বাগমারা প্রতিনিধি:
বাগমারায় লাগামহীন ঘোড়ার মত বেপরোয়া হয়ে পড়েছে চাঁদাবাজরা। তাদের লাগাম কোন ভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। প্রশাসনিক রাজনৈতিক কোন ভাবেই চাঁদাবাজদের দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। গত মাসের ৫ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে পালানোর পর থেকেই গেটা দেশের ন্যায় বাগমারাতেও শুরু হয় ব্যাপক দাঙ্গা হাঙ্গামা, ভাংচুর জ্বালাও পোড়াও লুটপাট । এসব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মহামারি আকার ধারন করে চাঁদাবাজি ।
বর্তমানে চাঁদাবাজির ধরন ও মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। গতকাল রবিবার উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটি ও মাসিক সমন্ময় সভায় চাঁদাবাজির এমনই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য ও গনিপুর ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড. মনিরুজ্জামান রন্জু।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত ৫ আগষ্টের পর থেকে যেভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে চলেছে তাতে আমাদের নিরব হয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমার ইউনিয়নে দিনদুপুরে মার্ডার হয়েছে অথচ পুলিশকে আমরা পাশে পাইনি।
এমনকি একটা ফোন পর্যন্ত রিসিভ করেননি থানার ওসি। যে কেউ থানায় একটা অভিযোগ দিচ্ছে এটা পুলিশ গ্রহন করুক না করুক থানায় রেকর্ড হোক না হোক তার ফটোকপি এনে গনহারে চাঁদাবাজি করছে কতিপয় দুর্বৃত্তরা।
এর কোন প্রতিকার হচ্ছে না। তোমার নামে থানায় মামলা হয়েছে নাম কাটাতে হলে এত হাজার এত লাখ টাকা লাগবে। ওই সভায় উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, লুৎফর রহমান ও ডিএম শাফি একই বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, গত ৫ আগষ্টের পর থেকে যেভাবে একের পর এক অঘটন ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছে তাতে সাধারন মানুষ শংকিত ও বিচলিত হয়ে পড়েছে। বিল দখল থেকে শুরু করে যে যার মত পারছে শুধু দখল আর জ্বালাও পোড়াও নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে।
পুলিশ সহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগষ্টের পর থেকে বাগমারায় আওয়ামীলীগ যুবলীগের ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে চুরি, আগ্নেয়াস্ত্র, হামলা ককটেল বিস্ফোরন মারপিট ও নির্যাতন সহ নানান ঘটনায় প্রায় অর্ধডজন মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক সাংসদ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সহ প্রায় শতাধিক আসামী করা হয়েছে। অজ্ঞাতের তালিকা আরো দীর্ঘ।
এসব মামলা ও অজ্ঞাতের তালিকা ধরেই এক শ্রেণির নামধারী নেতা ও দালালরা গ্রাম থেকে গ্রমান্তরে চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠেছে। মূলত আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীক নেতা কর্মী ও তাদের মদদদাতা ব্যবসায়ী ও জোতদার শ্রেণির কাছে থেকে দাবী করা হচ্ছে মোটা অংকের চাঁদা।
মাড়িয়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড আ’লীগের এক নেতা জানান, তার গ্রামের বিএনপি’র হটাৎ জন্মলাভ করা নেতা তার কাছে চাঁদা দাবী করে বলেছেন তার নামে থানায় মামলা আছে দুই লাখ টাকা দিলে তার নামটি কেটে দেওয়া হবে। এসব ভৌতিক মামলা ও পুলিশী হয়রানী থেকে রক্ষা পেতে আওয়ামলীলীগের স্থানীয় অনেক নেতা কর্মী ব্যবসায়ী ঠিকাদারদের অনেকেই রাজশাহী সহ অন্যান্য স্থানে আত্মগোপন করে আছেন।
এখানে কোর্ট এলাকায় বাগমারার এক ঠিকাদার জানান, পুলিশী মামলা, অজ্ঞাত আসামী ও চাঁদাবাজদের পাল্লায় পড়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। কোথাও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। এসব বিষয়ে জানতে বাগমারা থানার ওসির মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে মোবাইল রিসিভ না করায় তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, শত শত অভিযোগ আসছে। একার পক্ষে যতদূর সম্ভব সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। পুলিশী সেবা নেই বললেই চলে। তবে দ্রুত পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠবে বলে আশা করছি। সেই সাথে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহবান জানাচ্ছি।
বরিবার অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন, বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রতিনিধি এসআই আব্দুল মজিদ, আইন শৃংখলা কমিটির সদস্য ও বাগমারা প্রেসক্লাবের সভাপতি আফাজ্জল হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড. মনিরুজ্জামান রন্জু, মোশারফ হোসেন, লুৎফর রহমান, ডিএম সাফিকুল ইসলাম সাফি, সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, উপজেলার কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মাও: হাফিজুর রহমান প্রমূখ।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচএ) হাসান আলী মোল্লা, উপজেলা প্রকৌশলী খলিলুর রহমান, কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: আহসান হাবিব, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খন্দকার মাক্বামাম মাহমুদাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের অফিসার বৃন্দ। পরে একই স্থানে উপজেলা নির্বাহী অফিসর মাহবুবুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে যথারীতি মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।