“এবিএম সালেহ উদ্দীনেরনতুন বই’প্রবন্ধ বিচিত্রা’ যার আবেদন কখনও ফুরাবে না”

আন্তর্জাতিক

আলোচনাঃ হাকিকুল ইসলাম খোকন

প্রবন্ধ লেখার প্রকৃত কৌশল রক্ষা করে যিনি সাহিত্যকর্মে সচল ।আমাদের বাহিতজীবনের নানাবিধ সংকট এবং গতিমন্থরতার মধ্যেও যিনি সর্বদা শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্য কর্মে নিস্ত রয়েছেন ,তিনি হলেন কবি ও লেখক এবিএম সালেহ উদ্দীন ।

তাঁর রচিত অসংখ্য লেখার ভেতর থেকে বাছাইকৃত জীবনভিক্তিক প্রবন্ধসমূহ নিয়ে প্রকাশিত হলো ‘প্রবন্ধ বিচিত্রা’ । সদ্য প্রকাশিত নতুন ধারার প্রবন্ধমালায় লেখকের নিজের জীবনের স্মরণীয় মনীষীদের জীবনালেখ্য,স্মৃতিকথা, শ্রদ্ধান্জলিসহ তাঁদের বৈচিত্রময় জীবনের কথা বর্ণনা করা হয়েছে । লেখকের শব্দবুননের অখন্ড নিজস্বতায় সাজানো সমুজ্জ্বল গ্রন্থটিতে পাঠকের মনের খোরাক পাওয়া যাবে ।

উল্লেখিত বইয়ের প্রতিটি প্রবন্ধের চরিত্র অনুসন্ধানীমূলক ও গবেষণাধর্মী । একথা নির্দ্ধিধায় বলা যায় যে, উক্ত ‘প্রবন্ধ বিচিত্রা’ বইটির যথার্থতা ও প্রাসঙ্গিকতা পাঠকের জন্য সবসময় উপজীব্য এবং তাঁদেরকে উপকৃত করবে ।

বাংলার মহামনীষীদের বৈচিত্রময় জীবনের কত বর্ণবৈভব ও বহুমাত্রিক উপাখ্যান আছে । ঐতিহ্যের নিরিখে তাঁদের জীবনবোধ,সৃজনশৈলী, মননশীলতা,শিল্পবোধ ,সাহিত্যাদর্শ ,নিজস্ব দর্শন,সমাজচিন্তা,রাজনীতি,রাষ্ট্রচিন্তা ও কর্মজীবনে বহুমুখি প্রতিভা এবং অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে তাঁরা সমুজ্জ্বল ও চিরস্মরণীয় । কিন্তু,তাঁদের সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি ।

অনেকেই জ্ঞাতে কিংবা অজ্ঞাতসারে আমাদের চিরন্জীব মনীষীদের মূল্যায়নে সময় দিতে পারেন না । সময়ের নানারকম ঘূর্নায়নে কোন কোন মনীষীদের অবদান সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সত্বেও অনেকেই তাঁদের সঠিক মূল্যায়নে ইচ্ছুক নন ।

এবিএম সালেহ উদ্দীন রচিত এগ্রন্থে যাঁদের নিয়ে লেখা হয়েছে,তাঁরা প্রত্যেকেই বহুগুণে গুণান্বিত,স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত ও খ্যাতিমান । জীবদ্দশায় তাঁদের অনেকেই অকুন্ঠ সন্মানবোধ ও মর্যাদাবোধের স্বীকৃতি পেয়েছেন । আবার কেউ সময়ের দৈব-দুর্বিপাকে অবহেলিতও হয়েছেন ! বইটিতে তাঁদের বর্ণাঢ্য জীবনের বহুমাত্রিক বর্ণবিভা,বৈচিত্রময় জীবনাচারের সৌকর্যময় দিকসমূহের নিঃসংকোচ আলোকপাত করা হয়েছে ।

বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যের হাজার বছরের ঐতিহ্য এবং ব্যক্তিত্বশীল মানুষের জীবনাচার ও বর্ণাঢ্য জীবনবোধ নিয়ে সালেহ উদ্দীনের ‘প্রবন্ধ বিচিত্রা’ নামক গ্রন্থের যাত্রা শুরু । যাঁদের নিয়ে লেখা হয়েছে; তাঁরা হলেন-সাংবাদিকতার জনক মওলানা আকরম খাঁ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ,ড.মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ,কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লীকবি জসীম উদ্দীন,কথা সাহিত্যিক আবু রুশদ,বঙ্গবন্ধুর জেল জীবন ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবোধ, সৈয়দ আলী আহসান,আহমদ ছফা, চিত্তরন্জন সাহা,স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমান, কবি আল মাহমুদ, কবি শহীদ কাদরী,আতাউস সামাদ,সাংবাদিক ফাজলে রশীদ,অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমদ,কবি ফজল শাহাবুদ্দীন,আবদুল মান্নান সৈয়দ, কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ,খসরুজ্জামান চৌধুরী, মোশারেফ হোসেন শাজাহান ও মিনার মাহমুদ ।

জীবনের অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে বসবাস করেও বহুনন্দিত আলোকিত মানুষের জীবনালেখ্য এবং তাঁদের জীবনের কথা নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থটির দীপ্তি নি:সন্দেহে আমাদের পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীকে আলোর পথ দেখাতে সহায়ক হবে ।

সমাজের নানারকম বৈপরীত্য নিয়ে বড় মানুষের জীবনবৃত্তান্ত ব্যক্ত করা কঠিণ এবং বিপত্তিও অনেক । বর্তমান সমাজে ইতিহাসের সেরা মানুষের জীবনকাহিনী নিয়ে বিশ্লেষণের দিকে খুব একটা এগুতে দেখা যায় না । অনেকে জনজীবনের প্রাণশক্তির উন্মেষ ও বুদ্ধিবৃত্তির বিষয় সম্পর্কে ঔদাসিন্য প্রকাশ করেন । আস্তে আস্তে কেন যেন আমরা বড় মানুষদের অবদানের কথা ভুলে যেতে বসেছি ।

বুদ্ধিবৃত্তির সবচেয়ে বড় ঘাটতি হচ্ছে , জাগ্রতচিত্তের মানুষের ভেতরকার অনৈক্য এবং দৃষ্টিভঙ্গির অসামনন্জস্যতার বহিঃপ্রকাশ । আবার অনেকে সমাজ ও রাষ্ট্রগত সুবিধার দিকে ঝুঁকে গিয়ে বুদ্ধিবৃত্তির আসল সত্তাকে আড়াল করে ফেলেন এবং অতীতের ঐতিহ্যগাঁথা ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাতে চান না !

এধরণের অমনোযোগিতা কারো কাম্য নয় । এমতাবস্থায় উল্লিখিত গ্রন্থের বিশিষ্ট মহামনীষীদের অবিস্মরণীয় অবদানের প্রতি আমাদের সন্মানবোধ প্রদর্শনের ক্ষেত্র তৈরি এবং তাঁদের প্রকৃত গুণাবলীর একটা সমন্বিত স্তম্ভ দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে । যাঁদের প্রদ্যোত ঔজ্জ্বল্যতা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে আরও বেশি আলোকিত করে রেখেছে । আমরা তাঁদের সম্পর্কে বিস্মৃত থাকতে পারি না ।

কবি এবিএম সালেহ উদ্দীনের সদ্য প্রকাশিত’প্রবন্ধ বিচিত্রা’ বইটি যে ,পাঠকের আশাবোধ শতভাগ আশা পূরণ করতে পারবে; তা নয় । তবে,এই বইটি প্রকাশের মধ্যদিয়ে আমাদের কৃতিমান মানুষদের জীবনের আদর্শ থেকে অনাগত প্রজন্ম এবং আমরা উপকৃত হতে পারব । বইটি পড়ার মাধ্যমে আমাদের মনোজগতের রুদ্ধদ্বার উন্মোচনের পথ কিছুটা হলেও খুলে যেতে পারে ।

আমাদের দায় কিছুটা হলেও পরিশোধিত হবে । সবদিক বিচার করলে নি:সন্দেহে বলা যায় যে, বইটির আবেদন কখনই ফুরাবে না এবং পাঠক উপকৃত হবেন । বইটি প্রকাশ করেছে ঢাকার অভিজাত প্রকাশনা সংস্থা ‘বাড পাবলিকেশন্স’ । ঢাকার জেনারেশন প্রিন্টিং প্রেস থেকে উন্নতমানের কাগজে ঝকঝকে ছাপাকৃত গ্রন্থটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন ,মারজিয়া মাসনুভা । দামি কাগজের পুস্তানি ও টেকসই বাধাইকৃত বইটির মূল্যঃ ৪০০টা $২০ ডলার ।বইটি নিউইয়র্ক বইমেলায় পাওয়া যাবে । এছাড়া রকমারি ডট কম থেকে সংগ্রহ করা যাবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *