সুনামগঞ্জ থেকে:
সুনামগঞ্জের তাহিরপর সীমান্তবর্তী যাদুকাটা নদীর পাড় কাটা থামছে না। রাতের আধারে নদীর পাড় কেটে কোটি টাকার বালু লুট হচ্ছে। অপরিকল্পিত ভাবে বালু লুট করায় নদীর তীর বর্তী পর্যটন স্পট শিমুল বাগান সহ বিশটি গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে।
রাতে বালু খেকোদের অত্যাচারে নদী পাড়ের সাধারণ মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। তাদের হামলা মামলার ভয়ে নদী পাড়ের মানুষ এখন অসহায় । গেল মঙ্গলবার যাদুকাটা নদীর পাড় রক্ষায় শহরের আলফাত স্কয়ারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তাহিরপুর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার ব্যানারে এ মানববন্ধন পালিত হয়। মানববন্ধনে গ্রামের ভুক্তভোগী সহ শত শত ছাত্র জনতা বিক্ষোভ করে বিচার দাবি করে। নদীর পাড় কাটার অন্যতম হোতা ঘাগটিয়া গ্রামের বালু খেকো রানু মেম্বারকে গ্রেফতার এবং তাহিরপুর থানার ওসি মাইনুদ্দিন ও এসআই হেলালের দ্রুত অপসারণ চেয়ে স্লোগান দেয় ছাত্র জনতা।
পরে প্রধান উপদেষ্টা সহ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেয় ছাত্র জনতা। গতকাল বৃহস্পতিবার সরজমিন গিয়ে নদী পাড়ের কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয়। তারা নাম প্রকাশ না করে জানান, দীর্ঘদিন থেকে যাদুকাটা নদীর পাড় কেটে অবাধে বালু বিক্রি করছে রানু মেম্বার, আবুল কালাম সহ তার ভাই ভাতিজা।
তবে, সাম্প্রতিক সময়ে নদীর বড়টেকের পাড় বেশি কাটছে রানু মেম্বার গ্যাংরা। যার ফলে, পর্যটন স্পট শিমুল বাগান সহ বসত ঘর বাড়ি হুমকিতে পড়েছে। বড়টেক সহ নদীর পাড় কাটা বন্ধে উপজেলা প্রশাসন সহ পুলিশের জুড়ালো তেমন কোনো ভুমিকা দেখছেন না গ্রামবাসী। তারা বলেন, যাদুকাটা নদী ইজারাকৃত হলেও ইজারাদারদের বাধা উপেক্ষা করে রাতের আধারে নদীর পাড় কাটে এক শ্রেনীর বালু খেকোরা।
তাহিরপুর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আজিজুর রহমান কাওসার বলেন, যাদুকাটা নদী তীরবর্তী ঘাগটিয়া গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা রানু মেম্বার, চাঁদ আলীর ছেলে আবুল কালাম, তার ভাই – ভাতিজা, গড়কাটি গ্রামের আশরাফ তালুকদার, ইউপি ওয়ার্ড সদস্য নোয়াজ আলী, তাহিরপুর থানার ওসি মাইনুদ্দিন, এসআই হেলাল যোগসূত্রে প্রতি রাতে নদীর পাড় কেটে কোটি টাকার বালু বিক্রি করে টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন।
বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, নদীর পাড় কাটার কারণে ঘাগটিয়া গ্রাম সহ ২০টি গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, পাড় কাটা বন্ধ করতে হলে ঘাগটিয়া গ্রামবাসীকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। না হয় যাদুকাটা নদী কিছুদিনের মধ্যেই সাগরে পরিণত হবে।
তাহিরপুর থানার ওসি এসএম মাইনুদ্দিন টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পাড় কাটার সঙ্গে তিনি সহ পুলিশ জড়িত না। নদীর পাড় কাটার দায়ে পক্ষে বিপক্ষে ইতোমধ্যে থানায় মামলা হয়েছে। পাড় কাটার দায়ে প্রায় সময়েই পুলিশ বালিবাহী নৌকা আটক করে নিয়মিত মামলা দিচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা পারভীন বলেন, যাদুকাটা নদীটি ইজারাকৃত। নদীর পাড় কাটা বন্ধে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রায় সময়েই অভিযান চালানো হচ্ছে। গত কয়েকদিন আগে দুইটি বালু ভর্তি ষ্ট্রিল বডি নৌকা আটক করে নিয়মিত মামলা দেওয়া হয়েছে। যে কেউ নদীর পাড় কাটলে তা বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।