নিজেস্ব প্রতিনিধিঃ
প্রশাসনসহ পুকুর খনন নিয়ন্ত্রনকারী সকল কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোলায়কান্দি ইউনিয়নের কামারখালি গ্রামে ফের শুরু হয়েছে তিন ফসলী জমিতে পুকুর খননের মহোৎসব। এলাকায় পুকুর খনন করার জন্য গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুকুরটি খনন কাজ করা হচ্ছে। এই সিন্ডিকেটে যুক্ত রয়েছেন স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতাও।
তারা পুকুরের আকার আকৃতি, বছরে কয়টি ফসল হয়, পুকুর খননের মাটি কার কাছে বিক্রি করবে ও পরিবহনের সুবিধা আছে কিনা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা চুক্তির বিনিময়ে পুকুর খননে সহযোগিতা করে থাকে। আর তাদের রয়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়েল কর্মকর্তার সঙ্গে শখ্যতা। যে কারণে পুকুর খননকারীরা দিনে দুপুরে অবৈধভাবে তিন ফসলী জমিতে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি ও পরিবহন করতে কাউকে তোয়াক্তা করছে না।
বিশেষ করে যত্রতত্র ও লক্কর জক্কর কাঁকড়া নামধারী ভাঙ্গাচোরা ট্রাকটরে করে মাটি পরিবহনের ফলে সরকারের নতুন নতুন রাস্তা ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এভাবে মাটি পরিবহন করায় সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তা ভেঙ্গে একাকার হলেও এখানে মোটা অংকের টাকার সুবিধা পাচ্ছে কথিপয় দালাল, উপজেলা নির্বাহী অফিস ও থানার কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
স্থানীয় একাধীক সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালকান্দির কামারখালি গ্রামে গত ৩/৪ দিন ধরে ২০ একর অধিক তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন কাজ করছেন ওই গ্রামের ভুল সরদারের ছেলে আব্দুল কুদ্দুস সরদার নামের এক ব্যক্তি। আব্দুল কুদ্দুস সরদার সরাসরি নিজে পুকুর খননের সাথে যুক্ত না থেকে এলাকায় পুকুর খনন সিন্ডিকেটের সমন্বয়ক ও ইটভাটা মালিক আজাদ সরকারকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। আজাদ ওই পুকুর খননের মাটি ও ভরাটবালি নিচ্ছেন তার ইটভাটায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সিন্ডিকেট চক্রের নেতৃত্বে গোলালকান্দি ও এর আশেপাশের এলাকায় ১০/১২টি পুকুর খনন কাজ চলমান রয়েছে। তবে প্রশাসন এদের ব্যাপারে একেবারেই নির্বিকার। পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে প্রচার চালানো হলেও রহস্যজনক কারণে এ এলাকায় চলছে দিনে-দুপুরে পুকুর খননের বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর ফলে একদিকে সরকারি রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে সেই সাথে রাস্তায় মাটি পড়ে সামান্ন বৃষ্টিতেই সেই রাস্তায় চলাচলা অনুপযোগি হয়ে বাড়ছে জনদূর্ভোগ।
আজাদ সরকার বলেন, চারদিন আগে সেখানে ভ্যেকু (মাটিকাটা মেশিন) দিয়ে মাটি কাটতে সহযোগিতা করেছিলাম। আমি সেখানে কোন পুকুর খনন করিনি। আমি সেখান থেকে মাটি ও ভরাট বালি নিচ্ছি।
ফসলী জমিতে পুকুর খনন বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল কুদ্দুস সরদার বলেন, পুকুর খননের জন্য ইউএনও অফিসে আবেদন করেছি। বিষয়টি পরিদর্শনের জন্য মৎস কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরিদর্শনের আগেই কেন পুকুর খনন করছেন এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান।
উপজেলা মৎস কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে সেখানে পুকুর খননের বিষয়ে পরিদর্শনের জন্য ইউএনও স্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে অফিস ছুটি হওয়ায় সেখানে আর যাওয়া হয়নি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী খলিলুর রহমান জানান, কোন ভাবেই সরকারি রাস্তার ক্ষতি সাধন করা যাবে না। মাটি পরিবহনের ওইসব যানবাহন সম্পর্ণ অবৈধ। মাটি বহনের এসব ট্রাকের চলাচল বন্ধে এর আগেও আমরা নোটিশ প্রদান করেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সুফিয়ান বলেন, শুধু গোয়ালকান্দি নয়। গোটা উপজেলাতে পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পুকুর খনন বন্ধে চলতি মাসে একাধিক অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আবারও কেউ পুকুর খননের দুঃসাহস দেখালে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।