নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর পুঠিয়ায় ভুমিহীনদের জন্য নির্মিত, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্প, ধোকড়াকুলে চতুর্থ দফায় ২১টি ঘর নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে।
সরকারের দেওয়া ঘরগুলো আশ্রয় নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে মনে করছে সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো।
বুধবার (১৩ জুন) সকালের দিকে পুঠিয়া উপজেলার ভালুকগাছি ইউনিয়নের ধোকড়াকুল এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পেরর ঘর গুলো ঘুরে দেখা গেছে ওই দৃশ্য।
নিম্নমানের কাজের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে সরে জমিনে সেখানে গিয়ে মেলেঝ এর সত্যতা। ২১ টি ঘরের মধ্যে প্রায় প্রতিটি ঘরের কাঠে ঘুন লেগে অনেক কাঠ নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু কিছু ঘরের মধ্যে দেখা যাচ্ছে পাউডারের গুঁড়ার মত কিছু প্রতিনিয়ত ঝরে ঝরে পড়ছে। এতে করে কিছুক্ষণ ঘরের ভেতর থাকলে গায়ের উপরে সেগুলো পড়ছে। অনেকে আবার এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য কাপড় পলিথিন দিয়ে সিলিং তৈরি করে নিয়েছেন। ঘরে বসবাসকারীরা জান দ্রুত এই সমস্যা থেকে সমাধান।
ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রকল্প বাস্তুবায়ন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ৫শত ৯৮টি ঘর নির্মণের কাজ শেষ হয়েছে। এবার চতুর্থদফায় সেখানে ২১টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। গত সপ্তাহ হতে আশ্রয়িতারা সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাসও করা শুরু করেছেন। এর ভেতরে নানা সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে তাদের।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পণ্ড২ এর আওতায় ৪ দফায় উপজেলায় মোট ৫শত ৯৮টি গৃহহীন পরিবারকে পাঁকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের শুরুতে প্রতিটি ঘরে বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। বর্তমানে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায়, প্রতিটি ঘরে নির্মাণ ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার টাকা করে। তিনি বলেন, প্রতিটি পবিরারের জন্য দুটি বেডরুম বিশিষ্ট পাঁকা ঘরের মধ্যে আরো রয়েছে একটি বাথরুম ও রান্না করার ঘর। সেই সাথে ওই পরিবারগুলোর আধুৃনিক সুবিধার জন্য থাকছে আলাদা বিদ্যুৎ সংযোগ, পানি সরবরাহের পাশাপাশি ওই এলাকায় স্থাপন করা হচ্ছে আলোকবার্তি। আর তাদের যাতায়াতের জন্য তৈরি করা হচ্ছে নতুন সড়ক। ফরিদুল ইসলাম আরো বলেন, ঘর নির্মাণ কাজেও কোনো গাফলতি বা অনিয়ম করা হয়নি। সকল ঘরে সঠিক গুনগত মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।
আরশেদা বেগম নামে একজন আশ্রয়িতা বলেন, খুব নিম্নমানের কাঠ দিয়ে টিনের ছাউনি এবং ইট দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বাতাস উঠলে, যে কোনো সময়ে টিনের চালা উঠে যাবে এবং ঘর পড়ে যাবে। আরেকজন পান্না বেগম বলেন, এক সপ্তহের ভেতর আমার ঘরের জানালা ভেঙে পড়েছে। ঘরের কাঁচা গাছের গুড়ি ফাড়ায় করে তাড়িঘড়ি টিনের ছাউনি ও ঘরের ভেতর তীর দিয়েছে।
এখনি আশ্রয়ণের সবকটি কাঠে ঘুনপোকায় খেয়ে ফেলছে। রাতে ঘুমাতে পারচ্ছি না। সবাই বাধ্য হয়ে টিনের নীচে কাপড় লাগাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, সরকার ঘর বানাতে পর্যাপ্ত টাকা দিয়েছে। কিন্তু কাজ এত খারাপ কেনো? আরেক ব্যক্তি আবদুস সালাম নামে অপর একজন আশ্রয়িতা বলেন, এখানের কাজের মান খুবই খারাপ হয়েছে। এ বিষয়ে কিছু বললে কাজ দেখাশুনা করা ব্যক্তিরা আমাদের ধমক দেয়। তারা এখনো পায়খানা নির্মাণ করে দেয়নি। উল্টো বলছে নিজেরা করে নিতে। ইতোমধ্যে কয়েকজন নিজ অর্থ খরচ করে পায়খানা নির্মাণ করে নিয়েছে। আর যাদের টাকা নেই তারা এখন পায়খানা নির্মাণ কাজ করতে পারেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রকল্প বাস্তুবায়ন অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ৫শত ৯৮টি ঘর নির্মাণ করে দুইজন ব্যক্তি বেশি লাভবান হয়েছে। সব কাজগুলো করা হয়েছে লোক দেখানো জন্য। ঘরগুলিতে মানুষ সুখে বসবাস করতে পারবে না। সরকারের পক্ষ হতে সঠিক তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।
এ বিষয়ে ভালুকগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ কাজ তদারকি করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তর। যার কারণে এ বিষয়ে তিনি সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারবেন না বলে জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প নির্মাণ টাস্কফোর্স এর সভাপতি নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ সঙ্গে কয়েক বার ফোন করে সে ফোন ধরেনি। তারপর, তার ব্যক্তিগত ফেসবুক মেসেঞ্জার হোয়াটস ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও সে সাড়া দেয়নি। অন্য সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ঘর নির্মাণ কাজে কোনো গাফলতি বা অনিয়ম হয়নি। তবে ঘরগুলোতে আর কিছু জটিলতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।