ইসলামীক ডেক্সঃ
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের একটি সুরার নামকরণ করেছে ‘সুরা আল-লোকমান’। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা লোকমান হাকিমকে হেকমত দান করার বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন। তিনি ছিলেন জ্ঞানী। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا لُقۡمٰنَ الۡحِکۡمَۃَ اَنِ اشۡکُرۡ لِلّٰهِ ؕ وَ مَنۡ یَّشۡکُرۡ فَاِنَّمَا یَشۡکُرُ لِنَفۡسِهٖ ۚ وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ حَمِیۡدٌ
‘আর অবশ্যই আমরা লোকমান কে হেকমত দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তা করে নিজেরই জন্য এবং কেউ অকৃতজ্ঞ হলে আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, চির প্রশংসিত।’ (সুরা লোকমান: আয়াত ১২)
হজরত লোকমান তাঁর সন্তানকে অনেক নসিহত করেন। তাঁর নসিহত আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-
وَ اِذۡ قَالَ لُقۡمٰنُ لِابۡنِهٖ وَ هُوَ یَعِظُهٗ یٰبُنَیَّ لَا تُشۡرِکۡ بِاللّٰهِ اِنَّ الشِّرۡکَ لَظُلۡمٌ عَظِیۡمٌ
‘স্মরণ কর, যখন লোকমান তার ছেলেকে নসিহত করে বলেছিল- হে আমার ছেলে! কখনো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করিও না। কেননা এটা বড় জুলুম!’ (সুরা লোকমান: আয়াত ১৩)
তিনি হলেন লোকমান হাকিম। ইসলাম ও মুসলমানদের কাছে তিনি পরিচিত একটি নাম। বিভিন্নভাবে মানুষ এ নামটির সঙ্গে পরিচিত। লোকমান হাকিমের অনেক উপদেশ কোরআনুল কারিমে ওঠে এসেছে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে অনেক কিছু দিয়েছেন। লোকমান হাকিমও তাদের একজন। তাঁকে দিয়েছেন কাউকে দিয়েছেন তীক্ষ্ণ মেধা ও হেকমত। লোকমান হাকিমের উপদেশগুলো বিভিন্ন কিতাবের পরতে পরতে পাওয়া যায়। তার কিছু উপদেশ তুলে ধরা হলো-
১. নামাজে মনকে স্থির রাখা
নামাজে নিজের অন্তরের হেফাজত করা। নামাজে দাঁড়ালে মনকে স্থির রাখা কষ্ট হয়ে পড়ে। হজরত লোকমান তাঁর ছেলেকে এভাবে নামাজের নির্দেশ দিয়েছিলেন-
یٰبُنَیَّ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ وَ اۡمُرۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ انۡهَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ اصۡبِرۡ عَلٰی مَاۤ اَصَابَکَ ؕ اِنَّ ذٰلِکَ مِنۡ عَزۡمِ الۡاُمُوۡرِ
‘হে আমার প্রিয় ছেলে! নামাজ কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজে নিষেধ কর এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধর। নিশ্চয় এগুলো অন্যতম দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’ (সুরা লোকমান: আয়াত ১৭)
কোনো জিনিস হারিয়ে গেছে, অনেক খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। কিংবা কোথায় রাখা হয়েছে তা স্মরণে আসছে না। যেই নামাজে দাঁড়ানো হয় অমনি মনে পড়ে যায়- ও, হ্যাঁ, জিনিসটি অমুক স্থানে রাখা হয়েছিল। নানান কথা। এসবই শয়তানের কাজ। কারণ শয়তান মানুষের মনকে স্থির থাকতে দেয় না। এজন্য লোকমান হাকিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নামাজের সময় অন্তরের হেফাজত কর।
২. ধীরস্থিরভাবে খাবার খাওয়া
খাবার খাওয়ার সময় হলকের হেফাজত করা। হলক বলা হয় খাদ্যনালিকে। অনেক সময় এমন হয় যে, তাড়াহুড়ো করে খেতে গিয়ে গলায় খাবার আটকে যায়। অনেকের খাবার ওপরে উঠে যায়। নাক ও খাদ্যনালি জ্বালাপোড়া করে। অনেক সময় তা মাথায় উঠে যায়। তাই খাবার সময় হলকের হেফাজত করার মানেই হলো ধীরে সুস্থে খাবার খাওয়া। খাবার খাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো না করা।
৩. চোখের হেফাজত করা
নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে চোখ বেশি যায়। তাই সব সময় চোখের হেফাজত করা জরুরি। অনেক সময় কেউ অন্যের ঘরে গেলে এদিক-সেদিক ওকি-ঝুঁকি দেয়। এটা একটা বদ অভ্যাস। অন্যের ঘরে চোরের মতো এদিক-ওদিক তাকানো কিংবা কারোর বেডরুমে চলে যাওয়া ও দেখা একেবারেই অনুচিত। আবার অনেকে অন্দরমহল দেখার জন্য আঁড় চোখে চেষ্টা করে। এসব কাজে কারও অনুমতি থাকে। এটি গুনাহের কাজ। তাই চোখের হেফাজত করার পাশাপাশি এ অভ্যাস দূর করা জরুরি।
৪. জবানের হেফাজত করা
কথা বলার সময় জবানের হেফাজত করা। লোকালয়ে কথা বলার সময়, ভাষণ দেওয়ার সময় জবানকে সংযত রাখার চেষ্টা করা জরুরি। অসতর্কতায় মুখ দিয়ে বের হওয়া একটা শব্দ কিন্তু অনেক সময় মানুষের ক্যারিয়ারে কিংবা ব্যক্তি জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সময় পদ-পদবি ও অবস্থান থেকে বহিষ্কৃত হতে পারে, হতে পারে চাকরিচ্যুত। তাই সবসময় কথা বলার সময় সতর্ক থাকা ও জবানের হেফাজত করা জরুরি।
৫. মৃত্যুর কথা স্মরণ রাখা
মানুষের মৃত্যু সুনিশ্চিত। এ মৃত্যুকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলে থাকা যাবে না। মৃত্যুর কথা স্মরণ করার মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার পেছনে ছুটে চলা থেকে বিরত থাকতে পারে। কারণ সে জানে মৃত্যুর মাধ্যমে এক সময় জীবনের রঙিন দিনগুলোর সমাপ্তি হবে। দুনিয়ার মোহময় এ জীবন ক্ষণিকের। যা মানুষকে মৃত্যুর কথা ভুলিয়ে দেয়।
৬. আল্লাহকে স্মরণ করা
আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহকে স্মরণ করার মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ ও সফলতা। কেননা আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৫২) সুতরাং আল্লাহ তাআলা যাদের স্মরণ করবেন তারাই তো সফল। তাই যার অন্তরে সর্বদা আল্লাহর জিকির থাকবে, যার জিহবা সর্বদা আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত থাকবে, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রিয় বান্দাদের কাতারে শামিল করে নেবেন। তার জন্য দুনিয়া-আখিরাত সহজ করে দেবেন। ফলে দুনিয়া ও পরকালের সফলতার জন্য আল্লাহকে স্মরণ করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লোকমান হাকিমের উল্লেখিত উপদেশগুলো নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের জীবনকে সফল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।