রাজশাহীতে নামের মিলে মাদক মামলায় কলেজছাত্র কারাগারে, পরে জামিন

রাজশাহী

মোঃ ইসরাফিল হোসেন,রাজশাহী:

রাজশাহীতে নাম ও বাবার নাম মিল থাকায় এক কলেজছাত্রকে মাদক মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তাকে জামিন দিয়েছেন আদালত।

ওই কলেজছাত্রের নাম ইসমাইল হোসেন (২১)। তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফাজিলপুর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে। তার মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম। ইসমাইল গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র।

মামলাটির প্রকৃত আসামি ইসমাইল হোসেন (২০) একই ওয়ার্ডের লালবাগ হেলিপ্যাড গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে। তার মায়ের নাম বেলিয়ারা। আসামি ইসমাইল পেশায় কাঠমিস্ত্রি। মাদক মামলায় আসামি হওয়ার পর থেকে তিনি ভারতে অত্মগোপনে আছেন।

বিষয়টি বুঝতে পেরে আদালতে আবারও প্রতিবেদন পাঠায় গোদাগাড়ী থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে ভুক্তভোগী কলেজছাত্রকে জামিন দেন আদালত।

কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনের ভাই আব্দুল হাকিম রুবেল বলেন, ‘রোববার (১২ মে) এশার নামাজের সময় গোদাগাড়ী মডেল থানার এসআই আতিকুর রহমান আমাদের বাড়িতে আসেন। এসময় তিনি একটি মাদক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখিয়ে আমার ভাই ইসমাইল হোসেনকে ধরে নিয়ে যান।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এসআইকে বারবার বলেছি তার নামে কোনো মাদক মামলা নেই। এসময় তার জাতীয় পরিচয়পত্রও দেখানো হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানার সঙ্গে গ্রাম, মায়ের নাম ও বয়স মিল নেই সেটিও দেখিয়েছি। এরপরও এসআই আতিকুর রহমান জোর করে আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যান। পরের দিন মাদকদ্রব্য আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠান।’

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত পৌনে ১১টার দিকে গোদাগাড়ীর মাদারপুর জামে মসজিদ মার্কেটের সামনে থেকে রাজমিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার করে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

রাতেই তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে গোদাগাড়ী মডেল থানায় মামলা করেন ডিবির এসআই ইনামুল ইসলাম। পরের দিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর একমাস পর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইসমাইল হোসেন জামিনে মুক্তি পান।

স্থানীয়রা জানান, জামিনে মুক্তির পর ইসমাইল ভারতের চেন্নাই চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন। তার বাবা আব্দুল করিম ছয় বছর ধরে চেন্নাই রয়েছেন।

পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নম্বর সংগ্রহ করে ইমোতে যোগাযোগ করা হয় মাদক মামলার আসামি ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। মামলার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের মূল বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার চর আড়ানিয়াদহ ইউনিয়নের দিয়ার মানিক চক গ্রামে। দুই বছর আগে আমরা লালবাগ হেলিপ্যাড গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করেছি। এরপর থেকে আমরা সেখানে বসবাস করি।’

তিনি বলেন, ‘আমি গোদাগাড়ীতে থাকা অবস্থায় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতাম। সেখানে এক বন্ধুর সঙ্গে ঝামেলা হয়। ওই বন্ধুর মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ আমাকে উপজেলা পরিষদের সামনে ডেকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তারা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ৫০ গ্রাম হেরোইন দিয়ে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়।’

ইসমাইল হোসেন আরও বলেন, ‘আমার আগে থেকেই পাসপোর্ট করা ছিল। জামিনে মুক্তি পেয়ে ভারতের চেন্নাই চলে এসেছি।’

এদিকে, ভুল আসামি ধরে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় ভুক্তভোগী কলেজছাত্র ইসমাইলের জামিনের ব্যবস্থা করেছে জেলা পুলিশ। এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।

গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন বলেন, ‘ওয়ারেন্টে একই নাম থাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। মূল আসামি চর থেকে উঠে এসেছে। এ কারণে তাকে এলাকার লোকজন তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করতে পারেনি। পরে কলেজছাত্রের জামিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *