সুনামগঞ্জ থেকে আমির হোসেন
সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর) আসনে নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। নৌকার মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট রঞ্জিত সরকার, মনোনয়ন বঞ্চিত সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য সেলিম আহমদসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
মনোনয়ন বৈধ হওয়ার পর থেকেই নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে সভা-সমাবেশসহ মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছেন নির্বাচনী এলাকায়। অবশ্য আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, তারা নৌকার প্রার্থীর পক্ষেই আছেন। গত শুক্রবার এই আসনের মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নিজ বাড়িতে কর্মী-সমর্থক নিয়ে সভা করে সিলেট শাহজালাল (র.) ও শাহ পরান (র.)-এর মাজার জিয়ারত করে ভোটে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
অপরদিকে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত সেলিম আহমদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এখন ত্রিধারায় বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনা করে মাঠ গরম রাখার চেষ্টা করছেন। জানা যায়, দলীয় কোনো পদে না থেকেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথম এমপি পদে নির্বাচিত হন মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। এ
রপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হন তিনি। পরে ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন তিনি। মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, আমি মনোনয়ন না পাওয়ায় আমার কর্মী-সমর্থকরা ব্যথিত ছিলেন। জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম নবী হোসেন আমার প্রস্তাবক হয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম আমার পাশে রয়েছেন। রতন আরও বলেন, নৌকার বিরুদ্ধে লড়ার সাহস আমার নেই। তবে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দাঙ্গাবাজের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা আমার আছে। এদিকে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আহমদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
বিপুলসংখ্যক তরুণ কর্মী-সমর্থকরা তার পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন। দলীয় মনোনীত প্রার্থী এবং মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীর একমাত্র মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন এখন সেলিম আহমদ। ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিস বলেন, রতনের সঙ্গে বিএনপি জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে আসা হাইব্রিড কয়েকজন আছেন। রতন এই ১৫ বছরে বিএনপি এবং জামায়াত নিয়ে একটি এমপি লীগ তৈরি করেছেন।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেন খান বলেন, কে কোথায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোষণা দিলো তাতে দলের কর্মীদের কিছু যায় আসে না। তাহিরপুর আওয়ামী লীগ নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম জানান, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন উন্মুক্ত, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে যেতে বাধা নেই। যার যে প্রার্থীকে ভালো লাগবে, তার পক্ষেই থাকবে।
দলীয় মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট রনজিত সরকার জানান, দলীয় সভানেত্রী আমার মতো একজন ক্ষুদ্র কর্মীর হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন। আমার লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আগামী ৭ই জানুয়ারি মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধেই রায় দেবেন। তাহিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আশ্রাউল জামান ইমন ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সেলিম আহমদের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন, তার সঙ্গে ভোটাররা রয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আহমদ জানান, নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো প্রার্থীকে বিষোদগার করতে চাই না। এই আসনের ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে যান, দলীয় সভানেত্রীর চাওয়া উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হোক, এখানে যেন সেটি হয়, সেই চেষ্টা করছি। আমার সঙ্গে এই আসনের নেতাকর্মীসহ সমর্থকরা রয়েছেন।