রপ্তানিতে “জলরত্ন”উৎপাদনে নারীদের অবদান

জাতীয়

চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস:-

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। মৎস্য খাত কৃষি খাতের একটি প্রধান উপখাত হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে।বঙ্গবন্ধু কন্যা বঙ্গ রত্ন।তিনি নারীদের ক্ষমতায়নের কারণেই আজকে জলরত্ন তৈরি হচ্ছে।জলরত্ন যত তৈরি হবে ততোই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে এরা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করবে।

দেশের প্রায় দুই কোটি নারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের বাগদা চিংড়ির পোনা আহরণ অর্থ উপার্জনের একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যম। উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ি পোনা সংগ্রহকারী শ্রমশক্তির শতকরা ৮০ ভাগই নারী।

তাই ২০২৩সালে মৎস্য, চিংড়ি চাষী, মৎস্য ব্যবসায়ী,মৎস্যজীবী ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে মিলন মেলা ও সফল নারী উদ্যোক্তাদের সম্মাননা স্মারক দিয়েছেন ফিশফার্ম ওনার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ফোয়াব) এর সভাপতি মোল্লা সামছুর রহমান শাহীন।তিনি মৎস্যজীবীদের প্রাণের মানুষ। তিনি এই মহতী উদ্যোগ নেয়ার জন্য আমি তাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।আমি একজন চিত্রশিল্পী তার সাথে সাথে একটু লেখালেখি করি ।

সেটা থেকে সমাজের ভালো-মন্দ যাচাই করার চেষ্টা করি।দেশব্যাপী মৎস্য চিংড়ি খামারী নিয়ে কাজ করছে। তিনি সবসময় মৎস্য সেক্টরের অসংগতি দূর করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচ্ছেন । তিনি সব সময় মৎস্যজীবীদের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন।করোনা কালীন সময়ে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রান্তিক মৎস্য চিংড়ি খামারিদের ভর্তুকি আদায়ের আন্দোলন করে সফল হয়েছেন।এই আন্দোলনের সহযোগিতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মুহাম্মদ আলম, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা খন্দকার হাবিবুর রহমান এবং বর্তমান খুলনা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা কৃষিবিদ জয়দেব মন্ডল।

অঞ্চলের অনেকেই মোল্লা সামছুর রহমান শাহীন, মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে উপকূলীয় প্রান্তিক চিংড়ি চাষীদের ভর্তুকি এনে দেয়। আর এই আন্দোলনের সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করেন দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু দেশ প্রেমিক ব্যক্তিরা। সব সময় ফোয়াব এর সাথে থেকে সহযোগিতা করেছেন।সকলের মেধা খাটিয়ে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে কর্মসংস্থানে বিশেষ অবদান রাখছে। ২০২১ সালে বয়রা রায়ের মহল কোভিড ১৯ মহামারী কালীন সময়ে চিংড়ি চাষ ক্ষেত্রে সমস্যা সমূহ উদ্ভাবনের লক্ষ্যে সম্ভাব্য পন্থা নির্ধারণ শীর্ষক একদিনের সেমিনার আয়োজন করেন।উক্ত আয়োজনে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস রচিত মৎস্যজীবীদের জীবন দুর্দশার উপরে একটি নাটিকা পরিচালনা করেন খুলনা আর্ট একাডেমির ১১তম ব্যাচের চারু শিল্পীরা ।

উক্ত অনুষ্ঠানে ডুমুরিয়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা আবুবকর ছিদ্দিক এবং সাস্টিনেবেল মেরিন ফিসারিজের উপ-পরিচালকবাবু সরোজ কুমার মিস্ত্রী নাটিকাটি দেখে খুশি হয়ে ২০০০ টাকা পুরস্কার দিয়েছিলেন। সেই থেকে আমি চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস এই সেক্টরের উপরে কিছু একটা লেখার চেষ্টা করলাম। তাই এই মৎস্য সেক্টরের আংশিক কিছু তুলে ধরলাম।এবছরএকদিনের সেমিনারের আয়োজন করেন মোল্লা সামছুর রহমান শাহীন ভাই এর উদ্যোগে।

খুলনার উপ প্রকল্প পরিচালক সাস্টেনেবল মেরিন এন্ড ফিসারিস খুলনা কার্যালয়ে মিলন মেলা আয়োজন করেন। খুলনার সফল মৎস্য নারী কর্মীদের নিয়ে। এবং মিলন মেলায় খুলনার গুণীজনরাও উপস্থিত ছিলেন। আমাদের নারীরা শুধু চিংড়ি পোনা সংগ্রহই নয়, মৎস্য খাতে নারীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন।খুলনা জেলার কয়েক লাখ নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি মাছ ,চিংড়ি চাষ করে বাড়তি আয় করছেন।

নারীরা মাছ চাষেও ব্যাপকভাবে এগিয়ে এসেছেন। বাড়ির নিকটবর্তী ছোট পুকুর বা ডোবা, ধানক্ষেত ও বড় পুকুরে খাঁচায় মাছ চাষ করছেন নারীরা। উপকূলীয় জেলাগুলোয় ব্যাপকভাবে কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। কাঁকড়া চাষের সঙ্গে জড়িতদের বেশিরভাগই নারী। এছাড়া সরাসরি মৎস্য উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী নানা কাজে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। মৎস্য শিকারের জাল বোনা, মৎস্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মৎস্য খাতে শ্রমশক্তির শতকরা ৪৫ ভাগ নারী। নারীরা দেশের মৎস্য খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং পরিবার ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে।একটি প্রবাদ আছে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’।

ভাত বাঙালির প্রধান খাদ্য। বাঙালিদের প্রতিদিনের খাদ্যশক্তির ৭৫ ভাগ যোগান দেয় ভাত। আর ভাতের সঙ্গে এখনো আমাদের প্রধান সম্পূরক খাবার মাছ।মানুষের আমিষের ৬০ ভাগ যোগান দেয় মাছ। বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় এবং অভ্যন্তরীণ মৎস্যচাষে বিশ্বে পঞ্চম। কিন্তু চিংড়ি চাষ থেকে যখন লক্ষ লক্ষ চিংড়ি চাষী মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তখন এগিয়ে এসেছেন নারীরা।আর তাদেরকে উৎসাহ দিয়ে থাকেন ফোয়াব। মাছ রপ্তানিতে প্রথম হতে চায় মাছ যা সম্ভব সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ।

সোনা ফলা এ বাধার মাটি রূপা ফলে জলে,ধান, সবজি ,মাছ, চিংড়ি এই উপকূলের মাটিতেই ফলে। তাই বলবো সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা। দেশমাতার এই মুক্তিকামী সেই আমার আশা।এই সেক্টরের নীতিমালা চাষীদের কে প্রাধান্য দেওয়া হয় না যেটা অত্যন্ত হতাশা যেন চাষীদের মতামতের ভিত্তিতে চিংড়ি নীতিমালা সংযোজন বিভাজনের মাধ্যমে একটি চিংড়ি একটি ডলার। বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা করবে আর তা হবে কৃষকদের মাধ্যমেই। তার জন্য সরকার কর্তৃক কিছু নীতিমালা পরিবর্তন আবশ্যক।

যেমন জলমহর নীতিমালা পরিবর্তন করতে হবে,নারী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে হবে, উদ্যোক্তাদেরকে তারা সহায়তা দিবে বাণিজ্যিক সংগঠন গুলি তাদের দায়িত্ব চালাবে। সরকার সেখানে সহায়তা দিবেন তাহলেই উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে এতে আমাদের দেশের সুনাম বাড়বে। এবং স্বাস্থ্য গবেষণা সাজেশন অনুযায়ী পুষ্টির অন্যতম প্রধান উৎস মাছ। মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ, প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী এবং সরকারের প্রণোদনা বাংলাদেশে মৎস্য খাতে সফলতার মূল কারণ।

প্রচলিত মৎস্য উৎপাদনের পাশাপাশি অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদ যেমন কুঁচিয়া, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া ইত্যাদি সংরক্ষণ ও চাষাবাদের কৌশল উন্নয়নে বর্তমান সরকার বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। মৎস্য খাতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি,দারিদ্র্য বিমোচন, মৎস্যচাষী ও মৎস্যজীবী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ,রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এ কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শীঘ্রই মৎস্য খাত দেশের অন্যতম প্রধান খাত হিসেবে জায়গা করে নেবে এটা আমার বিশ্বাস।সকল মৎস্যজীবীদের মঙ্গল কামনা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *