স্টাফ রিপোর্টারঃ
আজ বুধবার রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজশাহী এখন উদ্বেলিত। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে এখন রাজশাহীবাসী অপেক্ষার প্রহর গুনছেন নতুন নগর পিতা নির্বাচনের জন্য। তাই শেষবারের মত জয়-পরাজয়ের হিসেব কষছেন প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র, কাউন্সিলর, নারী কাউন্সিলর ও তাদের সমর্থকরা।
রাজশাহী সিটির ইতিহাসে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ষষ্ঠবারের মতো নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাই একদিন আগে থেকেই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়েছে নগরী। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচস্তরের নিরাপত্তা বলয়। পুলিশের পাশাপাশি নগরীতে টহল দিচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সোমবার মধ্যরাত থেকেই নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে আচরণবিধি মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের জন্য নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আরএমপি কমিশনার আনিসুর রহমান।
মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরীর প্রবেশ পথ কাশিয়াডাঙ্গা বাইপাস সড়ক, নওদাপাড়া ও অক্ট্রয় মাড়ে বসানো হয়েছে অস্থায়ী চেকপোস্ট। নগরীর মধ্যে শাহমখদুম থানার মোড়, গৌরহাঙ্গা রেলগেট, সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট, কল্পনা হলের মোড়, লক্ষীপুর মোড়, সদর হাসপাতালের মোড়, আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোবাইল চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি করা হয়। কাউকে সন্দেহ হলে দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে।
এবার রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মোট ১৫৫ টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এরমধ্যে ১৪৮ টি গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে এরইমধ্যে শনাক্ত করেছে পুলিশ প্রশাসন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা দোলোয়ার হোসেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে মহানগরীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচন উপকরণ ইভিএম মেশিন পৌাছানো শুরু হয়। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা ইভিএমসহ সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন। দুপুর ২টার মধ্যে এগুলো কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে বলেও জানা গেছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, রাজশাহী সিটি নির্বাচনে এবার প্রথমবারের মতো ভোটগ্রহণের জন্য ব্যবহার করা হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৫টি। আর ভোটগ্রহণ কক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ১৫৩টি।
তবে মাত্র ৭টি ভোটকেন্দ্র বাদে ১৪৮টিই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে ঝুঁকিপূর্ণ নয়, নির্বাচন কমিশন রাজশাহীর এসব কেন্দ্রগুলোকে বলছে গুরুত্বপূর্ণ। এ ভোটকেন্দ্রগুলোতে থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি কেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরাও থাকবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, মোট ১৫৫টি কেন্দ্রেই সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েেেছ। তবে গুরুত্বপূর্ণ এ ১৪৮টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এসব সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশন ভোট পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করবে। কোথাও কোনো প্রকার অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোটগ্রহণ চলাকালে কোনো কেন্দ্রে কেউ গোলযোগ সৃষ্টি বা সহিংসতার চেষ্টা করলে তাকে কঠোর হাতে দমন করা হবে।
রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য পুলিশ-ডিবি, আনসারের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি, র্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া ৩০টি ওয়ার্ডের জন্য ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
সিটি নির্বাচনে প্রথম ইভিএমে ভোটগ্রহণ প্রশ্নে রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইভিএম নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। সমস্যা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তার সমাধান করা হবে। আর ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করার জন্য এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ কর্মশালা করা হয়েছে। সেখানে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মোট ৩ হাজার ৬১৪ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা আগামী বুধবার ভোটগ্রহণের কাজে নিয়োজিত থাকবেন।
পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি টহল দিচ্ছে। মাঠপর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও।
এছাড়া সকালে সিটি নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী অফিসার ফোর্সের উদ্দেশে ব্রিফিং করেছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মো. আনিসুর রহমান। এ সময় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন। সকাল সোয়া ৮টায় রাজশাহী পুলিশ লাইনস মাঠে নিরাপত্তা বিষয়ক ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান।
ব্রিফিংকালে পুলিশ কমিশনার বলেন, বুধবার (২১ জুন) রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তাই শান্তি-শৃঙ্খলা নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে এবারের রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে একটি রোল মডেল। ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা করার কেনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ পুলিশ এখন স্মার্ট পুলিশ। বুধবার নির্বাচনে এর প্রতিফলন ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, মোট ১৫৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১৪৮টিই গুরুত্বপূর্ণ ও ৭টি সাধারণ ভোটকেন্দ্র। কিন্তু আমরা সব কেন্দ্রগুলোকেই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। প্রতিটি কেন্দ্র এলাকায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়া নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে আইন-শৃঙ্খলা পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র্যাব ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি কেন্দ্র ১৭ জন করে সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে ৮ জন করে পুরুষ আনসার সদস্য থাকবেন। আর ৪ জন করে নারী আনসার সদস্য থাকবেন।
এছাড়া ৫ জন করে পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন পূর্ববর্তী এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
রাজশাহী সিটি নির্বাচনে এবার মোট ১৬২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে মেয়র পদে ৪ জন, ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১১২ জন ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর পদে ৪৬ জন ভোটযুদ্ধে নেমেছেন।
মেয়র পদের প্রার্থীরা হলেও আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (নৗকা), জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন (লাঙ্গল) জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার (গোলাপফুল) এবং ইসলামী আন্দোলনের মুরশিদ আলম ফারুকী (হাতপাখা)। যদিও হাতপাখার প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন তবে ভোটে তার প্রতীক থাকবে।
রাজশাহীতে মোট ভোটর সংখ্যা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন। এর মধ্যে নতুন ভোটার ৩১ হাজার ২২৩ জন। তারা প্রথমবারের মত ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।