন সময়ে বগুড়া জেলার সদর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ফাঁদে ফেলে অপহরণ পূর্বক মুক্তিপন আদায়কারী চক্রের ০২(দুই) সদস্যকে আটক করে।
পরবর্তীতে আটককৃত আসামীদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক ডিবি বগুড়া এর একটি চৌকস টিম একই তারিখ সারারাত ব্যাপী বগুড়া সদর ও শাজাহানপুর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপহরন চক্রের মূলহোতা সহ ঘটনার সহিত সরাসরি জড়িত সর্বমোট ০৬(ছয়) জন আসামীকে গ্রেফতার করে ও অপহৃত ভূক্তভোগিদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারসহ ভূক্তভোগির ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করে।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের নাম ও ঠিকানাঃ
১। মোঃ কোরবান আলী(৩০), পিতা-মৃত আতাবুল্লাহ, সাং-পুরান বগুড়া,
২। শ্রী তাপস চন্দ্র সরকার(২৬), পিতা-শ্রী রতন চন্দ্র সরকার, সাং-পুরান বগুড়া,
৩। মোঃ জান্নাতুল ফেরদৌস সাব্বির(২৪), পিতা- মোঃ সামসুল হক, সাং-সুত্রাপুর গোহাইল রোড,
৪। মোঃ শহিদ হাসান(২০), পিতা-মোঃ আমজাদ হোসেন, সাং-পুরান বগুড়া বটতলা,
৫। শাহরিয়ার আহমেদ শান্ত(২১), পিতা-মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সাং-পুরান বগুড়া শেরেবাংলা নগর, সকলের থানা-বগুড়া সদর
৬। মোছাঃ রেশমা খাতুন(৩৮), পিতা-মৃত আঃ সাত্তার, স্বামী-মৃত কালাম, সাং-রামচন্দ্রপুর, (এ/পি-মাদলা), থানা-শাজাহানপুর, থানা-শাজাহানপুর, সকলের জেলা-বগুড়া।
উদ্ধারকৃত আলমতের বর্ণনাঃ
১। অপহৃত এর ব্যবহৃত মোটরসাইকেল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামীগণ জানায় যে, তারা দীর্ঘদিন যাবত যোগসাজসে তাদের মেয়ে সদস্য দ্বারা বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের সাথে বিভিন্ন বাহানায় সখ্যতা গড়ে তুলতো। অতঃপর কৌশলে তাদের মেয়ে সদস্য ভূক্তভোগিদের সাথে দেখা করার কথা বলে তাদেরকে বিভিন্ন স্থানে ডেকে নিয়ে গিয়ে অপহরণ পূর্বক মুক্তিপন আদায় করে আসতেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০২/০৪/২০২৩ খ্রি. তারিখ রাত্রী অনুমান ০৮.৩০ ঘটিকার সময় তাদের মেয়ে সদস্য দ্বারা কৌশলে ভূক্তভোগিদের বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানাধীন শাকপালা বাসষ্ট্যান্ড মোড়ে পৌঁছামাত্রই উপরোক্ত সকল আসামীগণ পলাতক আসামীসহ মুক্তিপন আদায়ের উদ্দেশ্যে জোর পূর্বক ভূক্তভোগিদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল সহ সিএনজি যোগে অপহরণ করে এবং ভূক্তভোগিদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল সহ বগুড়া সদর থানাধীন পুরান বগুড়া হিন্দুপাড়া গ্রামস্থ ফাকা জায়গায় হাত পা রশি দ্বারা বেঁধে রেখে নির্যাতন করে এবং ভূক্তভোগিদের পরিবারের নিকট মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ২,০০,০০০/-(দুই লক্ষ) টাকা মুক্তিপন দাবি করে আসতেছিল।
উল্লেখ্য যে, ধৃত আসামীগণ অপহরন, চাঁদাবাজ ও মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য।
উল্লেখ্য যে, ধৃত আসামী ১। মোঃ কোরবান আলী এর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, চাঁদাবাজি ও মাদক মামলাসহ সর্বমোট ০৭(সাত)টি মামলা রয়েছে।
প্রকাশ থাকে যে, গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানায় মামলা রুজু পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং পলাতক আসামী গ্রেফতার সংক্রান্তে অভিযান চলমান রয়েছে।