সমিতির অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা দ্বন্দে সাবেক শিক্ষক নিহত পাঁচদিন পর দাফন

রাজশাহী

বাগমারা প্রতিনিধি:

রাজশাহীর বাগমারায় গ্রাম্য সমবায় সমিতির সদস্যদের অর্থ আত্মসাৎ করতে নানা টালবাহানার আশ্রয় নিয়েছেন ক্যাশিয়ার সহ ম্যানেজার। অর্থ পরিশোধ না করেই দীর্ঘদিন থেকে সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল তারা। গ্রাম্য সমিতির টাকা পরিশোধ না করে দীর্ঘদিন সদস্যদের ঘোরানোর অভিযোগে সমিতির দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার এবং দুই ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সদস্য মোস্তফা সরদার।

ওই মামলায় কারাভোগও করেন তারা। ওই ঘটনার জের ধরে গত ৫ আগস্ট উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় মোজাম্মেল হক নামের এক সাবেক শিক্ষক মারা যায়। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামে।

সংঘর্ষের ঘটনায় চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যাওয়ার ৫দিন পর ১০ আগস্ট দাফন সম্পন্ন হয়েছে মাস্টার মোজাম্মেল হকের। সংঘর্ষের সময় কার লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হয় সেটা সঠিক ভাবে জানা যায়নি।

তবে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সমিতির সদস্যদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবী করেন সদস্যরা। বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামজুড়ে। বিশেষ করে খেয়ে না খেয়ে গ্রাম্য ওই সমিতিতে কোটি কোটি টাকা জমায় সদস্যরা। সেই টাকা আত্মসাতের চেষ্টা নিয়ে ব্যস্ত দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

সমিতির সদস্যরা জানান, দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রাম্য সমবায় সমিতির ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে প্রভাষক আব্দুল হাকিম। ক্যাশিয়ার হিসেবে রয়েছিলেন প্রভাষক আব্দুর রাজ্জাক এবং শহিদুল ইসলাম।

তারা তিন জন মিলে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে। সমিতির অর্থ সদস্যদের মাঝে বণ্টন না করে টালবাহানা শুরু করলে এলাকায় শান্তি স্থাপন করতে সাবেক দুই সংসদ সদস্য, মেয়র সহ স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এলাকার সূধীজনের সাথে অনেকবার বসা হয়েছে।

সেখানে টাকা ফেরত দিতে সম্মত হলেও পরবর্তীতে আর দেয়া হয় না। ওই ঘটনায় গত ৫ আগস্ট পুরনায় দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামে আসে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। উভয় পক্ষের সাথে বসে দিন দুয়েক এর মধ্যে সদস্য প্রাপ্ত অর্থ পরিশোধের দিন ঠিক করা হয়।

বৈঠকের দিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট সমিতির সদস্য রকিবুলের বাড়ি থেকে সমিতির ক্যাশিয়ার আব্দুর রাজ্জাক সহ তার লোকজন জোরপূর্বক গরু নিয়ে জবাই করে খাবে বলে নিয়ে যেতে থাকে। এ সময় স্থাসীয় গ্রামবাসী বাধা দেয়। পরে গরু রেখে যেতে বাধ্য হয় তারা। এর কিছুক্ষণ পরে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী সহ লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র সহ রকিবুলের বাড়িতে হানা দেয়।

এরই একপর্যায়ে রাকিবুল সহ তার পরিবারের লোকজন চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় আব্দুর রাজ্জাকের হাতে থাকা লাঠির আঘাতে সমিতির সদস্য মোস্তফা সরদার, রকি সরদার, আশরাফুল ইসলাম সহ বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে মাথা থেতলে করে দেয়। এছাড়া হাত ভেঙ্গে ফেলে।

মারপিটের এক পর্যায়ে পূর্ব শত্রæতার জেরে সমিতির ক্যাশিয়ার আব্দুর রাজ্জাক তার বড় ভাই সাবেক শিক্ষক মোজাম্মেলের বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে। সদস্যদের টাকা ফেরত দিতে বললে মোজাম্মেল মাস্টারের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আব্দুর রাজ্জাক।

সেই সাথে হত্যার হুমকী দিয়ে তাড়া করে মোজাম্মেল মাস্টারকে। বাঁচার চেষ্টায় বাড়ির ছাদে উঠে পড়ে মোজাম্মেল মাস্টার। বাড়ির ছাদে উঠলেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। পরে উভয় পক্ষ দ্রæত সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা আহত মোজাম্মেল মাস্টারকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যায় মোজাম্মেল মাস্টার। সমিতির সদস্য মোস্তফা সরদার জানান, নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে গত ২০১৯ সালে দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামে গ্রাম্য সমবায় সমিতি গঠন করে বিভিন্ন এলাকার শতশত লোকজন।

সপ্তাহে রবিবার ও বৃহস্পতিবার মিঠু বাজার মোড়ে চলে সমিতির কার্যক্রম। প্রতি সদস্য ২০০ টাকা করে সঞ্চয় জমা রাখে। সেই সঞ্চয় দিয়ে সুদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। ৩বছর মেয়াদী হওয়ায় ২০২২ সালে শেষ হয় এর সকল কার্যক্রম।

প্রতি বৃহস্পতিবার গ্রাম্য সমিতির যে কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল সেটাতে সদস্য সংখ্যা ৪৪০ জন। যার প্রতিটি সদস্য সপ্তাহে ২০০ টাকা করে সঞ্চয় জমা রাখত। কোন সদস্য সময় মতো সঞ্চয় জমা দিতে না পারলে সমিতির নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা সহ জমা দিতে হবে।

বর্তমানে সমিতির প্রধান দায়িত্বে থাকা তিন কর্তা সদস্যদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে মরিয়ে হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রাম্য সমবায় সমিতির ক্যাশিয়ার আব্দুর রাজ্জাকের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনে সাড়া দেননি।

স্থানীয় চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান রঞ্জু বলেন, সংঘর্ষের পর খবর পেয়ে যেখানে যায়। তবে কি কারনে বা কে মেরেছে সেটা যানা যায়নি। এদিকে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *