নওগাঁ কল্পনা রানীর চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যাকান্ড উদঘাটন অতঃপর আসামি ফারুক হোসেন গ্রেফতার!”

রাজশাহী

উজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁ প্রতিনিধিঃ

নওগাঁ সদর থানাধীন হাঁপানিয়া ইউনিয়নের উল্লাসপুর গ্রামের ১৪/৬/২৩ তারিখ সকাল সারে ৬ টার সময় মাছ চাষী মোঃ মোসলেম উদ্দিন এর পুকুরে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত নামা হিন্দু নারীর ভাসমান মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন থানায় সংবাদ দেয়।

সংবাদ পেয়ে পুলিশ সুপার নওগাঁ মহোদয়ের নির্দেশক্রমে জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, জেলা গোয়েন্দা শাখা নওগাঁ এর একটি টিম এবং সদর থানা কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রস্তুত কালে জানা যায় বর্ণিত অজ্ঞাত নামা নারীকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। তথাপিও কল্পনার রানীর মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের নিমিত্তে ময়না তদন্তের জন্য মৃতদেহ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহ সনাক্ত করণের জন্য পিবিআই নওগাঁ এর সহায়তা গ্রহণ করেন।

কিন্তু মৃতদেহ দীর্ঘ সময় পানিতে থাকার কারণে মৃতার হাতের আঙ্গুলের ছাপ সনাক্ত করন মেশিন গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। নিরুপায় হয়ে মৃতার মৃত দেহ বে ওয়ারিশ হিসাবে সকলের অগোচরে মৃতার বাড়ি থেকে অল্প দূরেই দাফন করা হয়।

উক্ত ঘটনায় হাঁপানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ বাদী হয়ে নওগাঁ সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার দায়েরের পরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত এবং অপরাধীকে গ্রেফতারের জন্য নওগাঁ জেলার পুলিশ সুপার জনাব মুহাম্মদ রাশিদুল হক মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় নওগাঁ সদর মডেল থানার সাথে জেলা গোয়েন্দা শাখা, নওগাঁর একটি চৌকস টিম তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব গাজিউর রহমান পিপিএম মহোদয়ের পরিকল্পনায় জেলা পুলিশের একটি টিম নওগাঁ সদর থানার যাবতীয় নিখোঁজ জিডি অনুসন্ধানে উপরে উল্লেখিত অজ্ঞাতনামা নারীর পরিচয় উৎঘাটন করে।

নিখোঁজ জিডির সুত্র ধরে জানা যায় অজ্ঞাত মৃতার নাম কল্পনা চৌধুরী(৩৮), পিতা- নরেন্দ্রনাথ চৌধুরী, সাং- সুলতানপুর, থানা-নওগাঁ সদর, জেলা-নওগাঁ।
মৃতার পরিচয় উৎঘাটন পূর্বক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জেলা গোয়েন্দা শাখার আইসিটি সেল জানতে পারে মৃতার ব্যাবহৃত মোবাইল ফোন ঢাকার কুড়িল এলাকায় ভিন্ন একটি সিমে ব্যাবহৃত হচ্ছে।

পরবর্তীতে পুলিশ সুপার নওগাঁ স্যারের নির্দেশনায় নওগাঁ সদর পুলিশের সাথে জেলা গোয়েন্দা শাখার বিশেষায়িত একটি টিম ঢাকার কুড়িল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গত ২৭/০৭/২০২৩ ইং তারিখ মৃতার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করে অপরাধীর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে ঘটনার সাথে জড়িত ব্যাক্তিকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করতে থাকে।

কিন্ত আসামী পুলিশের হাত হতে রক্ষা পাবার জন্য ঢাকা, ফরিদপুর এবং নওগাঁর বিভিন্নস্থানে আত্মগোপন করতে থাকে। অত:পর অদ্য ইং ০৬/০৮/২০২৩ তারিখ আসামীর অবস্থান সনাক্তের পর নওগাঁ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফৌজিয়া হাবিব খান এর নেতৃত্বে সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আব্দুল গফুর এবং ডিবির এসআই মোঃ বদরুদ্দোজা জিমেলসহ‌ একটি চৌকস দল মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে অভিযান চালিয়ে
আসামী মোঃ ফারুক হোসেন@চোর ফারুক (৫০), পিতা- মোঃ সামাদ মন্ডল, সাং-চকজাফরাবাদ, থানা-নওগাঁ সদর, জেলা-নওগাঁকে তার মামা বাড়ী নওগাঁ সদর থানাধীন চন্ডিপুর ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রাম থেকে রাত্রি ০৪.১৫ ঘটিকার সময় গ্রেফতার করে।

আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানায় ইং ১৩/০৬/২০২৩ তারিখ সকাল অনুমান ১১.৩০ ঘটিকার সময় মৃতা কল্পনা চৌধুরীর সাথে নাটোর রেলস্টশনে দেখা হয়। দুপুর অনুমান ১৩.৩০ ঘটিকার সময় সান্তাহার রেলস্টেশনে নেমে দুইজনের কথা বার্তার একপযায়ে আসামী মোঃ ফারুক হোসেন@চোর ফারুক(৫০) শারিরীক সম্পর্কের জন্য মৃতা কল্পনা চৌধুরীকে প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে সম্মত হলে দুই জন সুলতানপুরে যায় এবং সেখানে কল্পনার কাছে থাকা মালামাল বাড়ীতে রেখে তারা বিকাল অনুমান ১৬.৩০ ঘটিকার সময় সদরথানাধীন নুনিয়া পট্রিতে যায়।

সেখানে কল্পনা তার মেয়ের সাথে সাক্ষাত করার পরে আসামী ফারুকের সাথে সন্ধ্যা বেলা হাঁপানিয়া ইউনিয়নের উল্লাসপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা করে। উল্লাসপুর গ্রামের মাছ চাষী মোঃ মোসলেম উদ্দিন এর পুকুরের পূর্ব পার্শে নির্জন স্থানে কল্পনা চৌধুরীকে নিয়ে আসামী ফারুক হোসেন শারিরীক সম্পর্ক করার সময় কল্পনা বাধা দেয়।

আসামী ফারুক হোসেন জোরপূর্বক শারিরীক সম্পর্ক করার চেষ্টা করলে কল্পনা চৌধুরী জোরে চিৎকার করা চেষ্টা করলে আসামী ফারুক হোসেন তার গলা চেপে ধরে এতে শ্বাসরোধ হয়ে কল্পনা চৌধুরী মৃত্যু বরণ করেন। কল্পনা চৌধুরীর মৃত্যু হলে সে মৃত দেহ মোঃ মোসলেম উদ্দিন এর পুকুরে ফেলে দেয় এবং ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে বাড়ীতে চলে যায়। ঘটনার পরে আসামী ফারুক হোসেন ঢাকায় চলে যায় এবং কল্পনার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ৩০০ টাকায় বিক্রয় করে।

উল্লেখযোগ্য যে আসামী ফারুক চোর একজন অভ্যাসগত অপরাধী। চুরি, ছিনতাই, মাদক সেবন এবং নারী ধর্ষন সংক্রান্তে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন। এবার তার সাথে যোগ হলো নারী খুন। এবার ফারুক চোরের ফাসি হবে ফাসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *