প্রতিনিধি, বাগমারা, রাজশাহী
রাজশাহীর বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের আলোচিত আন্দিয়ার এলাকার ১৩ একর দিঘি ইজারা নেওয়া বিএনপি নেতা নিজেই ইজারার বিষয় জানেন না। তাঁকে ইজারা গ্রহীতা দেখিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষ ও মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন।
দলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করে একটি প্রতারক চক্র নিজেদের জামায়াত ও বিএনপির নেতা পরিচয় দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়। বিএনপির স্থানীয় নেতারা আজ বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে এই দাবি জানিয়েছেন।
দলের মাড়িয়া ইউনিয়ন শাখার আমির জানিয়েছেন জামায়াতের এক ওয়ার্ড জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দেওয়া গোলাম মোস্তফা কোনো পদে নেই। গোলাম মোস্তফাকে ঢাকা থেকে আমদানি করে জামায়াত নেতা বানানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
সন্ধ্যায় বাগমারা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গোয়ালাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম খোকন বলেন, বিগত সময়ে প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা দুলালিপাড়া এলাকার ১৩ একর জমিসহ দিঘি দখল করে রেখেছিলেন। অথচ গত ২০১৪ সালে ওই দিঘিসহ জায়গাটি ইজারা নিয়েছিলেন গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুনসুর রহমান।
তাঁর ইজারা নেওয়া জায়গাটি দখলে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এর মূলে রয়েছেন দখলদার আক্কাছ আলী ও আবদুর রউফ। তবে আবদুর রউফ জানান, বিএনপির সদস্য সচিব কামাল হোসেন এর সঙ্গে জড়িত নন, তাঁর ইমেজ নষ্ট করার জন্য এমন করা হয়েছে।
রাজনীতিক পট পরিবর্তনের পর অবৈধ দখলদারেরা জায়গাটির দখল ছেড়ে দেন। এসময় পুকুরের নিয়ন্ত্রণ আগের ইজারাদারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
বড় বিহানালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মাহমুদুর রহমান, জামায়াত নেতা গোলাম মোস্তফা পুকুরটি আওয়ামী লীগ নেতা আক্কাছ আলী কাছ থেকে ইজারা দিয়েছেন বলে প্রচার করে স্থানীয় একটি চক্র তা দখলে গেলে গত ৪ নভেম্বর উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ১০জন আহত হন। এই ঘটনায় পাল্টা পাল্টি মামলারও ঘটনা ঘটে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার গোলাম মোস্তফা নিজেকে মাড়িয়া ইউনিয়ন জামায়াতের এক নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ও পুকুরের ইজারাদার পরিচয় দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে অভিযোগ করেন, উপজেলা বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ করা হয়।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামাল হোসেনের প্ররোচনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ সাংবাদিক সম্মেলনে ইজারা গ্রহীতা বড় বিহানালী ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মাহমুদুর রহমান ওরফে মিলন বলেন, তাঁকে ওই পুকুরের ইজারা গ্রহীতা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। তাঁর নামও ব্যবহার করে বিভিন্ন মিডিয়াতে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
অথচ তিনি জানেন না তিনি পুকুরটি ইজারা নিয়েছেন। জায়গাটি দখলে নেওয়ার জন্য একটি প্রতারক চক্র নিজেদের ভূয়া জামায়াত ও বিএনপির নেতা পরিচয় দিচ্ছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাঁরা অভিযোগ করেন, ফ্যাসিবাদের একটি চক্রের মদদের এসব অপপ্রচার করা হচ্ছে।
পুকুরের ইজারাদারের একজন গোলাম মোস্তফা নিজেকে মায়িড়া ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড শাখার সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ও বড় বিহানালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ আরও এক ব্যক্তি পুকুরটি ইজারা নিয়েছেন বলে দাবি করেন।
তবে মাড়িয়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমির নজরুল ইসলাম বলেন, গোলাম মোস্তফা দলের ওয়ার্ড শাখার সাধারণ সম্পাদক নন। তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনের বিষয়টি জানেন না বলে জানান। গোলাম মোস্তফা ঢাকায় থাকতেন, গত ৫ আগস্টের পর তিনি এলাকায় আসেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি নেতারা বলেন, বিএনপির উপজেলা শাখার সদস্য সচিবের সম্মান হানি করার জন্য এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। একেক সময় হেলমেট বাহিনী আবার হাতুড়ি বাহিনী উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।
এতে শুধু দলই নেই, এলাকারও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাগমারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়খ কমিটির সদস্য ইউসুফ আলী, গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল ইসলাম, বিএনপি নে তা ইয়ামিন আলী, বকুল সরদার প্রমুখ।