ইসলামীক ডেক্সঃ
আজ পবিত্র জুমআতুল বিদা। এ জুমআ দ্বারা রমজানের শেষ জুমআকে বোঝানো হয়ে থাকে। জুমআতুল বিদাকে ইবাদতের বিশেষ দিন মনে করে গুরুত্ব দেয়া হয়। কোনো কোনো মানুষের ধারণা, এর বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা রয়েছে। ফলে তারা এ জুমআ আদায়ের জন্য এলাকার সবচেয়ে বড় মসজিদে গমন করে। ইসলামি শরিয়তে জুমআতুল বিদা বলে আলাদা কোনো ফজিলত নেই।
তবে একথা ঠিক যে, জুমআর দিন অনেক ফজিলত ও মর্যাদার দিন। আর রমজানের কারণে জুমআর দিনের মর্যাদাও বেড়ে যায়। জুমআতুল বিদার বিশেষ ফজিলতের কথা না ভেবে যেহেতু আজই রমজানের শেষ জুমআ তাই জুমআ আদায়ে কুরআন-সুন্নাহ ঘোষিত ফজিলত লাভে সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমানের জন্য জরুরি।
ইতিমধ্যে রমজানে মুমিন মুসলমান তিনটি জুমআ অতিবাহিত করেছেন। আজ রমজানের বিদায়ী জুমআর দ্বার প্রান্তে। তাই কুরআন নাজিলের মাসের মর্যাদা ও বরকতের সঙ্গে জুমআর মর্যাদা ও ফজিলতে মুমিন রোজাদারের আমল ও হৃদয় হোক আলোকিত।
জুমআর নামাজের মর্যাদা সম্পর্কে হজরত সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `তোমরা জুমআর নামাজে উপস্থিত হও এবং ইমামের কাছাকাছি হয়ে দাঁড়াও। কেননা যে ব্যক্তি জুমআর নামাজে সবার পেছনে উপস্থিত হবে, জান্নাতে প্রবেশ ক্ষেত্রেও সে সবার পিছনেই পড়ে থাকবে।’ (মুসনাদে আহমদ)
মুসলিম উম্মাহর কাছে জুমআর দিনটি সপ্তাহিক ইবাদতের দিন এবং ঈদ হিসেবে গণ্য। এ দিনের ফজিলত এমনিতেই বেশি। তবে রমজানের শেষ দশকে হওয়ার কারণে এ জুমআর সঙ্গে শেষ দশকের ফজিলতও যোগ হয়েছে। জুমআর ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সূর্যোদয় হওয়ার সবগুলো দিনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হলো জুমআর দিন। এই জুমআর দিনেই হজরত আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন এবং জুমআর দিনই তাকে জান্নাত দান করেন এবং জুমআর দিনেই তাকে জান্নাত থেকে এই দুনিয়ায় প্রেরণ করেন এবং কেয়ামতও এই জুমআর দিনেই অনুষ্ঠিত হবে। (মুসলিম)।
পাঁচ শ্রেণির লোক ব্যতিত জুমআর নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গোনাহ। তারা হলো-
> ক্রীতদাস;
> স্ত্রীলোক;
> অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক;
> মুসাফির এবং
> রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। (আবু দাউদ)
জুমআ নামাজ না পড়ার পরিণাম
> রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমআ বিনা ওজরে ও ইচ্ছা করে ছেড়ে দেবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার অন্তরে মোহর মেরে দেবেন। (তিরমিযী,আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমআ ত্যাগকারী লোকেরা হয় নিজেদের এই খারাপ কাজ হতে বিরত থাকুক, নতুবা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাদের এই গোনাহের শাস্তিতে তাদের অন্তরের ওপর মোহর করে দেবেন। পরে তারা আত্মভোলা হয়ে যাবে। অতপর সংশোধন লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে। (মুসলিম)
> হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা এই রকম- যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমআ পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পিছনের দিকে নিক্ষেপ করল। (মুসলিম)।
সুতরাং আমরা জামআ`র নামাজ পরিত্যাগ না করে সবার আগে আগে রমজানের শেষ জুমআর নামাজ তথা জুমাআতুল বিদা আদায় করতে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। বিগত জীবনের ভুল-ভ্রান্তি ও গোনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরি।
সতর্কতা
ইসলামের প্রাথমিক যুগেও জুমাআর প্রচলন ছিল। সে সময় জুমআর দিনকে ইয়াওমে আরুবা বলা হতো। যা ইয়াহুদি, খ্রিস্টান তথা জাহেলি সম্প্রদায়ের লোকেরা পালন করতো। তারা জুমআর দিনে গল্প-গুজব, হাসি-ঠাট্টা, আমোদ-ফুর্তির আসর বসাত। এই ছিল তাদের জুমআর সংস্কৃতি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুমিন মুসলমানকে এ ধরনের উৎসব থেকে হেফাজত করুন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের শেষ জুমআ আদায়ের মাধ্যমে নিজেদের বিগত জীবনের সব গোনাহ থেকে মুক্তি লাভের তাওফিক দান করুন। জুমআর ফজিলত ও মর্যাদাকে রমজনের ফজিলতের সঙ্গে বাড়িয়ে মুমিনের সব আমলকে কবুল করার মাধ্যমে তাদের হৃদয়ে হেদায়েতের আলোতে ভরপুর করে দিন। আমিন।