কত রাকাত তারাবিহ নামাজ পড়বেন

কত রাকাত তারাবিহ নামাজ পড়বেন?

ইসলাম

ইসলামীক ডেক্সঃ

নামাজ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। নামাজকে মুমিনের মেরাজ বলা হয়। আর তারাবিহ তথা কিয়ামুর রমজান প্রসঙ্গে তো নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণাই দিয়েছেন যে, কিয়ামুর রমজান তথা তারাবিহ আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তার বিগত জীবনে গুনাহ মাফ করে দেবেন। কিন্তু তারাবিহ নামাজ কত রাকাত পড়বেন?

তারাবিহ নামাজ
তারাবিহ নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে চলছে পক্ষ-বিপক্ষ বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি। যার কোনোটিই উচিত নয়। আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সেতুবন্ধনের অন্যতম মাধ্যম নামাজ। সুতরাং তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত, ১১ রাকাত, ১৩ রাকাত এবং ২০ রাকাত নিয়ে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি না করাই উত্তম। নামাজ যে যত বেশি পড়বে; তার ফায়েদা ও উপকারিতা এবং আল্লাহ সঙ্গে বান্দার সেতুবন্ধনও তত বেশি মজবুত হবে।

দুঃখজনক বিষয় হলো
তারাবিহ নামাজ নয়, কেউ কেউ ফরজ নামাজই আদায় করে না; নামাজ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কারও কোনো চিন্তা-ফিকিরও নেই; বরং তারাবিহ নামাজ ৮ রাকাত পড়া জরুরি নাকি ২০ রাকাত পড়া জরুরি, তা নিয়েই বেশি ব্যস্ত মানুষ।

অথচ পবিত্র কাবা শরিফ, মসজিদে নববি, সৌদির বড় মসজিদ এবং কিং ফয়সাল মসজিদসহ বিশ্বের অনেক দেশ ও মসজিদে ২০ রাকাত তারাবিহ পড়া হয়ে থাকে। আবার একই শহরের অন্য মসজিদে ৮ রাকাত তারাবিহ পড়া হয়ে থাকে, সেখানে এ নিয়ে কোনো মতবিরোধ নেই।

পবিত্র বাইতুল্লাহ ও মসজিদে নববিতে কেউ ২০ রাকাতে অংশ গ্রহণ করছে; আবার কেউ কেউ ৮ রাকাত পড়ে তারাবিহ থেকে বিরত থাকছে। এটা নিয়ে সেখানেও কোনো দ্বিধা-বিভক্তি নেই।

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে ৮ রাকাত এবং ২০ রাকাত নিয়েই চলছে বেশ বাড়াবাড়ি। এ অবস্থায় যারা সাধারণত নামাজ পড়তে অনাগ্রহী, তারা হতাশা এবং দুটানায় নামাজই ছেড়ে দেয়ার অবস্থা। যা সাধারণ মানুষকে নামাজ থেকে দূরে সরিয়ে দেবে।

জরুরি কথা হলো-
প্রথমত ফরজ নামাজ আদায় করা আবশ্যক। এরপর কিয়ামুর রমজানসহ অন্যান্য নামাজে নিজেদের তৈরি করা উত্তম। তারাবিহ নামাজ ২০ রাকাত কিংবা ৮ রাকাত এ নিয়ে বাড়াবাড়ি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তবে নামাজ যে যত বেশি পড়বে তার ফায়দা বা উপকারিতা ততবেশি হবে। নামাজের প্রতি তত বেশি আকৃষ্ট হবে মানুষের মন। নামাজের প্রতি অন্য রকম ভালোবাসাও তৈরি হবে। যা তাকে রমজান পরবর্তীতে সময়ে নামাজের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে বেশি সহযোগিতা করবে।

যেহেতু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিমামণ্ডিত পবিত্র রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ আদায় করেছেন, সেহেতু তারাবিহ নামাজ আদায় করা মুসলিম উম্মাহর জন্য সুন্নত।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৩ দিন সাহাবিদের নিয়ে জামাতের সঙ্গে তারাবিহ নামাজ আদায় করেছেন। আর অন্যান্য দিনগুলোতে একা একা আদায় করেছেন। সাহাবায়ে কেরামও একা একা আদায় করেছেন।

কারণ তারাবিহ নামাজ উম্মতে মুহাম্মদির ওপর ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধারাবাহিকভাবে রমজানের বাকী দিনগুলোতে জামাতের সহিত তারাবিহ নামাজ আদায় করেননি। এরপর খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ১৪ হিজরি সনে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ সুন্নতকে পুনর্জীবিত করেছেন।

যেহেতু তারাবিহ নামাজ রমজানে পড়া হয়। তাই স্বাভাবিকভাবে রমজানের সব ইবাদত অন্য মাসের ইবাদতের চেয়ে অনেক গুণ বেশি সওয়াব বা প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সেহেতু রমজানে সব ইবাদতগুলো বেশি বেশি করার জন্য চেষ্টা করাই মুসলিম উম্মাহর জন্য জরুরি।

মক্কা, মদিনাসহ বিশ্বের সব বড় বড় মসজিদে ২০ রাকাত তারাবিহ আদায় থেকে যার প্রমাণ পাওয়া যায়। আবার আরব বিশ্বের অনেক মসজিদে ৮ রাকাত তারাবিহও আদায় করা হয়।

রমজান আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের সর্বোত্তম মাস। আর এ মাসের রাতের নামাজ হলো তারাবিহ। তাই অধিক সওয়াব লাভে আধিক্য সংখ্যক (২০ রাকা’ত) তারাবিহ নামাজ আদায় করা উচিত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজান মাসব্যাপী বেশি বেশি নামাজ, কুরআন তেলাওয়াতসহ যাবতীয় ইবাদত বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *