মোঃ ইসরাফিল হোসেন,রাজশাহী:
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শুকটিগাছা এলাকায় আত্রাই নদীর ওপর নির্মিত রাবার ড্যামটি কোনো কাজে আসছে না। মাত্র তিন বছর সুবিধা পাওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় ছিদ্র হয়ে অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে ১৯ কোটি টাকায় নির্মিত এ রাবার ড্যাম। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নদীর ওপর নির্ভরশীল কৃষক ও মৎস্যজীবীদের। সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এক সময় শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে নওগাঁর আত্রাই নদীর দুই কূলে চাষাবাদ করা যেত না। নদীর পানি উজান থেকে ভাটির দিকে দ্রুত নেমে যেত। ফলে বিকল্প হিসেবে গভীর নলকূপের ওপর কৃষকদের নির্ভর করতে হতো।
এ অবস্থায় ওই এলাকার কৃষিকে এগিয়ে নিতে সরকারের প্রযুক্তিগত নানাবিধ উন্নয়নমূলক কাজের অংশ হিসেবে পানি ধরে রাখতে আত্রাই নদীর দুই কূলে শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধার জন্য স্থাপন করা হয় রাবার ড্যাম। আত্রাই উপজেলার শুকটিগাছা এলাকায় নদীর ওপর রাবার ড্যামটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। এরপর বেশ কয়েকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হয়ে ২০১৭ সালে শেষ হয় কাজ। এরপর একই বছর রাবার ড্যামটি স্থানীয় একটি পরিচালনা কমিটিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে ড্যামটি।
মেশিনের সাহায্যে রাবার ড্যাম ফুলিয়ে নদীর উজানের পানি ধরে রাখা হয়; যা শুষ্ক মৌসুমে সেচের কাজে ব্যবহার করেন কৃষকরা। এছাড়া স্থানীয় মৎস্যজীবীদের জীবিকার মাধ্যমও এ নদী। রাবার ড্যামটি অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় উজানের পানি দ্রুত নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। এতে শুষ্ক মৌসুমে রাবার ড্যাম থেকে কোনো সুবিধা পাচ্ছে না এলাকাবাসী। যে কারণে গত তিন বছর থেকে চাষিদের খরচ বাড়ার পাশাপাশি দুশ্চিন্তা বেড়েছে মৎস্যজীবীদের।
উপজেলার হাটকালুপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, নদীর তীরে তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। ড্যাম হওয়ার পর নদীর পানি দিয়েই বোরো আবাদসহ অন্য ফসল চাষাবাদ করা হতো। এতে নদীর পানি দিয়ে বোরো আবাদে খরচ হতো ১২০০-১৪০০ টাকা এবং ফলনও ভালো হতো। গত তিন বছর থেকে নদীর সুবিধা না পাওয়ায় গভীর নলকূপের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে বোরো আবাদে পানির খরচ পড়ছে ২৫০০-২৮০০ টাকা।
রাবার ড্যামের পাশে আড়ানি গ্রামের চাষি আকবর হোসেন বলেন, রাবার ড্যামটি নির্মাণের পর প্রথম তিন বছর সুবিধা পেয়েছে উপকারভোগীরা। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে নানা স্থানে ফুটো হয়ে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ফলে এই প্রকল্পটির সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। ২০ দিন আগেও রাবার ড্যামের ওপর শুকিয়ে ছিল। কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হওয়ায় উজানের পানি নিচের দিকে আসায় রাবার ড্যামের ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা নেই।
স্থানীয় মৎস্যজীবী সনজিত বলেন, জীবিকার জন্য আমরা নদীর ওপর নির্ভরশীল। গত তিন বছর ধরে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় কষ্টের মধ্যে পড়েছি। কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হওয়ায় নদীতে কিছুটা পানি হয়েছে। সেখানে মাছ শিকার করা হচ্ছে। কিন্তু পানি শুকিয়ে গেলে আবারও সমস্যায় পড়তে হবে। রাবার ড্যামটি সংস্কার করা হলে কৃষক-মৎস্যজীবী সবার জন্যই সুবিধা হবে।
শুকটিগাছা রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় লিমিটেডের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, রাবার ড্যামটি নির্মাণের পর তিন বছর সুবিধা পাওয়া গেছে। ড্যামের মাধ্যমে আত্রাই, ছোট যমুনা ও তুলসীগঙ্গা নদীর দুই তীরের পাঁচ উপজেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সেচ সুবিধা পাওয়া গেছে। কিন্তু গত তিন বছর থেকে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে রয়েছে।
শহিদুল ইসলাম বলেন, এ সমিতির সদস্য (উপকারভোগী) ১৪৫ জন। এর মধ্যে ৮০ জন কৃষক। বাকিরা মৎস্যজীবী। নিজেদের অর্থায়নে রাবার ড্যামটি পরিচালনা করা হয়। একবার ড্যামটি ফোলাতে প্রায় আট হাজার টাকা খরচ হয়। বছরে তিনবার ফুলাতে হয়। এতে গড়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়।
নওগাঁ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, গত বছর পানি না শুকানোয় কাজটি করা যায়নি। তবে এবছর রাবার ড্যামটি সংস্কারে এরইমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগির কাজ শুরু করে রাবার ড্যামটি সচল করা হবে।