চারঘাটে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে রাস্তায় নামলো সর্বস্তরের জনতা, ব্যবস্থা না নিলে কঠোর কর্মসুচীর হুশিয়ারী

রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহীর চারঘাটে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা ইটভাটা বন্ধে রাস্তায় নামলো সর্বস্তরের জনতা। উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একাধিকবার লিখিত অভিযোগের পরেও ইটভাটা বন্ধে কার্য্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা আজ রাস্তায় দাড়িয়েছে।

বিভিন্ন স্কুল,কলেজ,ফসলি জমি ও জনবসতিপুর্ণ এলাকায়  একের পর এক ইটভাটা গড়ে উঠলেও ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্টরা।

ফলে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা ইটভাটা আজ চারঘাটের সর্বস্তরের মানুষের ক্ষতির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। এমন অভিযোগ করেছেন চারঘাটের সর্বস্তরের জনতার মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ কর্মসুচি থেকে। সোমবার বেলা ১ টার দিকে চারঘাট উপজেলা প্রশাসনের সামনে শত শত জনতা বিক্ষোভ কর্মসুচীতে অংশ গ্রহন করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা না হলে কঠোর কর্মসুচীর হুশিয়ারী দিয়েছেন কর্মসুচীতে অংশগ্রহণকারীরা। 

বিক্ষোভ কর্মসুচীতে অংশগ্রহনকারীদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যোগসাজসে একে একে চারঘাটে গড়ে উঠেছে ১০ টি ইটভাটা। যার মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ১টির। বাকী ৯টি ইটভাটারই নেই কোন ধরনের কাগজপত্র।

এসব ইটভাটা মালিক সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে চারঘাটের সর্বস্তরের জনতার বাধাকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আতাত করে অবৈধ ভাবে গড়ে তুলেছেন এসব ইটভাটা।

অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা এসব ইটভাটা বন্ধে এলাকাবাসী চারঘাট উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিলেও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্টদের।

লোক দেখানো দুএকটি ভাটায় অভিযান পরিচালিত হলেও মাত্র কয়েক হাজার টাকার আর্থিক জরিমানার মধ্যেই অভিযান সমাপ্ত করা হয়।

ফলে প্রশাসনের এমন লোক দেখানো অভিযানে বন্ধ হয়নি একটিও ইটভাটা। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের অভিযানের পর পরই তাদের অনুমতি নিয়েই আবারো ইটভাটা পরিচালিত করেন ইটভাটা মালিক। এতে করে প্রশাসনের লোক দেখানো অভিযানে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী।

জনতার প্রশ্ন লাইসেন্স ছাড়া একটি উপজেলায় কিভাবে এতো গুলো অবৈধ ভাবে ইটভাটা গড়ে উঠতে পারে? কিভাবে অভিযানের পরেও আবারো ইটভাটা চলতে পারে।  সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ফসলি জমির মাটি ও বাগানের গাছ উজাড় করে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ।

এতে ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে রোগবালাই। পাশাপাশি বিনষ্ট হচ্ছে সরকারি রাস্তা, উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি। ভয়াবহ বায়ুদূষণকারী ইটভাটার কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাড়ছে মানুষের রোগবালাই।

ভাটার আশপাশে বসবাস করা বাসিন্দাদের শ্বাসকষ্ট থেকে মরণঘাতী রোগ দানা বাঁধছে। অন্যদিকে, ইটভাটাকে পুঁজি করে মাটি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। তাতে একদিকে কমছে ফসলি জমি, অন্যদিকে জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অথবা নদীর তীরে পতিত দেড় একর ভ‚মিতে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে।

সরকারি সড়ক দিয়ে নয়, বরং ইটভাটার নিজস্ব রাস্তা দিয়ে চলবে মাটি বহনকারী ট্রাক্টর। অথচ বাস্তবতার সঙ্গে কোনো কিছুই মানছেন না ভাটা মালিকরা। মাটি বহনের ট্রাক্টরগুলো পাকা সড়কে নিয়মিত চলাচল করছে। এতে জনসাধারণ ধুলাবালিতে ভোগান্তিসহ যানবাহন চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জমি যেভাবে তার উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে, সে হিসেবে মাটি পুড়িয়ে ইট বানানো বন্ধ না করলে ২০৪০ সালে দেশের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে। ইটভাটার নির্গত সালফার ও নাইট্রোজেন অক্সাইড অ্যাসিড বৃষ্টির জন্য দায়ী। এতে ফসলের হানি ঘটছে ও নদীর মাছ মরে যাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে। বিষয়টি সম্পর্কে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বিক্ষোবে অংশগ্রহনকারীদেও উদ্দ্যেশে বলেন, দ্রæত সময়ের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলার পরিদর্শক নীল রতন কুমার বলেন, চারঘাটে ১০টি ভাটার মধ্যে ১ টি ভাটার আফডেট কাগজপত্র আছে। বাকী গুলোর কোন কাগজপত্র নেই। তবে সিলগালা ভাটা মালিক মাজদার রহমান সিলগালার পরেও ভাটা চালু করায় তার ভাটাসহ অবৈধ সকল ভাটায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *