ইসলামীক ডেক্সঃ
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিন-মুসলমানদের পরস্পর ভাই ভাই হয়ে চলার উপদেশ দিয়েছেন। নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল হওয়ার কথা বলেছেন। ভালোবাসা ও প্রেম-প্রীতির সঙ্গে সমব্যথী হয়ে জীবনযাপন করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা এভাবে ওঠে এসেছে-
১. হজরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘একজন মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিনের জন্য একটি অট্টালিকা সদৃশ, যার এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে।’ (মুসলিম ৬৪৭৯)
মুমিন ব্যক্তি নিজের জন্য যে জিনিসটি পছন্দ করবে, সে তার অন্য ভাইয়ের জন্যও সেই জিনিসটিই পছন্দ করবে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবেই মুমিন-মুসলমানদের আচরণ ও বিবরণ পেশ করেছেন।
২. হজরত নুমান ইবনু বাশির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানব দেহের ন্যায় যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয় তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্ৰা। (মুসলিম ৬৪৮০)
এটিই ইসলামের সৌন্দর্য। মুমিন-মুসলমান পরস্পর একে অপরকে অনুগ্রহ করে এবং তারা সবাই মিলিত হয়ে ঐক্যতা বজায় রাখে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে জীবনযাপন করে। এ জন্য হাদিসে মুমিনদের দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে একটি মানব দেহের মাধ্যমে। যার এক অঙ্গ ব্যথিত হলে অন্য অঙ্গেও ব্যথা অনুভব হয়। অন্য হাদিসে এ সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে-
৩. হজরত নুমান ইবনু বাশির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিন সম্প্রদায় একজন ব্যক্তির ন্যায়। যখন তার মাথায় অসুস্থতা দেখা দেয় তখন সমস্ত দেহই তাপ ও অনিদ্রায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। (মুসলিম ৬৪৮২)
৪. হজরত নুমান ইবনু বাশির রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সকল মুসলিম একজন ব্যক্তির সমতুল্য। যদি তার চক্ষু পীড়িত হয় তবে তার সমগ্র দেহ পীড়িত হয়ে পড়ে। যদি তার মাথা আক্রান্ত হয় তাহলে সমগ্র শরীরই আক্রান্ত হয়ে পড়ে। (মুসলিম ৬৪৮৩)
মুমিনদের পরস্পরের ৩ কাজ নিষিদ্ধ
তাই মুমিন-মুসলমানের পরস্পরের তিনটি কাজ নিষিদ্ধ। যেহেতু এক মুমিন আরেক মুমিনের ভাই, সেহেতু তাদের জন্য তিনটি কাজ করা হারাম। তাহলো-
১. কাউকে উপহাস করা
একে অপরকে উপহাস করা। হেয় করা। মর্যাদা না দেওয়া। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- يٰٓاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّنْ قَوْمٍ عَسٰٓى اَنْ يَّكُوْنُوْا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاۤءٌ مِّنْ نِّسَاۤءٍ عَسٰٓى اَنْ يَّكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّۚ وَلَا تَلْمِزُوْٓا اَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوْا بِالْاَلْقَابِۗ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْاِيْمَانِۚ وَمَنْ لَّمْ يَتُبْ فَاُولٰۤىِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ
‘হে মুমিনগণ! কোনো সম্প্রদায় যেন অন্য সম্প্রদায়কে ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর নারীরা যেন অন্য নারীদেরক ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারিণীদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অন্যের নিন্দা করো না, একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান গ্রহণের পর (ঈমানের আগে কৃত অপরাধকে যা মনে করিয়ে দেয় সেই) মন্দ নাম কতই না মন্দ! (এ সব হতে) যারা তাওবাহ না করে তারাই জালিম।’ (সুরা হুজরাত: আয়াত ১১)
ইমাম কুরতুবি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উপহাস বলা হয় কোনো ব্যক্তিকে হেয় ও অপমান করার জন্য তার কোনো দোষ এমনভাবে উল্লেখ করা, যাতে শ্রোতারা হাসতে থাকে। কোরআনের ভাষায় তা হারাম বা নিষিদ্ধ।
২. কাউকে দোষারোপ করা
এক মুমিন অপর মুমিনকে দোষারোপ করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এমনটি করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَّلَا تَجَسَّسُوْا وَلَا يَغْتَبْ بَّعْضُكُمْ بَعْضًاۗ اَيُحِبُّ اَحَدُكُمْ اَنْ يَّأْكُلَ لَحْمَ اَخِيْهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوْهُۗ وَاتَّقُوا اللّٰهَ ۗاِنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِيْمٌ
‘…তোমরা অন্যের দোষ খোঁজাখুঁজি করো না, একে অন্যের অনুপস্থিতিতে দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো সেটাকে ঘৃণাই করে থাক। আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ খুব বেশি তাওবাহ ক্ববূলকারী, অতি দয়ালু।’ (সুরা হুজরাত: আয়াত ১২)
৩. কাউকে মন্দ নামে ডাকা
এক মুমিন অপর মুমিনকে মন্দ নামে ডাকা নিষিদ্ধ। কারণ আল্লাহ তাআলা পরস্পরকে মন্দ নামে ডাকতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَا تَنَابَزُوْا بِالْاَلْقَابِۗ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْاِيْمَانِۚ وَمَنْ لَّمْ يَتُبْ فَاُولٰۤىِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ
‘…একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান গ্রহণের পর (ঈমানের আগে কৃত অপরাধকে যা মনে করিয়ে দেয় সেই) মন্দ নাম কতই না মন্দ! (এ সব হতে) যারা তওবাহ না করে তারাই জালিম।’ (সুরা হুজরাত: আয়াত ১১)
কাউকে মন্দ নামে ডাকা হারাম। যেমন কেউ কাউকে ডাকলো- খোঁড়া, খঞ্জ, অন্ধ। এরূপ মন্দ নামে ডাকা হারাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন গুনাহ দ্বারা লজ্জা দেয়, যা থেকে সে তওবা করেছে, তাকে সেই গুনাহে লিপ্ত করে ইহকালে ও পরকালে লাঞ্ছিত করার দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেছেন।’ (কুরতুবি)
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকি এবং তার সঙ্গে যুদ্ধ করা কুফরি।’ (বুখারি ৬০৪৪, মুসলিম ৬৩)
মনে রাখতে হবে
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করে না, তাকে অপমানিত করে না এবং তাকে তুচ্ছজ্ঞান করে না (মুয়াত্তা ২/৯০৭ মুসনাদ আহমদ ২/২৭৭)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের পরিভাষায় এক দেহ এক প্রাণ হয়ে চলার তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত হাদিসগুলোর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।