রাজশাহীতে ল্যাব এইড এর উদ্যোগে ডাঃ মন্জুর এ খোদা এর বিশাল সেমিনার

রাজশাহী

মোঃ ইসরাফিল হোসেন,রাজশাহী:

রাজশাহীতে ল্যাব এইড এর উদ্যোগে শুক্রবার ১১ আগস্ট ডাঃ মন্জুর এ খোদা এর বিশাল সেমিনার লক্ষ্মীপুর মোড় রিফ্রেশমেন্ট রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের এক জন সুনামধন্য ডাঃ মন্জুর এ খোদা, তিনি রোগীর রোগ সঠিক ভাবে নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন, তিনি অনুষ্ঠান শেষ পর্যায়ে প্রশ্ন উত্তর পর্ব শুরু করেন,

সেমিনারে আধুনিক চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনা রাখেন তিনি, যে সব বিষয়ে আলোচনা পেশ করেন,

(ক)গেঁটেবাতের আধুনিক চিকিৎসা:

বাতরোগের চিকিৎসা প্রথাগতভাবে স্টেরয়েড ধরনের ব্যথানাশক প্রয়োগ আর মুখে খাওয়ার সাধারণ প্রদাহবিনাশী বড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। আধুনিক রোগ নির্ণয় পদ্ধতি প্রয়োগ করে যেমন রক্তপরীক্ষা ও ডিএনএ পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে এসব রোগ এখন আর অজানা থাকছে না, সম্পূর্ণ ডায়াগনসিস করা সম্ভব হচ্ছে, তেমনি এখন আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্হার মাধ্যমে রোগলক্ষণ প্রশমিত করা সম্ভব।

এছাড়াও সহযোগী চিকিৎসা ব্যবস্হা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি(হস্তগত ব্যায়াম ও বিভিন্ন প্রযুক্তিগত মেশিনের মাধ্যমে আক্রান্ত অস্হিসন্ধিকে নমনীয় করা হয়) প্রয়োগ করে বাত উপশম করা যায়। পাশাপাশি বাত প্রতিরোধে খাদ্যাভাসের একটি বিশাল ভূমিকা রয়েছে যেমন, ১। হলুদ বা কিউকারমিন ২। আদা ৩। গ্রীণ টি বা ক্যাটেকিন ৪। আনারস ৫। চেরিফল বা এর রস ৬। টক ফল মাল্টা, কমলা, লেবু ৭। যেকোন বেরি যেমন, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, মালবেরি ৮। গাজর ৯। অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল ১০। মোটা শস্য বা হোল গ্রেইন বা ওটস। এগুলো বাত বা প্রদাহ প্রতিরোধী খাবার হিসেবে গবেষণায় প্রমাণিত।

আধুনিক চিকিৎসা বলতে যা বোঝানো হচ্ছে-
ক। বায়োলজিক চিকিৎসা- সাধারণ বাংলায় বললে, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা। এর অর্থ যেসব এন্টিবডি রক্তে বেশি মাত্রায় থাকার বলে অটোইমিউন বাতরোগ হচ্ছে সেসব এন্টিবডির বিরুদ্ধে মনোক্লোনাল এন্টিবডি প্রয়োগ করে রক্তে থাকা ক্ষতিকর বাতসৃষ্টিকারী এন্টিবডি ধ্বংস করা হচ্ছে। এগুলো বিশেষ ধরনের ব্যথামুক্ত ইনজেকশন রা ত্বকের নিচে বা শিরাপথে দিলে রোগ উপশম হচ্ছে।

খ। পিআরপি- আঘাতজনিত বা বয়সজনিত অস্টিওআর্থ্রাইটিস এবং ডায়াবেটিস জনিত কাঁধের ব্যথায় যুগান্তকারী চিকিৎসা পিআরপি। রোগির রক্ত থেকে ছাঁকনকৃত রক্তের হলুদ অংশের মধ্যে যে অনুচক্রিকা থাকে সেটিকে পৃথক করে, এই হলুদ তরলটি আক্রান্ত অস্হিসন্ধির মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। রক্তের অনুচক্রিকার মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান বা গ্রোথফ্যাক্টর ক্ষয় হয়ে যাওয়া অস্সিসন্ধির পুনর্জাগরণের খাদ্য হিসেবে কাজ করে ব্যথা নিরাময় করে।

গ। স্টেমসেল থেরাপি- ক্ষয়িষ্ণু অস্হিসন্ধিকে আবার পুনর্জাগরণী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সচল করা সম্ভব। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সকল গবেষণা স্টেমসেলকে ঘিরে। রোগীর অস্হিমজ্জা বা চর্বির মধ্যে জমে থাকা স্টেমকোষ বা মাতৃ কোষগুলোকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ছাঁকন করে সেই বিশুদ্ধ স্টেমসেল তরল আকান্ত অস্হিসন্ধি বা অঙ্গে প্রতিস্হাপন করলে সেই অঙ্গে নতুনভাবে কোষবিভাজনের ফলে আক্রান্ত অস্হিসন্ধি পুনরায় নড়নক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে।

ঘ। প্রো-বায়োটিক থেরাপি: বলা হয়ে থাকে, সচল অটোইমিউন বাতের উৎস পরিপাক নালীতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আধিক্য আর উপকারী ব্যাকটেরিয়া হ্রাস পাওয়া। তাই, উপকারী ব্যাকটেরিয়া খাদ্যে গ্রহণের মাধ্যমে রক্তে এন্টিবডি তৈরির প্রবণতা কমানো যায়।

এইসমস্ত আধুনিক চিকিৎসাগুলোর কোনটি কোন ধরনের রোগীর জন্য প্রযোজ্য তা রোগীর রোগের অবস্হা, জটিলতা ও অর্থনৈতিক অবস্হার সাথে সঙ্গতি রেখে নির্ধারণ করবেন একজন ইন্টারভেনশনাল রিউমাটোলজিস্ট। তাই, বিচলিত না হয়ে বাতরোগের যেকোন লক্ষণ অনুভব করলেই পরামর্শ নিন একজন রেজিস্টার্ড বাতব্যথা বিশেষজ্ঞের।

ডা. মন্জুর এ খোদা
এমবিবিএস(আর ইউ), এমআরসিপি(লন্ডন, ইউ্কে)
ইউলার ইসিআরডি ইন রিউমাটোলজি, সুইজারল্যান্ড।
ইর্ন্টানাল মেডিসিন ও রিউমাটোলজি(বাত) বিশেষজ্ঞ।
ইন্টারভেনশনাল রিউমাটোলজিস্ট, ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিকস,রাজশাহী লক্ষ্মীপুর মোড়, মালিবাগ ঢাকা হেড অব রিউমাটোলজি, বেটারলাইফ হাসপাতাল, রামপুরা, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *