দীর্ঘ ৫০ বছর পর শিক্ষার আলো জ্বলছে যে গ্রামগুলোতে

রাজশাহী

পঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

মো রকিবুল হাসান সনি রাজশাহীর পুঠিয়া, চারঘাট এবং নাটোর সদর ও বাগাতিপাড়া উপজেলার প্রান্তিক গ্রাম পূর্ব-বারইপাড়া, সর্দারপাড়া, জয়রামপুর, পাইকপাড়া, কারিগর পাড়া, ও জাইগীর পাড়া। এই গ্রামগুলো হোজা নদীর তীরে অবস্থিত। গ্রামের অধিকাংশ লোকজন নিঃস্ব, ভূমিহীন ও শিক্ষা বঞ্চিত। গ্রামগুলোর ৩-৪ কি.মি এর মধ্যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই।

নদীর তীরবর্তী গ্রাম হওয়ায় অত্র অঞ্চলে মাদকের অভয়াশ্রম গড়ে উঠেছে। গ্রামের যে কয়েকটি শিক্ষিত পরিবার আছে, তাদের দীর্ঘদিনের দাবি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গ্রামবাসী জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে নানাভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন করে আসছিল। অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হলো।

২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে ছোট পরিসরে ১৫-২০ জন শিশুকে নিয়ে পড়ানো শুরু করা হয় তালুকদার গ্রামের মসজিদে। ২০২২ সালে প্রায় ১৫০ জন শিশু তালুকদার গ্রামে পড়তে চলে আসে, ২০২৩ সালে ২২৫ জন শিশু তালুকদার গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার জন্য ভর্তি হয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এলাকাবাসীর প্রবল চাহিদা ও আবেদন নিবেদন থাকায় রাজশাহী- ৫ (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) এর এমপি প্রফেসর ডাঃ মোঃ মনসুর রহমান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি. এম. হিরা বাচ্চু ও পুঠিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফ খাঁন ঝন্টু লোকাল ফান্ড থেকে আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে একটি একাডেমিক ভবন তৈরি করে দেন। এছাড়াও, অনেক দানশীল ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিবর্গ স্বেচ্ছায় দান করেছেন।

ইটভাটার মালিকগণ ইট দান করে সহযোগিতা করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য একাডেমিক ভবনটি গত ০৬ মে ২০২৩ খ্রি. তারিখে প্রায় ২০০ শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে উদ্ধোধন করেন। অত্র কিন্ডারগার্টেন এর প্রধান শিক্ষক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘আমার বাপ-দাদা ও গ্রামবাসী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন।

আমরাও অনেক ‍দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। তালুকদার গ্রামের হযরত আনাস (রাঃ) নূরানী এন্ড কিন্ডারগার্টেন আমাদের ও আমাদের পূর্ব পুরুষদের প্রবল আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। দীর্ঘ ৫০ বছর প্রতিক্ষার পর আমাদের গ্রামে শিক্ষার আলো পৌঁছালো’’। তালুকদার গ্রাম আশ্রয়ণের বাসিন্দা ফারুক বলেন, ‘‘আমার ছেলে ইব্রাহিম অত্র বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণিতে পড়ে।

তালুকদার গ্রামে প্রতিষ্ঠানটি হওয়ায় গ্রামের মান বেড়েছে। বাচ্চাদের আচার-আচারণে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। পড়ার পাশাপাশি বাচ্চারা সামাজিকতা শিখছে’’। পূর্ব বারইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফারুক হোসেন বাবু বলেন, ‘‘আমার মেয়ে ফারহানা অত্র বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণিতে পড়ে। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান অনেক ভাল। আমরা খুশি। আমাদের মনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে’’।

জয়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা নূর আলম বলেন, ‘‘আমার ছেলে জোবায়ের হোসেন অত্র বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণিতে পড়ে। অত্র প্রতিষ্ঠানটি ধর্মীয় শিক্ষা ও স্কুলের একাডেমিক শিক্ষা দিয়ে আমার সন্তানকে গড়ে তুলছে। বাড়ির কাছে স্কুল পেয়েছি। এর চাইতে আনন্দের কি হতে পারে’’।

অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন প্রামানিক বলেন, অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা ও স্কুলের একাডেমিক শিক্ষার সুসমন্বয় রয়েছে। আমরা আমাদের শিক্ষকগণকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়েছি। হযরত আনাস (রাঃ) আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বিখ্যাত সাহাবী ও ১০ বছরের খাদেম ছিলেন।

এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিগন মাদ্রাসা ও স্কুলের নাম হিসেবে অত্র নামটি পছন্দ করেছেন। এতে মাননীয় সংসদ সদস্য ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিগণ লিখিতভাবে সম্মতিও দিয়েছেন। ভবিষ্যতে অত্র প্রতিষ্ঠানকে দাখিল /এস.এস.সি পর্যায়ে উন্নীত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *