বিশেষ প্রতিনিধিঃ
পুলুম গোলাম ছরোয়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মির্জা আব্দুল গফফার এর সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ ও বিদ্যালয়ে শিক্ষার মৌলিক পরিবেশ ধ্বংসের অপচেষ্টা প্রতিরোধে প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সুধিজনের অংশগ্রহণে শনিবার বিকেল ৩.০০ ঘটিকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্মুখে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তাগণ বলেন, মাগুরা জেলার অন্তর্গত পুলুম গোলাম ছরোয়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জেলার প্রত্যন্ত পল্লী এলাকায় অবস্থিত হলেও শিক্ষা, সংষ্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অনন্য ধারাবাহিক সফলতার কারনে মাগুরা জেলা তথা যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও ঐতিহ্যবাহী মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গত ৫-৬ দশক যাবত উজ্জ্বল অবস্থান সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহি পুলুম গোলাম ছরোয়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক জনাব মির্জা আব্দুল গফ্ফার ২০১৩ সালে অত্র বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তাঁর নিয়োগ প্রাপ্তির পর হতে আমরা প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ গত দশ বছর যাবত গভীর উদ্বেগ ও অত্যন্ত বেদনার সাথে লক্ষ্য করছি যে, তিনি প্রয়াত প্রধান শিক্ষক শেখ শামছুর রহমান স্যারের স্মৃতিধন্য ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় চরম অদক্ষতা, বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা, চরম নৈতিকতা বিবর্জিত নিম্ন রুচির প্রকাশ, নোংরা আচরণ ও ভাষার প্রয়োগ করে আসছেন। জনাব মির্জা আব্দুল গফ্ফার চৌধুরি নিজের নোংরা কর্তৃত্ব বজায় রাখতে ও হীন ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে স্থানীয় নেশাখোর, টাউট, বাটপাড়, মাস্তান-সন্ত্রাসীদের অবৈধভাবে অর্জিত টাকার বিনিময়ে হাত করে সকল প্রকার অনাচার অব্যাহত রেখেছেন।
সমাজের নষ্ট কিছু সহযোগীর সমর্থন নিয়ে তিনি শিক্ষকতার মহান আদর্শের জলাঞ্জলি দিয়ে প্রায় প্রতিনিয়তই তাঁর কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য, স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিগণের উপস্থিতিতে অশালীন নৃত্যসহ অসংখ্য দূর্বৃত্তপনার সাথে জড়িত যা অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং তিনি নিন্দিত হয়েছেন। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে তাঁকে সংশোধিত হবার জন্য বহুবার সতর্ক করে পরামর্শ প্রদান করা হলেও তিনি সেসব অগ্রাহ্য করে নিয়তই তাঁর অনৈতিক নোংরা কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এবং কথিত মাগুরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কের দাপট দেখিয়ে দিনে দিনে আরো জঘন্য হিংস্রতা ও স্বেচ্ছাচারিতা প্রদর্শণ করছেন, তাঁর এসব অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করলে নিজ সহকর্মীদের সাথে সার্বক্ষনিক চরম দূব্যর্বহার করছেন।
সম্প্রতি সরকারের শিক্ষা বিভাগের পক্ষ হতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা না নেয়ার ঘোষনা দেয়া হলেও জনাব মির্জা আব্দুল গফ্ফার একক সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিকট থেকে জোর করে নিবন্ধন ফি গ্রহণের ও সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক অনিয়ম, অর্থ আত্মসাত, নিয়োগ দূর্নীতি সহ এহেন কোন নোংরা কর্মকান্ড অবশিষ্ট নাই যা সম্পন্ন করতে তিনি বাকী রেখেছেন এবং বারংবার অভিযুক্ত হয়েছেন যার অসংখ্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রমাণ আমাদের হাতে আছে।
সর্বশেষ এই সর্বক্ষেত্রে অযোগ্য প্রধান শিক্ষক কর্তৃক কলংকজনকভাবে পুলুম গোলাম ছরোয়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে ১৯৯৮ সালে ব্রাকের সহযোগিতায় একটি ট্রাষ্টি বোর্ডের আওতায় নির্মিত স্কুলের একমাত্র পাঠাগারটি ভেংগে ফেলে বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে দোকান ঘর তৈরী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অত্র পাঠাগারটি নির্মানের উদ্যোগের সাথে আমাদের সকলের প্রিয় প্রধান শিক্ষক মরহুম শেখ শামছুর রহমান স্যার যুক্ত ছিলেন এবং তাঁর উদ্যোগের সাথে অসংখ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সমাজের বিদ্যানুরাগী গুনীজন আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে সামিল হয়েছিলেন এবং অনেকেই আজীবন সদস্য ফি প্রদান করে পাঠাগারটির সম্মানিত সদস্য পদ গ্রহণ করেন।
উক্ত পাঠাগারটির সাথে আমাদের সকলের আত্মিক ও আবেগের সম্পর্ক বিদ্যমান থাকায় বর্তমান প্রধান শিক্ষক কোনভাবেই একক সিদ্ধান্তে সেটি ভেংগে ফেলে বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে দোকান ঘর তৈরী করতে পারেন না। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই তিনি হীন ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মৌলিক কাঠামোতে আঘাত করেছেন যা আমাদের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ভীষণভাবে সংক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এতোদিন তাঁর শত অনাচারগুলো প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে মুখ বুজে সহ্য করে গেলেও পাঠাগার ভেংগে দোকান ঘর নির্মানের জঘন্য ঘটনা আমাদের মনে চরম আঘাত সৃষ্টি করেছে।
এসময় প্রাক্তন ছাত্র – ছাত্রী নেতৃবৃন্দ তিন দফা দাবি উপস্থাপন করেন এবং অনতিবিলম্বে দাবি সমূহ বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ১) অনতিবিলম্বে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে গফফারের সমূদয় দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। ২) তাঁর দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এই মূহুর্তে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ হতে প্রত্যাহার করা। ৩) তাঁকে দেশের দুর্নীতি বিরোধী প্রচলিত আইনী কাঠামোর অধীনে স্কুল থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা।
মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মো: মিজানুর রিহমান, মো: মোয়াজ্জেম হোসেন, পারভীন সুলতানা, খোন্দকার মাযহাব উদ্দীন পল্লব প্রমুখ।