রাজশাহীতে বুকে-পিঠে ধানের শীষ ঝুলিয়ে বিএনপির মিছিলে আওয়ামী লীগ নেতা

রাজশাহীতে বুকে-পিঠে ধানের শীষ ঝুলিয়ে বিএনপির মিছিলে আওয়ামী লীগ নেতা

রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় আওয়ামী লীগের এক নেতা বুকে-পিঠে সেফটিপিন দিয়ে ধানের শীষ ঝুলিয়ে বিএনপির শোভাযাত্রায় যোগ দিয়ে আলোচনায় এসেছেন।

আওয়ামী লীগের এই নেতার নাম আবদুল মান্নান। তিনি উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের উদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও একই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।উভয় দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজশাহী জেলা বিএনপি শোভাযাত্রার আয়োজন করে। বিকেলে রাজশাহী নগরে এই শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

কর্মসূচিতে উপজেলাগুলো থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা শহরে যান। সেখানে অন্যান্যের সঙ্গে যান গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মান্নান। তিনি ব্যতিক্রমীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে নজরে আসেন। উদাম শরীরের বুক, পিঠ, হাতসহ বিভিন্ন স্থানে সেফটিপিন দিয়ে ফুটো করে সেখানে আস্ত ধানের শিষ ঝুলিয়ে রাখেন তিনি।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, নিজ গ্রাম থেকে এভাবেই শরীরে ধানের শিষ আটকিয়ে কর্মসূচিতে যান আবদুল মান্নান। বিএনপির শোভাযাত্রার সামনের দিকে থেকে স্লোগান দেন তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে অনেকে ছবি তোলেন। অনেকে তাঁকে ত্যাগী নেতা হিসেবে উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন।

পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতারাও তাঁর সমালোচনা করে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেন।আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবদুল মান্নান জামায়াত-বিএনপির ঘরানার হলেও তাঁকে দলীয় পদ দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে গঠিত গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কমিটিতে ৪ নম্বর সহসভাপতি হিসেবে আবদুল মান্নানের নাম আছে।

বর্তমানে ওই কমিটি দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। আবদুল মান্নান ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেননি।গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা আনোয়ার হোসেন ফেসবুকে পোস্টে লেখেন, আওয়ামী লীগ করেন না, এমন এক সুবিধাভোগী ব্যক্তিকে পদ দিয়ে আওয়ামী লীগকে হাস্যকর বানানো হয়েছে।

অথচ ত্যাগী কর্মীরা দলের কোনো পদই পাননি।ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা বিএনপির সমর্থক প্রবাসী আনোয়ার মণ্ডল ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, আবদুল মান্নান ‘ধানের শীষের কান্ডারি’। তাঁকে ‘জাতির বিবেক’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, আবদুল মান্নান বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী। দলকে খুবই ভালোবাসেন।

এককথায়, বিএনপি-পাগল। তবে আগে কিছুদিন আওয়ামী লীগ করেছেন বলে শুনেছেন।ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল ইসলাম বলেন, আবদুল মান্নান বিএনপি সাজার চেষ্টা করছেন। তিনি আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা করেন ও দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন।গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বকুল হোসেন বলেন, আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগ করেন না এবং কোনো পদেও নেই।

তিনি গত ইউপি নির্বাচনে জামায়াতের এক প্রার্থীর হয়ে প্রকাশ্যে কাজ করেছেন।তবে আবদুল মান্নানকে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে দেখা গেছে এবং কমিটিতে তাঁর নাম আছে, এমন প্রমাণ এই প্রতিবেদকের কাছে আছে জানালে তিনি বলেন, দুই-এক দিন কোনো কর্মসূচিতে যেতে পারেন, তবে কোনো পদে নেই।

আবদুল মান্নানের এমন কাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, এটি শুধু গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চিত্র নয়, গোটা বাগমারায় এমন অসংখ্য জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। এসবের জন্য প্রকৃত আওয়ামী লীগের লোকজনকে পদবঞ্চিত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *