নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বালুমহল ইজারা নিয়ে নির্বিঘ্নে মাটি কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নদী তীরবর্তী এলাকার পলি মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির ফলে পদ্মাপারের গ্রামগুলো ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
এতে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। প্রতিবছর ভিটেমাটি কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারগুলোকে।কিছুদিন আগেও অবৈধ মাটি উত্তোলনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন এক বিএনপি নেতা।
গোদাগাড়ী উপজেলার ফুলতলা, প্রেমতলীও শেখেরপাড়া বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন মোখলেসুর রহমান মুকুল। তার বাড়ি রাজশাহী নগরের কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফুলতলা ও শেখেরপাড়া বালুমহালের পাশাপাশি বিদিরপুর স্বপন ঘাটিয়ালের বাড়ির পাশে আরেকটি অবৈধ ঘাট খুলেছেন তিনি। এই তিন বালুমহলেই নদী থেকে বালু তোলার পাশাপাশি মাটি কাটা হচ্ছে তীরের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বালুমহালের ইজারাদার মোখলেসুর রহমান মুকুল তালিকাভুক্ত হুন্ডি ব্যবসায়ী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি রাজশাহী-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদের পেছনে খরচ করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। আসাদ এমপি নির্বাচিত হলে তিনি তাকে একটি বিলাসবহুল গাড়িও উপহার দেন।
এরপর আসাদের দুই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নিজ নামীও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজের নামে গোদাগাড়ীর দুটি বালুমহাল বাগিয়ে নেন মুকুল।
তিনি বালুমহল ইজারা নেওয়ার পর থেকেই মাটি কাটা হচ্ছে। কিন্তু তৎকালীন এমপি আসাদের লোকজনের ভয়ে গ্রামের মানুষ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর স্থানীয়রা বালুমহালে মাটি কাটার প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। সম্প্রতি কয়েকদফা তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। উপজেলা সদরে কিছুদিন আগে মানববন্ধনেরও আয়োজন করা হয়।
এতে স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। তারা বালুমহাল বন্ধের দাবি জানান। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর মোখলেসুর রহমান মুকুল আত্মগোপনে চলে যান। এতে মুকুলের হয়ে সবকিছু দেখাশোনা করছেন তার ভাই মো. বাবু ও ভাতিজা সাজিম।
সাজিম রাজশাহী মহানগর যুবদলের সদস্য বলে এখন পরিচয় দিচ্ছেন। মাটিকাটা ইউনিয়নের এই তিন বালুমহালে মাটি কাটার প্রতিবাদ করার কারণে গত ২৪ ডিসেম্বর মারধরের শিকার হয়েছেন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুদ্দিন টমাস।
তার বাড়ি বালুমহাল সংলগ্ন মাদ্রাসা মোড় এলাকায়। স্থানীয়রা বলছেন গোদাগাড়ী ইউএনও’র আশ্রয় প্রশ্রয় এসব অপকর্ম চলছে। ইউএনওকে ম্যানেজ করে পুকুর খনন ও বালু এবং নদী গর্ভ থেকে মাটি উত্তোলন হচ্ছে।
আ’লীগ সরকারের আমলেও পবা ও বড়কুঠি ভূমি অফিসে থাকা কালেও ইউএনও আবুল হায়াতের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা আরও বলছে দ্রুত আ’লীগের দোসর ইউএনও আবুল হায়াতকে গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে প্রত্যাহার করা উচিত।
এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার ফোন দিলে জেলা প্রশাসক ও গোদাগাড়ীর ইউএনও’কে পাওয়া যায়নি। একারণে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।