রাজশাহী টাইমস ডেক্সঃ
সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি করছেন না জয়পুরহাটের পাইকাররা। সরকার ২৭ টাকা দাম নির্ধারণ করলেও হিমাগারে ৩৫ টাকা কেজি দরেই আলু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। সাধারণ মানুষ বলছে, অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে দাম বেড়েছে আলুর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরের সীমান্তবর্তী জয়পুরহাট জেলায় গত মৌসুমে প্রায় ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছিল, যা থেকে উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৯ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন আলু। আলু দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। জয়পুরহাটে আলুর চাহিদা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে এবার জেলার ১৯ হিমাগারে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু মজুত করেছেন এক লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে জেলার হিমাগারগুলোতে আলুর মজুত রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন।
কয়েকদিন আগে সরকার ২৭ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির ঘোষণার পর হিমাগারে আলু বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরকার খুচরা আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা বেঁধে দিলেও বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে। জেলার বাজারগুলোতে বর্তমানে প্রকারভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫৫ টাকায়।
অথচ কয়েকদিন আগেও জেলার প্রতিটি হিমাগার থেকে প্রতিদিন আলু বিক্রি হয়েছে কমপক্ষে ৬০-৭০ হাজার কেজি। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০ হাজার কেজিরও কম। সরকার দাম কমিয়ে দেওয়ায় জেলার আলুর বাজারে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তবে হিমাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, হিমাগারে আলু রাখার জন্য আমরা শুধু ভাড়া পাই। ব্যবসায়ীরা তাদের আলু বিক্রি করবেন কি না সেটা তাদের বিষয়। আমরা সর্বোচ্চ ব্যবসায়ীদের তালিকা দিতে পারি।
আলু ব্যবসায়ী মাসুদ আলী বলেন, সরকার ২৭ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির ঘোষণার পর থেকে বেশির ভাগ হিমাগারেই বিগত দিনের মতো আলু বিক্রি হচ্ছে না। যারা আলু মজুত করে রেখেছেন তারা বিক্রি না করার কারণে আজ এ অবস্থা।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বিগত বছরের লোকসানের ভার থেকে আজও মুক্ত হতে পারিনি। ব্যাংকের ঋণ আজও জট বেঁধে আছে। তখন আমাদের দুঃখ কেউ দেখেনি। ব্যবসায়ীরা একটু লাভ করছে দেখে সবাই উঠেপড়ে লেগেছে।
নর্থপোল কোল্ড স্টোরেজ ব্যবস্থাপক মনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আলু সংরক্ষণের মেয়াদ আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি না করলে আমাদের করার কী আছে। কয়েকদিন আগেই প্রতিদিন ৭-৮টি করে আলুর ট্রাক লোড হতো। এখন তা অনেক কমে গেছে।
বগুড়া আঞ্চলিক ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক ইফতে খায়রুল আলম জাগো নিউজকে জানান, ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই আলুর দাম বেশি হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা কেজির বিপরীতে বেশি দরে আলু বিক্রি কয়েকজনকে জরিমানাসহ সতর্ক করা হচ্ছে। বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী জাগো নিউজকে জানান, জেলার হিমাগারগুলোতে আমরা কঠোর নজরদারি করছি। সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।