মোঃ ইসরাফিল হোসেনঃ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধ প্রায় চার মাসে গড়িয়েছে। কিন্তু এতদিন ধরে হামলা চালানোর পরও গাজা উপত্যকায় জটিল জালের মতো বিস্তৃত হামাসের টানেলের মাত্র ২০ শতাংশ ধ্বংস করতে পেরেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অর্থাৎ এখনো হামাসের ৮০ শতাংশ টানেল অক্ষত রয়েছে।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাতে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত হামাসের কত শতাংশ সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা হয়েছে, তা বোঝা মুশকিল। তবে তাদের ধারণা, হয়ত ২০ থেকে ৪০ শতাংশ সুড়ঙ্গ ধ্বংস অথবা ব্যবহারের অনুপযোগী করে দেওয়া হয়েছে। কিছু সুড়ঙ্গ বোমা মেরে ধ্বংস করা হয়েছে। কিছু সুড়ঙ্গ সমুদ্রের পানি দিয়ে প্লাবিত করা হয়েছে।
তবে টানেল ধ্বংসের এসব প্রক্রিয়া খুব ধীরগতিতে সফল হচ্ছে। কারণ, অভিযান চালানোর আগে টানেলগুলোর ম্যাপ তৈরি করতে হচ্ছে ও দেখতে হচ্ছে যে কোনো ফাঁদ পাতা আছে কি না। এছাড়া সুড়ঙ্গ ধ্বংসের আগে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে, যাতে এগুলোর ভেতরে থাকা কোনো জিম্মি ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
এদিকে, ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছেন, তাদের সেনারা পুরো সুড়ঙ্গ ব্যবস্থা ধ্বংস করার বদলে মূলকেন্দ্রগুলো নিয়ে কাজ করছেন। এসব কেন্দ্র থেকেই হামাস যোদ্ধারা অভিযান পরিচালনা করে থাকেন। তবে বিষয়টি খুবই ধীরগতিতে করা হচ্ছে, কারণ টানেলগুলো অবস্থান খুবই জটিল।
দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর ধারণা, হামাসের গাজা প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও অন্য জ্যেষ্ঠ কমান্ডাররা খান ইউনিসের সুড়ঙ্গে অবস্থান করছেন এবং তাদের সঙ্গেই ইসরায়েলি জিম্মিরা রয়েছেন। আর এ কারণেই ইসরায়েল এখন খান ইউনিসে সামরিক অভিযানের নামের ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।
গত বছরের অক্টোবর মাসের ৭ তারিখ থেকে গাজায় ব্যাপক হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। যুদ্ধের প্রথম দিকে গাজায় শুধু বিমান হামলা চালালেও কয়েক দিন পরই স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। স্থল অভিযান চালাতে গিয়ে হামাসের টানেল নিয়েই সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে দেশটি।
গাজায় হামাসের কী পরিমাণ টানেল আছে, তা নিয়ে কারও কাছে কোনো স্পষ্ট তথ্য নেই। চলতি মাসের শুরুতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, গাজায় ৩৫০ থেকে ৪৫০ মাইল দীর্ঘ টানেল রয়েছে। যদিও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, এর পরিমাণ ২৫০ মাইল। অন্যদিকে, হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মতে, গাজার টানেল নেটওয়ার্ক ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গাজায় বিভিন্ন ধরণের সুড়ঙ্গ রয়েছে। এগুলো হামলা, অস্ত্র মজুত ও চোরাচালানের জন্য ব্যবহার করা হয়। ধারণা করা হয়, গাজায় যেসব টানেল নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে অন্তত একশ ফুট গভীরে।
টানেলগুলোর প্রবেশপথগুলো সাধারণ ঘরবাড়ি, মসজিদ, স্কুল কিংবা এমন ভবনে, যেখানে সাধারণ মানুষের সমাগম হয়। মূলত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সদস্যদের যাতে চিহ্নিত করা না যায়, সেজন্য এ ধরনের ভবনে টানেলগুলোর প্রবেশপথ রাখা হয়।
সূত্র: ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, রয়টার্স, টাইমস অব ইসরায়েল