স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে দূরে রাখতে স্বামীর করণীয়

স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে দূরে রাখতে স্বামীর করণীয়

জীবনযাপন

মামুন রাফী:

পরকীয়া যেন এ যুগের নতুন মহামারি। যা অবাধেই চলছে এবং সংসারে সৃষ্টি হচ্ছে ফাটল। অথচ ছোটখাটো কিছু বিষয়ে সচেতন হলেই সম্ভব এ মহামারিকে রোধ করা। আসুন দেখে নিই বিষয়গুলো-

আচরণ:
স্ত্রীর সঙ্গে ভালো আচরণ করুন। অনেকে স্ত্রীর সঙ্গে দাসির মতো আচরণ করতেই পছন্দ করেন, এটা অনুচিত। তিনি আপনার লাইফ পার্টনার। সুখ-দুঃখের সঙ্গী। তার সঙ্গে ভুল-ভ্রান্তি এড়িয়ে সুন্দর আচরণ করতে হবে। স্ত্রীদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য স্বামীর পরকীয়া থেকে বাঁচাতে। ছোটখাটো ভুল-ভ্রান্তির জন্য বকাঝকা থেকে বিরত থাকতে হবে। এক শ্রেণির স্বামী আছেন, যারা ছোটখাটো ভুলের জন্য স্ত্রীকে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ করেন। এতে স্ত্রীর মন থেকে আস্তে আস্তে স্বামীর প্রতি ভালোবাসা উঠে যায়।

মারধর:
আমাদের সমাজে একদল নির্লজ্জ পুরুষ আছেন, যারা কথায় কথায় স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন। স্ত্রীকে নির্মমভাবে প্রহার করেন। যা ধর্ম বা দেশের আইন কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এতে স্ত্রীর মন খারাপ হয় এবং তা শেয়ার করার জন্য ভিন্ন সঙ্গী খুঁজতে থাকেন। তাই স্ত্রী কোনো ভুল করলে মারধর না করে সংশোধন করুন। ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে দিন। কারণ দিন শেষে আপনাকে তার সাথেই রাত কাটাতে হবে। তার হাতের রান্নাই আপনাকে খেতে হবে।

যৌনশক্তি:
স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্কের জন্য যৌন আচরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে স্বামীকে স্ত্রীর যৌন চাহিদার প্রতি অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। তাকে যৌন চাহিদা ও পরিতৃপ্তির ওপর লক্ষ্য রাখতে হবে। এ সময়ে তরুণদের হাতে অশ্লীল বস্তু সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই বিয়ের আগে যৌনক্ষমতা হ্রাস করে ফেলেন, যা সংসারে মারাত্মক ক্ষত হয়ে দেখা দেয়। অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, পরকীয়া বা স্ত্রীর বিপথগামী হওয়ার সূচনা এখান থেকেই হয়। তাই সংসারে শান্তি চাইলে বিয়ের আগে নিজেকে অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরামর্শ অনুযায়ী চলা যেতে পারে।

ঘোরাফেরা:
সময়-সুযোগ পেলে স্ত্রীকে কোথাও ঘুরতে অথবা বেড়াতে নিয়ে যান। নারীরা এটি বেশ উপভোগ করেন। সারাদিন চার দেওয়ালের ভেতরে বসে থাকতে আপনারও নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না?

উপহার:
মাঝেমধ্যে স্ত্রীকে উপহারসামগ্রী দিন। হোক সেটা কম মূল্যের। কিনে দিতে পারেন একটি গোলাপ ফুলও। নারীরা এতে বেশ আনন্দিত হোন।

সাজ-সজ্জা:
নারীরা যেভাবে সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে থাকতে পছন্দ করে, সেই তুলনায় পুরুষেরা পিছিয়ে। সাজ-সজ্জা নারীদের কাজ না ভেবে স্ত্রীর জন্য আপনিও সাজ-সজ্জা করুন। স্ত্রী সেজে থাকলে আপনার যেমন ভালো লাগে, আপনি সেজে থাকলেও স্ত্রীর ভালো লাগবে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে চেষ্টা করুন। ঘামের দুর্গন্ধ, লজ্জাস্থানসহ শরীরের অন্য অংশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিন। আপনার অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতা তার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

মুখের দুর্গন্ধ:
মুখের দুর্গন্ধের দিকে নজর দিন। পুরুষদের মধ্যে অনেকে ধূমপানে আসক্ত। এ আসক্তি থাকলে স্ত্রীর কাছে যাওয়ার আগে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে নিন। নারীদের মধ্যে অনেকেই আছেন, কোনো কোনো পারফিউমের ঘ্রাণই সহ্য করতে পারেন না। তাহলে ভাবুন মুখের দুর্গন্ধ তাদের মনে কীরকম বিরূপ প্রভাব ফেলে।

যোগাযোগ:
কাজের তাগিদে বাইরে অবস্থান করলেও স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করুন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলুন। গল্প করুন। এতে স্ত্রীর একাকিত্ব দূর হবে। আপনি দূরে থাকলেও সে আপনার সংস্পর্শে থাকবে। আপনার ভালোবাসা ও তার প্রতি আপনার আগ্রহ প্রকাশ পাবে।

ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা:
স্ত্রীকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিন। দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে, স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে শিক্ষা দিন। স্ত্রী যাতে ধর্মীয় জ্ঞান লাভ করতে পারেন, সেরকম ভালো মানের বই কিনে দিন।

সুতরাং আপনার দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীর চাহিদাগুলো পূরণ করা। সংসারের সুখ-শান্তি, হাসি-আনন্দ বজায় রাখতে আপনার ভূমিকা অপরিসীম। টাকা সংসারে স্বচ্ছলতা এনে দিতে পারে কিন্তু শান্তি নয়।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *