ভারী বৃষ্টিপাতে নাটোরের বাড়িঘরে হাঁটুপানি

ভারী বৃষ্টিপাতে নাটোরের বাড়িঘরে হাঁটুপানি

রাজশাহী

স্টাফ রিপোর্টারঃ

সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে নাটোর জেলাজুড়ে বুধবার (৪ অক্টোবর) থেকে বৃহস্পতিবার সারাদিন ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে নাটোর পৌরসভায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নিচু এলাকার বাসিন্দারা। পৌরসভার ‘নয়নজলি’ খ্যাত খাল ভরাট ও বেদখল হয়ে যাওয়া এবং ত্রুটিপূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে সারাদেশের ন্যায় নাটোরেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। নাটোর সদরে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১২০ মিলিমিটার। গত একবছরে এটি একদিনের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এতে নাটোর পৌরসভাসহ জেলাজুড়েই বেশিরভাগ এলাকার মাঠঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

তবে নতুন করে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নাটোর শহরের আবাসিক ও নিম্নাঞ্চল ছাড়া বাণিজ্যিক এলাকা থেকে পানি সরে গেছে। তবে শুক্রবার পর্যন্ত নাটোর পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে পানিবন্দি রয়েছেন পৌরবাসী। বিশেষ করে পৌর এলাকার কাঁঠালবাড়ীয়া কালুর মোড়, উত্তর চৌকিরপাড়, দক্ষিণ চৌকির পাড়, বঙ্গোজল মাস্টারপাড়া, উত্তর পটুয়াপাড়া, দক্ষিণ পটুয়া পাড়া, বলারী পাড়া, হাজরা নাটোর, আলাইপুর, নাটোর বালক সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ফৌজদারিপাড়া, পালপাড়া, বড়াগাছা, আদালত চত্বর, জেলা প্রশাসন চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।

ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সারাদিন নাটোরে নতুন করে বৃষ্টিপাত হয়নি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্যমতে, জেলার সিংড়া ও নলডাঙ্গা উপজেলার অন্তত ১৬ হেক্টর রোপা আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে ৪২২ হেক্টর জমির ধান। এছাড়া নাটোর সদর উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের সবজিক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, নাটোর পৌরসভার জলাবদ্ধ এলাকায় পানি নিষ্কাশনে কাজ করছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ভেকু ও পৌরসভার লোকজন দিয়ে পানি সরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে পৌরসভা।

স্থানীয়রা বলছেন, পৌর এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র নয়নজলি খালটি নানাভাবে বেদখল ও ভরাট হয়ে যাওয়া এবং পৌরসভার ত্রুটিপূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

নাটোর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মলয় কুমার রায় জানান, গতকাল থেকে এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িঘরে হাঁটুসমান পানি জমে গেছে। বাড়িঘর থেকে পানি কমছে না। সাময়িকভাবে ভেকু ও লোকজন দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু এটি স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধানে নয়নজলি খাল উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

এ বিষয়ে নাটোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে খাল ও ড্রেন বিভিন্নভাবে বেদখল হয়ে যাওয়া, বাড়িঘর নির্মাণ, ময়লা-আবর্জনা জমে যাওয়ার কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে সমস্যা সমাধানে আমাদের লোকজন কাজ করছে। আশা করা হচ্ছে, দু-একদিনের মধ্যে পৌরসভার জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, জেলায় গড়ে ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে নাটোর সদরে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নতুন করে বৃষ্টিপাত না হলে ফসলের ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *