সেচের পানি বন্ধ করে ফসল নষ্ট ও কৃষকদের হত্যা চেষ্টার অভিযোগ

সেচের পানি বন্ধ করে ফসল নষ্ট ও কৃষকদের হত্যা চেষ্টার অভিযোগ

রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী চারঘাট উপজেলার ভাটপাড়া এলাকায় কৃষকের জমিতে পানি দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্হানীয় এক কৃষক পরিবার ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এক গভীর নলকূপ (ডিপ) এর ড্রাইভার (চালককে) ব্যাপক মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের উপর।

রবিবার (৯ এপ্রিল) রাত আনুমানিক ১০ টার পর ওই ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপ (ডিপ) এর পানি উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ওই মারধরের ঘটনা ঘটে। ব্যাপকভাবে মারধরের শিকার হয়েছেন চারঘাট উপজেলার, নিমপাড়া ইউপির, ভাটপাড়া গ্রামের মৃত, আব্দুল মন্ডলের ছেলে, মোঃ শমসের মন্ডল ও তার ছেলে শিমুল ইসলাম। মারধর থেকে বাদ পড়েনি গভীর নলকূপ (ডিপ) এর চালক আবুল হাশেমও। ঘটনায় চারঘাট মডেল থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা।

রাত আনুমানিক দশটার পরে অভিযুক্ত ১. হেলাল হোসেন পিতা মৃত, সাঈদ, ২. মিঠুন, পিতা নুরুল ইসলাম, ৪. রাজিব, পিতা ভুট্ট, ৫. আক্কাস আলী, পিতা ওমর আলী ও ৬. আলফাজ আলী, পিতা আলম দেশীয় ও সুস্বাস্থ্য নিয়ে এসে পরিকল্পিতভাবে কৃষকদের ফসলে পানি দিতে নিষেধ করে এবং দুই পক্ষের তর্কাতর্কির পর অতর্কিতভাবে মারধর শুরু করে উপরোক্ত ওই ৬ জন ব্যক্তি।

মারাত্মকভাবে স্থানীয় কৃষক শমসের মন্ডলের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেওয়া হয়। এতে করে রাতেই শমসের মণ্ডল কে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়াও আহত হয়েছেন শমশের মন্ডলের ছেলে মোঃ শিমুল ইসলাম ও গভীর নলকূপ এর চালক আবুল হাসান পরে তারা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

এছাড়াও এ ঘটনায় সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে অভিযুক্ত আক্কাস আলীর বিষয়ে আরো গুরুতর তথ্য বেরিয়ে আসে। কিছুদিন আগে নিজের ভাইকেও মারধর করে কুপিয়ে আহত করেছিল, এই আক্কাস আলী। পরে নিজের ভাইয়ের বাড়ির মধ্যে কিছু অংশ জোর জবরদস্তি করে ভেঙেও দিয়েছিল। এই ঘটনায় সে সময় আকাশের ভাই জাহিদ হাসান বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।

এই ঘটনায় গুরুতর আহত শমসের মন্ডল তিনি বলেন, রাতের বেলায়, আনুমানিক দশটার দিকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে প্রথমে আবুল হাসেমকে গভীর নলকূপ থেকে পানি তুলে কৃষকের ক্ষেতে সেচ দিতে নিষেধ করে। সে সময় আমার ক্ষেতে পানি নেওয়ার জন্য আমিও যাই। আবুল হাশেম এর সাথে আমার ছেলে কাজ করার সুবাদে তারা একসাথে থাকে। সে সময় হঠাৎ করে আমার ছেলে ও হাসেম কে মারধর শুরু করে।

পরে আমার ছেলে ও হাসেমকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে ওরা আমার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। এ সময় রক্তে আমার পূরো শরীর ভিজে যায়। পরে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। তারপর আমাকে মেডিকেলে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয় আমার ছেলে মেয়ে ও স্ত্রী। ওদের ভয়ে আমরা কেউ বাহিরে বের হতে পারছি না। মেরে ফেলার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকি দিচ্ছে আমাদের।

এই ঘটনায় গভীর নলকুপ এর চালক আবুল হাশেমকে জিজ্ঞেস করা হলো তিনি বলেন, রাত আনুমানিক দশটার পর আমার কাছে গ্রামের ওই বখাটে কয়েকজন ছেলে এসে নলকূপ থেকে পানি তুলে কৃষকের জমিতে সেচ দিতে নিষেধ করে। তাদেরকে আমি বলি এখানে তোমাদের জমি নেই তোমরা কৃষকের কষ্ট বুঝবে কি করে। তাই তোমরা বাসায় চলে যাও সকালবেলা তোমাদের সাথে কথা বলবো।

এই কথা শেষ হতে না হতেই আমি ও আমার সাথে কাজ করা শিমুল নামের ছেলেটির উপর অতর্কিতভাবে মারধর শুরু করে। এবং আমাদেরকে তাদের মারধর থেকে বাঁচাতে শমসের এগিয়ে আসলে তার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। এরপর আমাদের সকলের আত্মচিৎকারে আরো কৃষকসহ প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। এই ঘটনাটি আমি বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। আমাদের এলাকায় পানির সমস্যা হওয়ার কারণে আমি গভীর নলকূপ থেকে পানি তুলে বিভিন্নভাবে মানুষের কাছে দিচ্ছি তারা যাতে পানির সংকটে না পড়ে সেদিকে আমি গভীরভাবে ভেবেছি তাই এই কাজ করে ওদের কাছে পানি দেই।

মানুষের পানির কষ্টের কারণে আমি দিনের বেলা গভীর নলকূপটি চালাই না শুধু রাতে কয়েক ঘন্টা চালিয়ে কৃষকের ফসল রক্ষা করার চেষ্টা করছি। কারণ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আমাকে একটি দায়িত্ব দিয়েছে। সবাইকে এভাবে মারধর করে কাজটি তারা ভালো করেনি। আমরা কেউ ভয়ে বাড়ির বাইরে যেতে পারছি না কারণ ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন রকমের দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করছে আমাদেরকে মারধর করার জন্য তাই আমরা বাড়ির ভেতর বন্দী হয়ে থাকছি।

এই ঘটনায় অভিযুক্ত হেলাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, বিষয়টি তিনি পুরোপুরি অস্বীকার গিয়ে তিনি বলেন, ওরাই আমাদেরকে মারধর করেছে। ওদের হাতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র ছিল তার আঘাত শমসের মন্ডলের মাথায় লেগেছে। মূলত ওরা আমার মাথায় মেরে ছিল আমি সরে যাবার কারণে শমসের মন্ডলের মাথায় লেগেছে।

এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে স্থানীয় ইউপি সদস্য মেম্বার নেয়ামত আলী (ঝড়ু)র সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমি পরে শুনেছি। আসলে ওই এলাকায় টিউবয়েলে খুব ভালো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই হয়তো এই ঘটনাটি ঘটেছে। তবে এভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি। অন্যভাবেও বিষয়টি ফায়সালা করা যেত। দুপক্ষ যদি আসে তাহলে কথা বলে ফায়সালা করে দেওয়ার চেষ্টা করব।

এই বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চারঘাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, এ বিষয়ে একটি থানায় অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কে কাকে হুমকি দিচ্ছে তা আমরা জানি না। আমাদের পুলিশের লোক হুমকি দিচ্ছে কিনা তাই বলুন।

এ বিষয়ে জানতে নির্বাহী পরিচালক, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মোঃ আব্দুর রশীদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাকে কেউ বলেনি, এবং আমি জানিও না। এই সময় পানের লেয়ার একটু নিচে নেমে থাকে তাই হ্যান্ড টিউবওয়েলে পানি পেতে একটু কষ্ট হয়, তবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অপারেটরের গায়ে হাত তোলার বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত জেনে খুব দ্রুত আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য যে, গতকাল রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পানির অভাবে এক ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। ওই কৃষক তার জমিতে পানি না পেয়ে বিষ খেয়েছিলেন। পরে ওই কৃষকের ভাগ্য ভালো হওয়ার কারণে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। অনেকেই মনে করছেন ওই কৃষকের দিকে নজর দেওয়া না হলে ভবিষ্যতে আরও কৃষক বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করতে পারে তাই ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়ার দাবিও জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *