অর্থনীতি ডেক্সঃ
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে বিভিন্ন দেশে ২৪ হাজার কোটি ডলার অর্থ পাচার করা হয়েছে। এসব অর্থ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ কেলেঙ্কারি এবং অনিয়মিত ঋণের মাধ্যমে পাচার হয়েছে। যা দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এছাড়া ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে যে ব্যয় হয়েছে তার ৪০ শতাংশ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। এছাড়া গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন, বিশেষ করে ব্যাংকিং, অবকাঠামো এবং সরকারি খাতের দুর্নীতির বিস্তর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। রোববার চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ছাড়াও অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উন্নয়নের আখ্যান ভঙ্গুর ভিত্তির ওপর গড়ে উঠেছে, যা পদ্ধতিগত দুর্নীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়মের দ্বারা জর্জরিত। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি জানিয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও ভয়ংকর রকমের আর্থিক কারচুপির যে চিত্র প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো।
প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই প্রতিবেদন আমাদের জন্য একটা ঐতিহাসিক দলিল। আর্থিক খাতে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে তা ছিল একটা আতঙ্কিত হওয়ার বিষয়। আমাদের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কথা বলিনি। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর অর্থনীতিকে যে ভঙ্গুর দশায় আমরা পেয়েছি তা এই রিপোর্টে উঠে এসেছে। জাতি এই নথি থেকে উপকৃত হবে।
কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যতটা ভেবেছিলাম সমস্যাটি তার চেয়ে গভীর। এই ৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে কীভাবে চামচা পুঁজিবাদ (ক্রনি ক্যাপিটালিজম) অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে, কীভাবে তারা নীতি প্রণয়ন নিয়ন্ত্রণ করেছে।’
দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি জানতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থপাচার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বড় সমস্যা। শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে-দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে গেছে, যা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত গড়ে প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে, যা বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপির ৩.৪ শতাংশ।
প্রতিবেদনে কীভাবে এবং কোথায় অর্থপাচার হয়েছে সেই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে-বাংলাদেশ থেকে প্রধানত সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাস, বাহামাস এবং অন্যান্য ট্যাক্স হ্যাভেন দেশগুলোতে অর্থ পাচার করা হয়েছে। অর্থপাচারের প্রক্রিয়া হিসেবে বলা হয়েছে, মূলত তিনভাবে বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার করা হয়েছে। প্রথম ধাপে প্লেসমেন্ট বা পাচারকৃত অর্থ স্থানান্তর করা হয়। তারপর অর্থকে বিভিন্ন চ্যানেলে সরানো হয়, যাতে এর উৎস গোপন করা যায়। তৃতীয় ধাপে অর্থকে বৈধভাবে পুনঃস্থাপন করা হয়, যাতে এটি বৈধ উপায়ে দেশে ফিরতে না পারে।
অর্থপাচারে শেল কোম্পানির ব্যবহার
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেল কোম্পানি বা অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তরের একটি সাধারণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেখানে আসল মালিকের পরিচয় গোপন রাখা হয় এবং লেনদেনকে বৈধ দেখানোর চেষ্টা করা হয়। এই ধরনের শেল কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়েছে। ফলে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরানো কঠিন হয়ে পড়ে এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক খাত দুর্বল হয়ে যায়।
মূলত ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি এবং অনিয়মিত ঋণের মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে ঋণ নিয়েছেন এবং সেগুলি পরবর্তীতে পরিশোধ করা হয়নি। অনেকে ব্যাংকের মালিকানা গ্রহণ করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এভাবে অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন করে বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে।
অর্থপাচারের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, পাচার হওয়া অর্থ যদি দেশে ফিরে আসতো, তবে তা দেশের সামাজিক খাতে বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিতে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করা যেত যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারতো। এটি বাংলাদেশের দুর্নীতি ও অর্থপাচারের গভীরতা এবং এর অর্থনৈতিক ক্ষতির একটি বিস্তারিত চিত্র।
সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং বাজেটের অপব্যবহার দেখা গেছে। এভাবে প্রকল্পের মূল্য বেড়ে যায় এবং প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। দুর্নীতির কারণে সঠিক প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রকল্পের গুণগত মানও কমে গেছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের বাস্তবায়ন: দীর্ঘ সময়কাল ধরে চলমান কিছু প্রকল্প এবং তাদের জন্য বাড়তি খরচ যা প্রকৃত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তারা ২৯টি প্রকল্প বাছাই করে তার মধ্যে ৭টি বড় প্রকল্প পরীক্ষা করে দেখেছেন প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। এই ২৯টি বড় প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ বিলিয়ন (৮ হাজার ৭০০ কোটি) ডলার বা ৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
তিনি বলেন, পরীক্ষা করা সাতটি প্রকল্পের আনুমানিক প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে জমির দাম বেশি দেখিয়ে এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রে হেরফের করে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধিত করে ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। ব্যয়ের সুবিধা বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
সিপিডির সাবেক এই নির্বাহী পরিচালক অর্থ পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে বিচারকাজ শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন। কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে, যার ৪০ শতাংশ অর্থ আমলারা লুটপাট করেছে।
অর্থপাচার রোধে শ্বেতপত্রে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি এবং অর্থপাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাধীন তদন্ত সংস্থা গঠন করা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাড়ানো প্রয়োজন, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নতুন আইন এবং নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানো যায়।
অবৈধ সম্পদ অর্জন
রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং প্রশাসনিক প্রভাবের মাধ্যমে অনেক সময় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে। রাজনৈতিক নেতারা এবং তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সরকারি সম্পদ নিয়ে অবৈধভাবে প্রচুর অর্থ সঞ্চয় করেছেন। রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভূমি এবং অন্যান্য সম্পদ অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং জনগণের ক্ষতি হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি
অর্থনীতির শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংকিং খাতে শত শত কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে। ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি এবং অনিয়মিত ঋণের মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে ঋণ নিয়েছেন এবং সেগুলি পরবর্তীতে পরিশোধ করা হয়নি। অনেকে ব্যাংকের মালিকানা গ্রহণ করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছে। অর্থ পাচারের কারণে ব্যাংকিং খাতে বিপুল পরিমাণ ঋণ কেলেঙ্কারি, নন-পারফর্মিং লোন বেড়ে গেছে এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে। ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত ঋণ ও আর্থিক খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশাল ঝুঁকি তৈরি করেছে।
সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলের অপব্যবহার
প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল থেকে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন এবং রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য খরচ করা হয়েছে, যা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এতে আরও বলা হয়েছে, দুর্নীতির কারণে সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের তহবিল সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়নি, যার ফলে অসহায় জনগণ উপকৃত হতে পারেনি। বাস্তবে দরিদ্র না হওয়া সত্ত্বেও ৭৩ শতাংশ সুবিধাভোগী ব্যক্তি এই সুবিধা পাচ্ছেন, যা প্রকৃত দরিদ্রদের থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আয় ও সম্পদের বৈষম্য
শ্বেতপত্রে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সম্পদের অসম বণ্টন নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশের মোট আয়ের বড় অংশ শীর্ষ ১০ শতাংশের কাছে কেন্দ্রীভূত। জাতীয় আয়ের ৫০ শতাংশের থেকেও কম আয়কারী জনগণের সংখ্যা বিপুল, যেখানে গ্রামীণ এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সুযোগ সীমিত। জমির মূল্য এবং তা থেকে অর্জিত আয় ধনী শ্রেণীর পক্ষে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু নিম্ন শ্রেণি বা গরীব জনগণের জন্য এর কার্যকর প্রভাব নেই।
কর ব্যবস্থা
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যার মধ্যে রয়েছে দুর্বল কর প্রশাসন, উচ্চ কর ফাঁকি, এবং কম কর জমা। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের কর-জিডিপি র্যাশিও ৭.৫%, যা এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। জাপান (৩৪.১%) এবং অন্যান্য উন্নত দেশগুলির কর-জিডিপি র্যাশিও অনেক বেশি। এই কম কর-জিডিপি র্যাশিও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।
কর ফাকির বিষয়ে বলা হয়েছে, কর ফাঁকি একটি সাধারণ প্রবণতা, বিশেষত উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের মধ্যে, যাদের রাজনৈতিক সংযোগ এবং দুর্নীতির কারণে কর পরিশোধে গাফিলতি ঘটে। কর ফাঁকি এবং অপ্রকাশিত আয়ের ফলে সরকারি রাজস্ব সংগ্রহ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এছাড়া দেশের কর ব্যবস্থা অধিকাংশই পরোক্ষ করের উপর নির্ভরশীল, যেমন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) , যা মোট কর রাজস্বের ৪০% করে। এর পাশাপাশি, ব্যক্তিগত আয়কর বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম, যা বৈষম্য সৃষ্টি করে।
কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আবু ইউসুফ জানান, বিগত শাসনামলে কর অব্যাহতির পরিমাণ ছিল দেশের মোট জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ৬ শতাংশ। কর অব্যাহতি অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেলে শিক্ষা বাজেট দ্বিগুণ এবং স্বাস্থ্য বাজেট তিন গুণ করা যেত বলে জানান তিনি।
বৈষম্য কমাতে বিত্তশালীদের জন্য উচ্চ করে সুপারিশ
সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে এবং দেশের ন্যায়সংগত উন্নয়ন চালিয়ে যেতে ‘ওয়েলথ ট্যাক্স’ প্রবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত আয়কর এবং কর ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনী জনগণের জন্য উচ্চ কর নির্ধারণ এবং কর ব্যবস্থার উন্নতি করা এবং ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে কর ব্যবস্থা সহজীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া কর রেট সহজ করতে হবে এবং ছোট ব্যবসাগুলোর জন্য কর ফাঁকি কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে উৎপাদন খাতের উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি পাবে। কর মাফ এবং ছাড় নীতি পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে যাতে অপ্রয়োজনীয় ছাড় বাতিল হয় এবং রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ে।
শ্বেতপত্রে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, দুর্নীতি এবং অর্থপাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে স্বাধীন তদন্ত সংস্থা গঠনের সুপারিশ, সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিতে ‘ওয়েলথ ট্যাক্স’ প্রবর্তনের প্রস্তাব, বিত্তশালীদের জন্য উচ্চ কর প্রবর্তনের সুপারিশ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বৈষম্য দূরীকরণে স্থায়ী নীতির উন্নয়ন, কর ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনের পরামর্শ, কর দাতার সংখ্যা বৃদ্ধি, কর অব্যাহতি ও ফাঁকি কমানোর জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, মূল্যস্ফীতি কমাতে বিনিময় হার ও মুদ্রানীতি এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনায়ন।