রাষ্ট্রীয় কাজে বাঁধা-বহিস্কৃত সদস্যদের নামে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মামলা

জাতীয়

শরিফা বেগম শিউলী স্টাফ রিপোর্টার:

সরকারী নির্দেশ অমান্য ও রাষ্ট্রীয় কাজে বাঁধা দেয়াসহ তালা ভেঙ্গে ক্লাবের অফিস দখল করে, সরকারি কর্মচারীকে আটকে রেখে হেনস্থার ঘটনায় ১৯ জনকে চিহ্নিত করে সমাজসেবার মামলা দায়ের। প্রশাসনিক অনিয়মের কারণে  রংপুর প্রেসক্লাবের বহিস্কৃতরা ও বহিরাগত এবং সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে (২২ জানুয়ারি) বুধবার বিকেলে অনুমান ৪টার দিকে ভোটাভোটির মাধ্যমে সদস্য অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম চালায়।

এ সময় তারা সমাজসেবা অধিদপ্তরের নোটিশ ছিড়ে ফেলে। বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক আন্দোলন এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র ছাত্রআন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। উল্লেখ্য যে প্রেসক্লাব পরিচালনায় আর্থিক দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অনিয়ম তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় রংপুর প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটিকে বরখাস্ত করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।

সরকারী বরাদ্দকৃত জমিতে পাঁচ তলা নির্মানাধীন ভবনে দীর্ঘদিন ধরে প্রেসক্লাবের ৩২জন সদস্য নিজেদের অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকতে রংপুরে কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের ক্লাবের সদস্য না করতে অনুমোদিত নীতিমালা কুক্ষিগত করে এবং গোপন রাখে।

এমন অভিযোগ করে বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক আন্দোলনসহ রংপুরের পেশাদার ২শতাধিক সাংবাদিক। নানা কালাকানুন দেখিয়ে পেশাদার সাংবাদিকদের সদস্য হওয়া পথ রুদ্ধ করে রাখে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রংপুর প্রেসক্লাব সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত সংগঠন,সংস্থা হিসেবে অনুমোদিত গঠনতন্ত্রে লেখা রয়েছে।

ধারা-২ এর উপধারা-(ক) ক্লাবের গঠনতন্ত্রের প্রতি  আনুগত্য প্রদর্শনকারী রংপুরে কর্মরত সকল জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র এবং সংবাদ সংস্থা সমূহের নিয়োগ প্রাপ্ত রংপুরে কর্মরত সার্বক্ষণিক সাংবাদিকবৃন্দ সাধারণ সদস্য হতে পারবেন। (খ) রংপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক ও সপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকগণ পদাধিকার বলে সদস্য হতে পারবেন। (গ) রংপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার রংপুর শহরে সার্বক্ষনিক কর্মরত সাংবাদিকগণ সাধারণ সদস্য হতে পারবেন।

পত্রিকার সম্পাদকগণ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের মনোনীত করবেন। (ঘ) প্রেসক্লাবের কোন সাধারণ সদস্য একটানা একযুগ সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত থাকলে নিয়োগকারী পত্রিকা বন্ধ হওয়ার পরও তিনি ইচ্ছা করলে সাধারণ সদস্যপদে বহাল থাকতে পারবেন। ধারা-৫ এর উপধারা -ক,খ,গ ও ঘ এ বলা আছে সদস্য হতে আগ্রহী হতে হবে, পত্রিকার নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র, ন্যুনতম ৬ মাসের অধিক নিয়োগের মেয়াদ থাকতে হবে।

কিন্তু দীর্ঘদিন হতে বর্তমান পর্যন্ত  প্রেসক্লাবে এই নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে গঠনতন্ত্রের সকল ধারার বিপরীতে নানা কালাকানুন চাপিয়ে দিয়ে ক্লাবের সদস্য হওয়ার পথ রুদ্ধ রাখা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তর রংপুর নিবন্ধন আইনের ১৯৬১ সনের ৪৬ অধ্যাদেশ বলে নিবন্ধনের অনুমোদন দেয় ১৯৯১ সালের ১৪ জুলাই।

ওই অনুমোদিত গঠনতন্ত্রে কোথাও বলা নেই, সংশ্লিষ্ট পত্রিকার প্রকাশনা এক বছর থাকতে হবে, প্রত্যেক স্থানীয় সংবাদ পত্রের ৪জন সদস্য হতে পারবেন, স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকগণ লিখিত আবেদন করে ও ভোটের মাধ্যমে সদস্য হতে হবে, রংপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে, ক্লাবের সদস্য হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাশ থাকতে হবে, যাছাই-বাছাই করে সদস্য হওয়ার জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা, এরপর তাদের সাধারণ সদস্যের কাছে ভোট প্রার্থনা করে তাদের ৬০শতাংশ ভোট প্রাপ্তির পর তিনি সদস্য হতে পারবেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক অন্দোলনের নেতৃবৃন্দ সমাজসেবাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন প্রায় ৬মাস আগে। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ডিজি কার্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির  তদন্ত প্রতিবেদনে প্রেসক্লাবের আর্থিক দুর্নীতি-অনিয়ম প্রমানিত হয়।

এর পর গত ১৫ জানুয়ারি’২০২৫ সমাজ সেবা অধিদপ্তর প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটিকে বরখাস্ত করেন ৪ সদস্যের একটি অন্তবর্তী তত্বাবধায়ক কমিটি গঠন করেন। চার সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক কমিটিতে রয়েছেন, আহবায়ক হিসেবে পরিচালক, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়,রংপুর, সদস্য- অতিরিক্ত পরিচালক, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়,রংপুর, উপপরিচালক বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়,রংপুর, সমাজসেবা অফিসার, শহর সমাজসেবা কার্যালয়,রংপুর।

রংপুর প্রেসক্লাব ১৯৯১ সালে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধিন একটি নিবন্ধিত সংস্থা। তাই রেজিষ্ট্রেশন আইনের নিয়ম-নীতি অনুসারে এর কার্যক্রম চলমান থাকার কথা।

কিন্ত তার কোন তোয়াক্কা না করে ক্লাবের ইচ্ছেমত নিয়ম আরোপ করে কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। এ বিষয়টি নিশ্চত হওয়া গেছে, ১৫ জানুয়ারী’২৫ বুধবার সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত পত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েক মাস পূর্বে প্রেসক্লাব রংপুর (নিবন্ধন নং-রংপুর/৩৫৯/৯১) পক্ষ থেকে আলাদা দুইটি কমিটি অনুমোদনের জন্য উপ-পরিচালক সমাজসেবা কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়।

বিষয়টি সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হলে তদন্তের জন্য সংস্থটির একজন উপ-পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে গত ১৯জানুয়ারী২৫ রংপুর প্রেসক্লাবের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন।

বিষয়টি জানতে পেরে প্রেসক্লাবের ৩২জন সদস্য ক্লাবের দরজায় তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান দুপুরের মধ্যে।  একই দিনে ১৯ জানুয়ারি’২৫ বিকালে পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেট, বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক অন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ রংপুরে প্রায় শতাধিক পেশাদার সাংবাদিকের উপস্থিতিতে সরকারী নির্দেশনার কাগজপত্র দরজায় লাগিয়ে দরজায় তালা ঝুলিয়ে ক্লাবের নিয়ন্ত্রন নেয়। সেই সাথে সেখানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ২জন গার্ড নিযুক্ত করে। তালা ঝুলানোর পর বহিষ্কৃত সাংবাদিকরা তালা ভাংবে, গোপন ভোটের মাধ্যমে সদস্য গ্রহণ করবে বলে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দেয়।

এই নিয়ে রংপুরের সাংবাদিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কর্তৃক সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহাড়াও নিযুক্ত করেন। এর পরে ২২ জানুয়ারী’২৫ প্রেসক্লাবের অবৈধ্য কমিটির সদস্যরা কিছু বহিরাগতদের সাথে নিয়ে বিকেল ৪টার দিকে সমাজসেবা,প্রশাসনসহ অসংখ্যপ্রত্যক্ষদর্শীর সামনে প্রশাসনের দেয়া তালা ভাঙ্গে,নোটিশ ছিড়ে ফেলে ক্লাবের ভেতর অবৈধ অনুপ্রবেশ করে উল্লাস করে। অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

রংপুর প্রেসক্লাবের বহিস্কৃত সদস্যরা বর্তমান সরকারের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে যে অপচেষ্টা চালিয়েছে এতে অবাক, ক্ষুব্ধ ও বিষ্মিত রংপুরের সর্বস্তরের সাংবাদিক এবং সচেতন মহল। এ বিষয়ে রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব জেষ্ঠ্য সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদল বলেছেন,রংপুর প্রেসক্লাবের বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তকে রংপুরের সকল সাংবাদিক সাধুবাদ জানিয়েছেন। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে রংপুর প্রেসক্লাব হবে রংপুরে কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের মিলন স্থল।

প্রসঙ্গত হাতে গোনা কিছু সাংবাদিক ও অসাংবাদিকদের নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্রেসক্লাব রংপুরকে কুক্ষিগত করে রাখে এই মহল। জুলাই আন্দোলনের পর বৈষম্যের শিকার সাংবাদিকরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন শুরু করলে প্রেসক্লাবের অসাংবাদিকদের রোষানলে পড়ে হেনস্তা ও একাধিক মামলার শিকার হন বেশ কিছু সাংবাদিক।

এমনকি রংপুর সার্কিট হাউসে তথ্য উপদেষ্টার মতবিনিময়সভা ভণ্ডুল করেন এই অপসাংবাদিকরা। এ সকল পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর রংপুর শহর শাখার অফিসার আরিফুর রহমান বাদী হয়ে  সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ১৯ জন কে চিহ্নিত করে আরো অজ্ঞাত ৮/১০ জনকে কি করে জানুয়ারি রাতে মেট্রোর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন।

উল্লেখ্য -সমাজসেবার তত্ত্বাবধায়ক সদস্য কমিটির সাথে এবার যুক্ত হলো জেলা প্রশাসন রংপুর। অনতিবিলম্বে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে যথাযথ হস্তক্ষেপ করবেন বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক ছাত্র,আন্দোলনসহ সচেতনরা বিশ্বাস করেন। সরকারের কাজে বাধা দানকারী দায়েরকৃত মামলার আসামিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে জোর দাবি করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *