আন্তর্জাতিক ডেক্সঃ
ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। একদিকে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। অপরদিকে পাল্টা জবাব হিসেবে হিজবুল্লাহও দফায় দফায় রকেট ছুড়ছে। ফলে দু’পক্ষের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যকার সংঘাত যদি শেষ পর্যন্ত পুরোদস্তুর যুদ্ধের দিকে গড়ায় তবে কী ঘটবে? সেই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে দেখে নেওয়া যেতে পারে তাদের সামরিক শক্তি আসলে ঠিক কতটা।
কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনী না হয়েও বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক অস্ত্রসম্ভারে সজ্জিত সামরিক শক্তিগুলোর অন্যতম হলো লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ সংগঠন। মূলত এ ধরনের বাহিনীগুলোর মধ্যে তারাই সবচেয়ে শক্তিশালী এবং তাদের অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে ইরান।
হিজবুল্লাহর প্রধান শেখ হাসান নাসরুল্লাহর দাবি অনুযায়ী, তাদের প্রায় এক লাখ যোদ্ধা আছেন। যদিও বিভিন্ন নিরপেক্ষ সূত্রে এই সংখ্যাটা ২০ থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে বলে মনে করা হয়।
হিজবুল্লাহর এই সদস্যরা সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং তাদের যুদ্ধের অভিজ্ঞতাও আছে। এদের অনেকেই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধেও লড়াই করেছেন।
স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের হিসেব অনুযায়ী, হিজবুল্লাহর কাছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র আছে। তাদের এই অস্ত্রভাণ্ডারের বেশির ভাগই ছোট আকারের আনগাইডেড ভূমি-থেকে-ভূমি আর্টিলারি রকেট।
তবে হিজবুল্লাহর বিমান ও রণতরী-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র আছে বলেও ধারণা করা হয়। তাছাড়া তাদের বেশ কিছু ‘গাইডেড’ ক্ষেপণাস্ত্রও আছে যেগুলো ইসরায়েলের অনেক ভেতরে গিয়েও আঘাত হানতে সক্ষম।
গাজা ভূখণ্ডে হামাসের হাতে যে ধরনের অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে তার তুলনায় হিজবুল্লাহর এই অস্ত্রভাণ্ডার অনেক বেশি আধুনিক ও বিধ্বংসী।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। সে সময় থেকেই হামাসের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেখিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালানো শুরু করে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ফলে সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তেও।
হিজবুল্লাহ অর্থ সৃষ্টিকর্তার দল। আশির দশকের শুরুর দিকে হিজবুল্লাহ গঠন করেছিল ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ডস। উদ্দেশ্য ছিল লেবাননে ইসলামিক আন্দোলনের প্রসার ও সেখানে হামলা করা ইসরায়েলিদের সঙ্গে লড়াই করা। মূলত শিয়া মুসলিমদের নিয়ে গঠিত হয় হিজবুল্লাহ।
হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে সবচেয়ে বড় আকারের যুদ্ধ করেছে ২০০৬ সালে। ইসরায়েলের সাথে ৩৪ দিনের ওই যুদ্ধে লেবাননের এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় যাদের বেশির ভাগই ছিল সাধারণ নাগরিক। বিপরীতে ইসরায়েলে মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের যাদের বেশির ভাগই ছিল সেনা। এরপর থেকে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করে গেছে গোষ্ঠীটি।
২০১২ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সুন্নি বিদ্রোহীদের মোকাবিলায় হিজবুল্লাহকে নিয়োগের পর থেকে তাদের সামরিক সক্ষমতা বেড়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইসরায়েলসহ বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশে হিজবুল্লাহকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।