বহিষ্কার হয়ে দুকূল হারানো বিএনপি নেতাদের কি দলে ফেরাবে ?

জাতীয়

স্টাফ রিপোর্টারঃ

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল বিএনপি। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। এমনকি সিটি করপোরেশন ও উপজেলার মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ভোটবিমুখ। যদিও দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সদ্য অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন বিএনপির অনেক নেতা। এ কারণে ১৪৪ নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি।

বহিষ্কৃত এসব নেতার সাতজন নির্বাচনে বিজয়ী হলেও অধিকাংশই দুকূল হারিয়েছেন। একদিকে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন, অন্যদিকে জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্নও ভেস্তে গেছে। এ অবস্থায় এসব নেতার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তবে দলের কেউ কেউ এসব নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা বললেও ফের দলে ফেরার প্রত্যাশা করছেন বহিষ্কৃতরা। তাদের অনেকে আশা করছেন, উপজেলা নির্বাচন শেষ হলে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করবে দল।

বহিষ্কৃত নেতাদের একাংশের ভাষ্য, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করায় বহিষ্কার, এটা সাংগঠনিক শাস্তি। দল নেতাকর্মীদের প্রতি কখনো অমানবিক হতে পারে না। আশা করছি, পরিস্থিতি অনুযায়ী দল বিবেচনা করবে।

তবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, যারা দলের কথা শোনেননি তারা স্বাভাবিকভাবেই দল করার যোগ্যতা রাখেন না। তাদের নিয়ে এ মুহূর্তে দলের কোনো চিন্তাভাবনা নেই।

সূত্রমতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর একই কমিশনের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে বিএনপির নৈতিকতা। এ কারণে দলীয়ভাবে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। এ নির্বাচন শেষ হলে দল পুনর্গঠন কার্যক্রম জোরদার করবে বিএনপি। দল পুনর্গঠন শেষে আন্দোলন জোরদার করা হবে। তখন বহিষ্কৃতদের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে।

বিধিবিধান অনুযায়ী স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়া এবং তথাকথিত ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের বহিষ্কার করায় এ নির্বাচন অনেকটাই দলীয় নির্বাচনে রূপ নিয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৪৪ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। প্রথম ধাপে দেশের ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বিএনপির বহিষ্কৃতরা। নির্বাচিত হয়েছেন সাতজন।

দলে ফেরা নিয়ে বহিষ্কৃতদের ভাবনা
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় ১৩ হাজার ৩২২ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী।

বহিষ্কৃতরা ভুল স্বীকার করে আবেদন করলে নিশ্চয়ই বিবেচনা করবে বিএনপি। দল তো নেতাকর্মীদের ওপর অমানবিক হতে পারে না। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। — রুহুল কবির রিজভী

দলে ফেরার বিষয়ে সুহেল আহমদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, দলীয় কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবো। দল সুযোগ দিলে অবশ্যই কেন্দ্রে যোগাযোগ করে নিজেকে সাংগঠনিক কার্যক্রমে যুক্ত করবো।

নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে অংশ নেওয়ায় নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মানিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলে ফেরার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দল আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। জন্মলগ্ন থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ব্যাক করবো, ইনশাআল্লাহ। এজন্য যা কিছু করতে হয় করবো।’

বহিষ্কার হয়ে দলে ফেরার অনেক নজির রয়েছে জানিয়ে মানিক বলেন, ‘নির্বাচিত হতে পারলে দলে ফেরাটা সহজ হবে। জয়ী হওয়া একটা প্লাসপয়েন্ট। দল যখন দেখবে তৃণমূলের মানুষ আমার সঙ্গে আছে, তখন টেনে নেবে। নির্বাচিত হতে না পারলেও দলীয় নির্দেশনা মেনে চলবো। দলের ফেরার চেষ্টা করবো। বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দল করা সম্ভব নয়। দলের সঙ্গে আছি, থাকবো।’

বহিষ্কৃতদের বর্তমান পরিস্থিতি
দলের এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গাজীপুরের সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ৩২ জনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে বিএনপি। পরে মৌখিকভাবে বহিষ্কৃতদের দলে ফেরার লিখিত আবেদন জানানোর নির্দেশনা দেয় বিএনপি। সে মোতাবেক আবেদন করলে মাত্র তিনজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়। তারা এখনো দলীয় পদ ফিরে পাননি। এ তিনজনের একজন হলেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হান্নান মিয়া হান্নু। তিনি গাজীপুরের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

হান্নান মিয়া হান্নু বলেন, ‘ভুল স্বীকার করে আবেদন করলে জাতীয় নির্বাচনের আগে আমার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দল। দলীয় পদ এখনো ফিরে পাইনি। আশাকরি, যাদের বহিষ্কারাদেশ এখনো প্রত্যাহার হয়নি, তাদেরটা পর্যায়ক্রমে হবে।

আমরা দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন বর্জন করেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাইনি, উপজেলায় কেন যাবো? যারা কথা শোনেননি স্বাভাবিকভাবেই তারা দল করার যোগ্যতা রাখেন না। তাদের বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা নেই। — বেগম সেলিমা রহমান

সম্প্রতি বহিষ্কৃতদের দলে ফেরার সুযোগ আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছু নেই। দলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে।’গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে বহিষ্কৃত মহানগর শ্রমিক দলের সাবেক আহ্বায়ক ফয়সাল আহমেদ বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ৩২ জনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছিল দল। পরে দলীয় সিদ্ধান্তে তিনজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এখনো আমিসহ ২৯ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। দলের সঙ্গে আছি, থাকবো।

এ বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ভোট করেছেন। তাদের দলে ফেরার সুযোগ নেই।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছেন তাদের ‘বিপথগামী ও মীরজাফর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তবে আশার কথাও শুনিয়েছেন রিজভী। তিনি বলেছেন, বহিষ্কৃতরা ফিরতে চাইলে বিবেচনা করবে দল।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা ভুল স্বীকার করে আবেদন করলে দল নিশ্চয়ই বিবেচনা করবে। দল তো নেতাকর্মীদের ওপর অমানবিক হতে পারে না। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে দল।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘পরীক্ষিতদের সংশোধনের সুযোগ দেওয়া উচিত। এতে দলের শক্তি বাড়বে। এজন্য বহিষ্কৃতদের আগ্রহের ভিত্তিতে দলেরও অগ্রসর হওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন বর্জন করেছি। কে জিতলো, কে হারলো সেটা ভাবার বিষয় নয়। যেখানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাইনি, উপজেলায় কেন যাবো? যারা কথা শোনেননি স্বাভাবিকভাবেই তারা দল করার যোগ্যতা রাখেন না। তাদের বিষয়ে আমাদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *