‘ঈদ’ শব্দটি আরবি ‘আওদ’ থেকে উৎকলিত। ‘আওদ’ অর্থ ঘুরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা। ঈদ মানে প্রতি বছর ঘুরে ফিরে আসে এ রকম একটি দিন। আরবিতে বিশেষ দিবস বা উৎসবের দিনকে ঈদ বলে। ফিতর অর্থ রোজা ভাঙা বা ইফতার করা।
আমাদের কাছে পরিচিত ‘রোজার ঈদ’কে ইসলামি পরিভাষায় বলা হয় ঈদুল ফিতর বা রোজা ভাঙার উৎসব। পুরো রমজানে প্রতিদিন সূর্যাস্তের পর মুসলমানরা উপবাস ভাঙে। এটা শুধু সেদিনের রোজা বা উপবাসের ইফতার। ঈদের দিন এক মাসের নিয়মিত উপবাস ভাঙা হয়। সেটাও এক রকম ইফতার। রোজাদারের জন্য প্রত্যেক দিনের ইফতারের মুহূর্তই আনন্দের, ঈদুল ফিতরের দিন বিশেষভাবে আনন্দের ও উৎসবের। রাসুল (সা.) বলেছেন,
لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ، وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ
রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দক্ষণ রয়েছে, ইফতারের সময় সে আনন্দিত হয়, রবের সঙ্গে দেখা করার সময় আবার সে আনন্দিত হবে। (সহিহ বুখারি)
ঈদুল ফিতরের ১০টি আমল
১. ঈদুল ফিতরের দিন ভালোভাবে গোসল ও মিসওয়াক করুন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও আজহার দিন গোসল করতেন। (সহিহ বুখারি)
২. সামর্থ্য অনুযায়ী সুন্দর ও উত্তম পোষাক পরিধান করুন। নবিজি (সা.) ও তার সাহাবিরা ঈদের দিন তাদের সবচেয়ে সুন্দর পোশাকটি পরিধান করতেন। (ফতহুল বারি)
৩. ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে কিছু খেয়ে নিন। আনাস (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিছু খেজুর খেতেন। অন্য এক বর্ণনা অনুযায়ী তিনি বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। (সহিহ বুখারি)
8. ঈদগাহে যাওয়ার আগে বা যাওয়ার পথে আপনার ওপর ওয়াজিব সদকাতুল ফিতর আদায় করুন। নিজের পক্ষ থেকে ও অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের পক্ষ থেকে এই সদকা আদায় করতে হয়। হাদিসে নবিজি (সা.) উন্নত মানের খেজুর, মধ্যম মানের খেজুর, কিসমিস, পনির ও গম -এই পাঁচটি খাদ্যদ্রব্যের যে কোনো একটির মাধ্যমে সদকাতুল ফিতর আদায় করার অনুমতি দিয়েছেন। এগুলোর মূল্য অনুযায়ী সদকাতুল ফিতরের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারিত হয়। এ বছর (১৪৪৫ হিজরি) বাংলাদেশ সরকারের সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
৫. ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির বলুন। আল্লাহ তাআলা রোজা শেষে রোযা রাখার তওফিক দেওয়ার জন্য শুকরিয়া স্বরূপ তার বড়ত্ব ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং শোকর আদায় করো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)
৬. ঈদগাহে যাওয়ার সময় একটি রাস্তা দিয়ে যান, ফেরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরুন এবং আশপাশের দরিদ্র, অভাবীদের খোঁজ খবর নিন। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈদের দিন ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করতেন। (সহিহ বুখারি)
৭. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যান। ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ঈদগাহ থেকে ফিরতেন। (সুনানে তিরমিজি)
৮. ঈদগাহে যাওয়ার সময় শিশুদের সঙ্গে নিয়ে যান। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) দুই ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় ফজল ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্বাস, আলি, জাফর, হাসান, হোসাইন, উসামা ইবনে জায়দ, জায়দ ইবনে হারিসা ও আয়মান ইবনে উম্মে আয়মানকে সঙ্গে নিয়ে উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করতে করতে বের হতেন। তিনি কামারদের রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যেতেন এবং ফেরার সময় মুচিদের রাস্তা দিয়ে ফিরতেন। (আস-সুনানুল-কুবরা লিল-বায়হাকি)
৯. খুশুখুজুর সাথে অর্থাৎ বিনীত হয়ে মনোযোগ দিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করুন এবং মনোযোগ দিয়ে ঈদের খুতবা শুনুন।
১০. ঈদগাহ থেকে ফিরে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করুন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈদের নামাজের আগে কোনো নামাজ পড়তেন না। তবে নামাজের পর ঘরে ফিরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ)