নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও অবৈধ ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আমরা ডাঙ্গাপাড়া, মোহাম্মদপুর, ও পার্শবর্তী এলাকাবাসী। আমাদের মাগুরার বিলে প্রায় ৭০-৮০ বিঘা জমির উপর রাতের আধারে পুকুর খনন কাজ চলছে। উক্ত পুকুর খনন করলে পুকুরের উপরের ও গোটিয়ার বিল মিলে প্রায় ৫০-১৫০ বিঘা জমি জলাবদ্ধ সৃষ্টি হয়ে অনাবাদী হয়ে যাবে।
উক্ত পুকুরটি পুঠিয়া থানার ডাঙ্গাপাড়া মৌজার ১৭৫ দাগসহ মোহাম্মাদপুর ও বিয়াড় মৌজার জমি নিয়ে চলছে পুকুর খনন। আমাদের ডাঙ্গাপাড়ার পাকা রাস্তাটি মাটিকাটা ভেকু ও মাটি বহনকারী কাকরা দিয়ে ভেঙ্গে ফেলছে। উল্লেখ্য, বিষয় হলো ডাঙ্গাপাড়া, মোহাম্মদপুর ও বিয়াড় তিন সীমানায় বাংলাদেশ সরকারের রেভিনিউ সার্ভে অনুযায়ী একটি অতি মূল্যবান সীমানা পিলার রয়েছে যাহা রাষ্ট্রীয় সম্পদ নামে বিবেচিত এটি চুরির আশু সম্ভাবনা রয়েছে। অতি দ্রুততম সময়ে ফসলে জমি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার্থে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
অবৈধ পুকুর খননকারীদের কাছে যেন এক প্রকার জিম্মি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসন। অন্যদিকে পুঠিয়া উপজেলা প্রশাসনের কঠোরতায় অবৈধ পুকুর খননে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি অবৈধ পুকুর খনন করা হয়েছে দুর্গাপুর উপজেলায়।
ব্যাপকভাবে কমে গেছে ফসলে জমি। থেমে নেই পুঠিয়া উপজেলাও। অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে পুঠিয়া উপজেলায় মানববন্ধন হলেও তার উল্টো চিত্র দুর্গাপুর উপজেলায়। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পুঠিয়া উপজেলায় রাতের আধারে কেউ কেউ পুকুর খনন করলেও, দুর্গাপুর উপজেলার চিত্র একদম ভিন্ন রকম। ফসলি জমি নষ্ট করে দিন ও রাতে সমান তালে চলছে অবৈধ পুকুর খনন। সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করার রাস্তাগুলোর বেহালদশা।
পুকুর খননকারীদের মাটি বহনের কারণে কাঁচা পাকা রাস্তাগুলো মাটি পড়ে পিচ্ছিল হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন প্রতিনিয়ত এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসনের। ফসলে জমি নষ্ট করে পুকুর খনন এর অভিযোগ দিলে কাজ হচ্ছে না উপজেলাটিতে। ।
দুর্গাপুর উপজেলা ইউএনও, এসিল্যান্ড ও ওসি তারা যেনো নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। ফসলি জমিন নষ্ট করে পুকুর খনন এবং রাস্তা নষ্টের বিষয়ে প্রতিনিয়ত ফোন আসছে সাংবাদিকদের কাছে। আর এই বিষয়টি দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও তারা ব্যাবস্হা নিচ্ছি বলে কালক্ষেপণ করছেন আর এর মধ্যেই কাজ হয়ে যাচ্ছে অবৈধ পুকুর খননের।
এদিকে এস্কেভেটর (ভেকু)র ব্যাটারি রয়েছে সার্কেল অফিসে অথচ চলছে পুকুর খনন কাজ।
দুর্গাপুরের পানানগর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় তাহেরপুরের যুবলীগ নেতা আসাদুল ওরফে আসাদ, সোহেল, রফিকুল সহ বেশ কয়েকজন প্রায় ৭০/ ৮০ বিঘার উপরে ৬/৭ টা এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে দিন ও রাতে পুকুর খনন কাজ করছে।
এছাড়াও উপজেলার রাতুগ্রাম বিলে নতুনভাবে আসলে জমি নষ্ট করে চলছে পুকুর খনন মাটি বিক্রি। এছাড়াও উপজেলাটির মধ্যে কোনরকম বাধা বিঘ্নত ছাড়াই চলছে অবৈধ পুকুর খনন আর পাকা রাস্তা নষ্ট করে মাটি বিক্রির মহোৎসব।
পুকুর খনন বিষয়ে স্থানীয় যুবক কাউসার হোসেন তিনি বলেন, গ্রামের ছোট পাকা রাস্তা দিয়ে রাতের আঁধারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পাঁচটি এস্কেভেটর তাতে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা ভেঙ্গে গেছে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেও কোন কাজ হয়নি উল্টো করতে হয়েছে হুমকির মুখে।
ডা: আমিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তিনি বলেন, ৯৯৯ এ কল দিয়েও কাজ হয়নি, পুলিশও আসেনি। উল্টো পুলিশ বলছে ইউএনও’কে জানাতে। পরে সাংবাদিক ও ইউএনও’কে জানালেও অজ্ঞাত কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যবস্থা নিচ্ছি বলেও ব্যবস্থা নিতে কেউ আসেনি।
হাবিবুর রহমান আরেকজন ব্যক্তি তিনি বলেন, এসকেভেটরের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যাবার পর দেখি তারা রাস্তা নষ্ট করে আরো এসকেভেটর নিয়ে যাচ্ছে পরে এসে আমরা গ্রামবাসী নিষেধ করলে তারা উল্টো আমাদের হুমকি দিচ্ছে আর বলছে রাস্তা কি তোর বাপের। এই রাস্তা সরকারি আমরা নিয়ে যাব কিছু করার পারলে করিস এভাবে হুমকিও দিয়েছে। এই পুকুর খনন করা হলে বহু আবাদি জমি নষ্ট হয়ে যাবে আমরা এর প্রতিকার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি তারা বলছেন দাঙ্গাপাড়া ওই বিলে পুকুর খনন করা হলে বাদবাকি অন্য ফসলি জমিগুলো সব পতিত আর অনাবাদি হয়ে পড়বে। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ হয়ে পড়বে পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা থাকবে না। প্রশাসন অবৈধ পুকুর খনন কারীদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধ করছেন না। দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসনের কাছে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনোই কর্ণপাত করছেনা না। আমরা সাধারণ মানুষেরা কোথায় যাব আর কার কাছে অভিযোগ দিব!
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কৃষ্ণ চন্দ্র সহকারী কমিশনার (ভূমি) দুর্গাপুর তিনি বলেন, আমি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের জন্য একটু ব্যস্ত সময় পার করেছি। একটু সময় পেলে বিষয়গুলো দেখব।
ফসলি জমি ও পাকা রাস্তা নষ্ট করে অবৈধ পুকুর খনন করার বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা তিনি বলেন, পুকুর খননের মাটি বহনের জন্য রাস্তা নষ্ট করে মাটি বহনের জন্য কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি। শুধু পুরাতন পুকুর সংস্কারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে ফসলি জমি তে পুকুর খননের কোন অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এই বিষয়ে আমি খোজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পুঠিয়া সার্কেল, মোঃ রাজিবুল ইসলাম তিনি বলেন, বানেশ্বর বাজারে মোবাইলের দোকান চুরির বিষয় আর একটা হত্যা মামলা নিয়ে আমি খুব ব্যস্ত আছি। এছাড়াও উপজেলার নেতা-নেত্রীরা পুলিশকে পুকুরে যেতে নিষেধ করছেন, কি করব বুঝতে পারছি না। ডাঙ্গাপাড়া ওই পুকুর থেকে ইস্কেভেটর (ভেকুর) ইতোমধ্যে ব্যাটারী খুলে নিয়ে এসেছি।
বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইমতিয়াজ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলাপ করে অবৈধ পুকুর খননকারিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।