মোঃ ইসরাফিল হোসেন রাজশাহী:
রাজশাহীর পুঠিয়ায় বেড়েছে ব্যাপকহারে শুধু গভীর নলকূপে ব্যবহার করা বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরির মত ঘটনা। কোনভাবে ই আটকানো যাচ্ছে না সরকার ও কৃষকের ক্ষতি।
গত মাসের ২৯ তারিখ সারা দেশব্যাপী পালিত হয়েছে পবিত্র কোরবানির ঈদ। আর এই ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে শুরু করে, গতকাল সোমবার ৩ জুলাই পর্যন্ত উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে ঘটেছে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরির মত ঘটনা। এসব চুরির ফলে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা আবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সরকার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এর দেওয়া গভীর নলকূপের ব্যবহৃত বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার কোথাও কোথাও থেকে রাতের আধারে চুরি হয়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও চোররা ট্রান্সফরমার নামানোর সময় গভীর নলকূপের অপারেটররা দেখে ফেলায় ওভাবেই রেখে পালিয়ে গেছে। আবার কোথাও শুধু ট্রান্সফরমার বৈদ্যুতিক পিলার থেকে নামিয়ে নিচে রেখে চলে গেছে।
উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রামের বায়ান্ন বিঘার চরা নামের এলাকায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এর দেওয়া ট্রান্সফরমার ব্যবহার করে গভীর নলকূপ থেকে পানি তুলে কৃষকদের জমিতে দিতেন অপারেটর সাহাবাজ আলী নামের এক ব্যক্তি, কিন্তু এবারের কোরবানির ঈদের পরের রাতে তা পুরোপুরি চুরি হয়ে যায়। এছাড়াও এই সমস্যায় পড়েছেন, গন্ডগোহালী মোজার পুর্ব ধনঞ্জয় পাড়ার অপারেটর আবুল কালাম।
তার ওখান থেকেও চুরি করে নিয়ে যাবার সময় দেখতে পাওয়ায় রক্ষা পায় তার তিনটি ট্রান্সফরমার। আবুল কালাম এর তিনটি ট্রান্সফরমারের মধ্যে চোররা একটি ট্রান্সফরমার নিচে নামিয়ে ফেলেছিল। আরও দুইটি ট্রান্সফরমার বৈদ্যুতিক পিলারের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। এছাড়াও এই সমস্যায় পড়েছেন ভালুকগাছির এক ব্যক্তি, কান্তার বিল এলাকার এক ব্যক্তি, ফুলবাড়ী এলাকার কালু মিয়াও পড়েছিলেন এই সমস্যায়। এছাড়াও শোনা যাচ্ছে উপজেলার আরও বিভিন্ন জায়গায় ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার কথা।
ফুলবাড়ি এলাকার গভীর নলকূপ অপারেটর কালু মিয়া বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় আমি গভীর নলকূপের কাছে সকাল বেলা যেয়ে দেখি আমার ট্রান্সফরমার তিনটি বৈদ্যুতিক পিলারের নিচে খোলা অবস্থায় পড়ে আছে। হয়তো মানুষের আনাগোনা পেয়ে চোররা সেগুলো চুরি করতে ব্যর্থ হয়। পাশাপাশি চোরদের চুরি করা আরও যন্ত্রপাতি রেখে পালিয়ে যায়। পরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সাথে যোগাযোগ করলে তারা সবকিছু ঠিকঠাক করে দিয়ে যায়।
পূর্ব ধনঞ্জয় পাড়ার গভীর নলকূপ অপারেটর আবুল কালাম বলেন, রাতের বেলা আমি পাহারা দেয়ার জন্য সেখানে যাবার সময় দূর থেকে লক্ষ্য করে দেখি মানুষের আনাগোনা। এবং কাছে গিয়ে বুঝতে পারি আমার গভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরি করছে। তখনই আমি চিল্লাচিল্লি শুরু করি। এবং পাড়া-প্রতিবেশী নিয়ে চোরদের ধরার চেষ্টা করি। এর মাঝে চোররা দৌড়িয়ে পালিয়ে যায়। আর রেখে যায় তাদের ব্যবহৃত স্যান্ডেল ও জামা। এছাড়াও চুরি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি।
এদিকে আরো অনেক গভীর নলকূপ অপারেটর ও কমিটির সভাপতিদের সাথে কথা বলে একই রকম বক্তব্য পাওয়া যায়। এতে করে উপরোক্ত কেউই থানায় কোন অভিযোগ বা যদি করতে পারেনি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বলছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সাথে যোগাযোগ করলে তারা আমাদেরকে থানায় অভিযোগ বা জিডি করতে নিষেধ করে। আমাদেরকে লিখিত অভিযোগ দিন বিষয়টি আমরা দেখছি।
কোন কোন বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে ট্রান্সফরমার সার্ভিসিং করে দিয়ে টাকাও নিচ্ছেন বিএমডিএতে চাকরি করা মেকানিক খায়রুল ইসলাম। অন্যদিকে পুঠিয়া উপজেলার সরকারি প্রকৌশলী বিএমডি এর মোঃ হানিফ শিকদার তিনি বলছেন সার্ভিসিং করে দিয়ে কোন টাকা নেয়ার নিয়ম নেই। সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহের জন্য অন্য অপারেটরদের কাছে যাওয়ার আগেই মেকানিক খায়রুল ইসলাম ফোন দিয়ে সাংবাদিক যাওয়ার কথাও বলে দিচ্ছেন।
এদিকে এসব বিষয় নিয়ে মেকানিক খাইরুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি রেগে গিয়ে সবকিছু অস্বীকার করেন।
সাধারণ কৃষকদের ট্রান্সফরমার ছুরির সত্যতা নিশ্চিত করে, সার্বিক বিষয়ে মোঃ হানিফ শিকদার, সরকারি প্রকৌশলী বিএমডিএ পুঠিয়া, রাজশাহী তিনি বলেন, বেতন দেওয়ার সময় প্রতিটি অপারেটরকে মেসেজ দিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। এটা সাধারণ মানুষের পক্ষে চুরি করা সম্ভব নয়। আর কৃষকদের অবশ্যই আরো বেশি সচেতন হতে হবে নইলে চুরি ঠেকানো সম্ভব নয়। সাধারণ কৃষকরা এসব বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ বা জিডি করে না কেনো, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন বিএমডিএ এর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়। গত কয়েকদিনে যে চুরি হয়েছে সেসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, কিন্তু ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফারুক হোসেন বলেন, শুধু বিএমডিএ নয় সব ধরনের চুরি রোধে আমরা ২৪ ঘন্টাই তৎপর রয়েছি। বিএমডিএ থেকে একটি অভিযোগ করার জন্য এসেছিলেন। কিন্তু সেখানে কিছুটা ভুল থাকায় আজকে আর হয়নি। আগামীকাল আসলে মামলা দায়ের হবে।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, মোঃ আব্দুর রশীদ, নির্বাহী পরিচালক, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তিনি বলেন, কিছু কিছু সময় এমন ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে তারা এই ধরনের ঘটনা ঘটায়। এতে করে কৃষকদের একটু সচেতন হতে হবে এবং প্রহারার ব্যবস্থা করতে হবে। দূর থেকে আলো জ্বালিয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বিষয়টি আমার জানা ছিল না আমি এখনই কথা বলছি। যতটুকু কৃষকদের জন্য করা যায় আমি সেই ব্যবস্থা করব ইনশাল্লাহ।
উল্লেখ্য যে পুরো পুঠিয়া উপজেলায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) মোট ১৭০ টি গভীর নলকূপ রয়েছে।