নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর পুঠিয়ায় আম বাগানের মধ্যে পতিত জমি ও গাছতলায় বস্তায় আদা চাষ করছেন কৃষক আশিকুজ্জামান ও মেসবাহউদ্দিন নামের দুই বন্ধু। প্রথমবার এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন তারা।
ইউটিউবে গাছ তলায় আদা চাষ করা দেখে রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় থেকে আদার বীজ সংগ্রহ করে আম বাগনের ভেতর বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিরালদহ এলাকার আশিকুজ্জামান ও মেসবাহউদ্দিন নামের দুই বন্ধু।
ফসলের নিবিরতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় আম বাগানের ভেতর ২০ শতাংশ জমিতে দেশী আদা চাষ করেছেন তারা। আম বাগানের ভেতর পতিত জমি ও গাছ তলায় আদা চাষে তারা ২ হাজার ৬শ টি বস্তা ব্যবহার করেছেন। নতুন এই প্রযুক্তিতে বস্তায় আদা চাষ করে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন দুই বন্ধু। বস্তায় আদা চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে, দেশে মসলা ফসলের উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবেন কৃষকরা।
আদা চাষী মোঃ আশিকুজ্জামান বলেন, ইউটিউবে দেখি যে আম বাগানের পতিত জমিতে আদা চাষ হচ্ছে। এই দেখে আমরা উদ্বুদ্ধ হয়ে পঞ্চগড় থেকে আদার বীজ আনায়। তারপর ২৬ শ বস্তায় রোপন করি। এবং এই বস্তা গুলোতে আমরা গোবর সার, সাধারণ মাটি, কিছু পাউস, কিছু ডুমার বালি এগুলো দিয়ে ও হালকা পরিমাণে কিছু রাসায়নিক সার ব্যবহার করি। আমাদের এখানে ২০শতাংশ জমির উপরে প্রায় ২৬ শ বস্তা আছে।
এবং এই ২৬ শ বস্তা থেকে আমরা আশা করছি ভবিষ্যৎ এ লাভবান হবো। আমাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করছে জেলা কৃষি অফিসার, উপজেলা কৃষি অফিসার এবং ব্লক সুপার ভাইজার। কী করা লাগবে? কী সার দেওয়া লাগবে এগুলো সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছে। আমরা বলবো যে কেউ যদি আদা চাষ করতে চাই পতিত জমিতে করতে পারেন।
উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় এক যুবক বলেন, আশিক ভাইদের আম বাগানের ভেতর এই আদা চাষ পদ্ধতি দেখে খুব ভালো লাগছে। আমার বাড়িতে একটা জাইগাতে আমি এই পদ্ধতিতে আদা চাষ শুরু করছি। যদি লাভবান হই ভালো ফলন হয় পরবর্তীতে আমি এমন আম বাগানে আদা চাষ শুরু করবো।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, আম বাগানে আদা চাষ এভাবে আমরা কখনো দেখিনি। তবে এভাবে আদা চাষ হচ্ছে এটা আমরাও করার চেষ্টা করবো।
বস্তায় আদা কী ভাবে চাষ হচ্ছে দেখতে আসা মোহাম্মদ আলী জানান, আমাদের এলাকায় আম বাগানে যে আদা চাষ শুরু হয়েছে এটা জানতে পেরে আজকে এই বাগানে এসেছি আদা চাষ দেখতে। এবং আমি মনে করছি যে তাদের যে ফলন গাছের যে চেহারা এতে মনে হচ্ছে ফলন ভালো হবে। সেই হিসেবে আমিও আমার আম বাগানে এই আদা চাষ করবো বলে মনে করছি। আমের পাশাপাশি যদি আদা চাষ হয় তাহলে এখান থেকে আমরা ভালো লাভবান হবো বলে মনে করছি।
প্রায় ১ লাখ খরচ করে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন কৃষক আশিকুজ্জামান ও মেসবাহউদ্দিন । আর আমের বাগানের ভিতরে আদা চাষ করা দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হবেন বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।
পুঠিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার স্মৃতি রানী সরকার বলেন, আমাদের উপজেলায় এই প্রথম আম বাগানে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছে দুই যুবক। আদার গাছও খুব সুন্দর হয়েছে। আমরা সবসময় পর্যবেক্ষন করছি আশা করি ভালো ফলন হবে। এই আদা এপ্রিল-মে মাসে চাষ করতে হয়। তাই আমরা এখন থেকে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সামনে যাতে প্রায় ৩০ হেক্টর আম বাগানে আদা চাষ করতে পারি যে জন্য কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করছি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, মোঃ মোজদার হোসেন জানান, রাজশাহী জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। এই ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আম গাছের মাঝে আদা চাষ করা সম্ভব। আমাদের নয়টি উপজেলায় আমরা উদ্দ্যেগ গ্রহন করেছি। চাষী ভাইদের উদ্বুদ্ধ করে আদা চাষ শুরু করতে। চাষী ভাই এখন প্রযুক্তিগত সহায়তা আমাদের কাছ থেকে পাচ্ছে। আদা যে সহজেই রাজশাহীতে চাষ করা সম্ভব এটা কিন্তু মানুষ বিশ্বাস করতে চাইনি।
আমরা বস্তা পদ্ধতিতে তাদেরকে বিশ্বাস করতে অনেকটা উৎসাহিত করেছি। এবং চাষী ভাই আদা লাগানোর ১ থেকে দেড় মাসের মধ্যে তার লাগানো আদাটা যখন ফেরৎ পাচ্ছে তখন তার আস্থাটা পরিপক্ক হচ্ছে। এবং বাকি আদাটা সে ৩ মাসের মধ্যে পাবে। আদার বর্তমান বাজার খুবই ভালো। চাষী ভাইরা অত্যন্ত আগ্রহী।