নিজস্ব প্রতিবেদক, :
মাদক রাজ্যের রাজধানী হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলা। এ দুই উপজেলার প্রায় শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী গডফাদার রয়েছেন সক্রিয়। নিজেরা নিরাপদ আস্থানায় বসে তাদের নিয়োগকৃত দালাল দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অবৈধ মাদক কারবার।
তারা নিজেদের বড় শক্তিধর হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তুলেছেন লাঠিয়াল বাহিনী। কেউ এসব মাদক কারবারীর বিরুদ্ধে কথা বললেই তাদের নিয়োগকৃত দালালরা হয়ে উঠে মূর্তিমান লাঠিয়াল। বিভিন্ন সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে নিয়োগকৃত দালালরা আটক হলেও বরাবরই ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী গডফাদাররা। এতে প্রশাসনের শত চেষ্টার পরেও বন্ধ হয়নি চারঘাট-বাঘায় মাদক কারবারী। সরেজমিন চারঘাট-বাঘার বিভিন্ন মাদক প্রবণ এলাকা ঘুরে জানা গেছে এমন সব তথ্য।
জানা যায়, চারঘাট-বাঘা সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় এখানে মাদকসহ বিভিন্ন ধরণের অবৈধ কর্মকান্ড অন্য উপজেলার থেকে অনেক বেশী। তাই সারা দেশের মাদকের সঙ্গে জড়িতদের কাছে এ দুটি উপজেলার পরিচিতি ব্যাপকভাবে। ফলে মাদক রাজ্যের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এ দুটি উপজেলা।
সীমান্তবর্তী এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে পুলিশ বাহিনী অনেকটা নিষ্কৃয় হয়ে পড়েন। আর পুলিশের নিষ্কৃয়তার সুযোগে এক শ্রেণীর মাদক ব্যবসায়ী গডফাদারররা হয়ে উঠেন বেপরোয়া। এলাকার পাতি নেতাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে মাথার মুকুট করে বেপরোয়াভাবে চালায় মাদক ব্যবসা। এসব মাদক ব্যবসায়ীর পেছনের শক্তিধরদের চিহিৃত করে আইনের কঠোর ব্যবস্থা না নিলে মাদক বন্ধ করা কঠিন বলে মনে করেন সীমান্তবর্তী এলাকার একাধিক ব্যক্তি।
সরেজমিন চারঘাট-বাঘার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, চারঘাট উপজেলার রাওথা, পিরোজপুর, মেরামতপুর ডালিপাড়া, গোপালপুর, মোক্তারপুর, সারদা ঝিকরা পশ্চিমপাড়া, গৌরশহড়পুর, ইউসুফপুর, টাঙ্গন, শলুয়ার হলিাদাগাছী স্টেশন, নন্দনগাছী স্টেশন, ভায়ালক্ষীপুর বুধিরহাট, বনকিশোর, পুঠিয়ামারী এলাকা মাদকস্পট হিসেবে পরিচিত।
এছাড়াও বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ পালপাড়া, ভানুকর, হাবিবুরের মোড়, আতারপাড়া, বারশিপাড়া, হরিরামপুর, আলাইপুর, কেশরপুর, পানিকামরা উল্লেখ্য মাদকস্পট।
মাদকস্পট হিসেবে পরিচিত এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, এসব মাদকস্পটগুলো কয়েকটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। আর এসব সিন্ডিকেটের সদস্যদের রয়েছে লাঠিয়াল বাহিনী। তারা মূলত প্রশাসনকে পাহারা দিয়ে মাদক পাচারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন।
এসব মাদক ব্যবসায়ী গডফাদারা নিজেদের বড় শক্তিধর মনে করেন। যার প্রমাণ চলতি মাসের গত ৯ সেপ্টেম্বর চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী বারশত দিয়ার গ্রামের আরমান আলীর ছেলে রানার বাড়ীতে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ন র্যাব-৫ এর একটি দল।
এসময় মাদককারবারী রানার পক্ষ নিয়ে একদল মাদক কারবারী র্যাবের উপর আক্রমন চালায় এবং হামলা করে র্যাবের ৪ সদস্যকে আহত করে। এর মূল নেতৃত্বে ছিলেন একাধিক মাদক মামলার আসামী মাদক ব্যবসায়ী গডফাদার আলাইপুর এলাকার মাদক সম্রাট চপল আলী। এই চপল আলী মাদক ব্যবসায়ী রানার আপন দুলাভাই। আলাইপুর এলাকায় মাদক সম্রাট চপলের রয়েছে একটি শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী। ৯ সেপ্টেম্বর বারশত দিয়ার গ্রামের র্যাবের উপর হামলার সময় এই চপল তার লাঠিয়াল বাহিনী এনেই র্যাবকে আক্রমন করে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে চারঘাট-বাঘার (সার্কেল) সহকারী পুলিশ সুপার প্রণব কুমার সরকার বলেন, ৫ আগষ্ট এর পর পুলিশ বাহিনীতের একটু ছন্দপতন হয়েছিল কথাটি সঠিক। আর এই সুযোগে কিছু মাদক ব্যবসায়ী সুযোগ নিয়ে অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে।
তবে পুলিশ এখন আগের চেয়ে অনেক সক্রিয়। যার প্রমাণ গত কয়েকদিন আগে বিপুল পরিমাণের ফেন্সিডিল চারঘাটে আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। সেখান থেকে ৮’শ ১০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকের সঙ্গে কোন আপোষ নেই।
মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরন করা হচ্ছে দাবি করে প্রণব বলেন, এখানে লাঠিয়াল বাহিনী হোক গডফাদার সিন্ডিকেট হোক তাদের চিহিৃত করে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।