ইমাম হোসাইন, পুঠিয়া (রাজশাহী):
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ভালুকগাছি ইউনিয়নের রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে জোর জবরদখল করে এক বিধবা নারীকে মারধর, ও বাড়ি ভাঙচুর করে নিজের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করে বাড়ির ভিটা জবরদখল করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় শহীদ নামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
সোমবার (১৪ আগস্ট) সকাল ১০ টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে। সারেজমিনে গিয়ে দেখা ও জানা যায় যে, ভুক্তভোগী পরিবারের বসতবাড়ি ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য। মারধরের শিকার হয়ে ভুক্তভোগী বিধবা নারী পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
ভুক্তভোগী ওই বিধবা নারী রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের মৃত, বাসার আলীর স্ত্রী, জাহানারা বেগম। জমা জমি কে কেন্দ্র করে ওই মারধরের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করছেন ভুক্তভোগী বিধবা নারী জাহানারা বেগম। ওই জমিটির নিয়ে কোটে একটি মামলাও চলমান। ওই বিষয় নিয়ে এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বসা হলে জমিটি ভুক্তভোগী জাহানারা বেগমকে ভোগদখল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
জানা যায় ভুক্তভোগী ওই পরিবার কোনো মতে ওই বসত বাড়িতে থেকে মানুষের কাছে চেয়ে চিনতে ভিক্ষা করে দিনযাপন করেন। সকালে জাহানারা বেগমকে মারধর ও বসতবাড়ি ভাংচুর করার পর, রাতে তার দুজন প্রতিবন্ধী মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে তাহেরপুর নামক এলাকা থেকে ভিক্ষা করে আসার সময়, আবার তার উপর হামলা করা হয়। পরে প্রতিবন্ধী ওই মেয়েটিও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এছাড়াও জাহানারা বেগমের আরো একটা ছেলে সন্তান রয়েছে। ভুক্তভোগী নারীর জাহানারা বেগমের ভাগিনা আব্দুল মান্নান তিনি দাবী করে বলেন, মূলত মামা বেঁচে থাকতে কোথাও কোন জমি হয়তো শহীদ নামের ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে থাকতে পারে।
তবে বাড়ির ভিটা এই জমিটি মামার নামে নয় মামীর নামে বর্তমানে খাজনা খারিজ হোল্ডিং চলছে অথচ এই বসতবাড়িটি পার্শ্ববর্তী গ্রামের শহীদ তিনি মামার নিকট থেকে কিনে নিয়েছে বলে দাবি করছে। এ বিষয়ে বড় রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের তামজিদ নামের এক প্রতিবেশী বলেন, শহীদ নামের ওই ব্যক্তি জাল কাগজ তৈরি করে এনেছিল। পরে চেয়ারম্যান সহ আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এর সাথে বিষয়টি নিয়ে বসে ছিলাম।
পরে ইউএনও স্যার শহীদকে ওই জমিতে যেতে নিষেধ করে। আমরা যতটুকু জানি এই জমিটি বাসারের নয়, এই জমিটি বাসারের স্ত্রী জাহানারা নামে আছে। এ বিষয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষ প্রতিবেশী আজগর আলী তিনি বলেন, আমরা মাঠে কাজ করছিলাম হঠাৎ দেখি শহীদ শহীদের স্ত্রী এবং সুলতান সহ আরো বেশ কয়েকজন ব্যক্তি অন্য এলাকা থেকে ভাড়া করে আনা।
তাদের আমরা চিনি না। তারা সবাই মিলে বিধবা ওই মহিলাটিকে ধরে ব্যাপক মারধর করে। এবং মাজা কোমর ভেঙ্গে দেয়। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী সরভানু নামের এক ব্যক্তি তিনি বলেন, সকাল প্রায় দশটার দিকে হাড়োগাথি এলাকার শহীদ, শহীদের বউ হান্নান মান্নান মালেক সহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন হাসুয়া, শাবল সহ নানান রকম দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে হামলা করে ভুক্তভোগী জাহানারা বেগমের উপর।
পরে তারা ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে পাশাপাশি সেখানে থাকা গাছপালা কেটে দিয়ে চলে যায়। স্থানীয় প্রতিবেশী শেফালী খাতুন নামের অপর আরেকজন ব্যক্তি তিনি বলেন, যারা আজ ভাঙচুর ও মারধর করেছে তাদের ওই এলাকায় আমার মায়ের বাড়ি। গতকাল আমি মায়ের বাড়িতে থাকা অবস্থায় মানুষের মাধ্যমে শুনতে পাই যে জাহানারা বেগমের বাড়িতে আজ হামলা চালানো হবে। মানুষের কথাই ঠিক হলো।
ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও জাহানারা বেগমকে মারধর করার আগেই, তারা যখন লাঠি সোটা নিয়ে ওই এলাকা থেকে বের হচ্ছিল, সে সময় আমি নিজেই পুলিশের কাছে ফোন দিয়েছি। অথচ পুলিশ আসতে অনেক দেরি করেছে। পুলিশ সময় মত পৌঁছালে এই ঘটনা ঘটত না।
মারধর ও ভাঙচুর করে চলে যাবার পরে পুলিশ এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মারধরের শিকার ভুক্তভোগী ওই বিধবা নারী জাহানারা বেগম তিনি বলেন, হাড়োগাথি এলাকার শহীদ দলবল নিয়ে এসে আমার বাড়ি ভাঙচুর করে। পাশাপাশি আমাকে ও আমার নাতিকে অনেক মারধর করে।
কোদাল দিয়ে মেরে আমার মাজা কোমর ভেঙ্গে দিয়েছে। আমার জমি থেকে তারা আমাকে অন্যায় করে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে। আমি এই ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত শহিদ আলী বলেন, বারবার আমাকে হয়রানি করার জন্য আমি ওদের বাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছি। তবে ওদের কাউকে আমি মারধর করিনি।
ওই জমিতে আমি ক্রয় করেছি। আমার পক্ষে কোর্টের রায় আছে। আমার কাগজ পাতি সবকিছু ঠিক আছে। এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় মেম্বার মোঃ আয়েন উদ্দীন বলেন, আসলে আমি ঘটনার সময় এলাকায় ছিলাম না আমি পরে মানুষের মাধ্যমে জানতে পারি জাহানারা বেগমের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ৪ নং ভালুকগাছি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জিল্লুর রহমান তিনি বলেন, আমি ঘটনা শুনেছি প্রতিপক্ষ এসে জাহানারা বেগমের বাড়ি ভাঙচুর করে ও জাহানারা বেগমকে মারধর করে। প্রায় ৫০ বছর আগে থেকে ওই বসতবাড়িতে বসবাস করে আসছেন বা ভোগদখল করে আসছেন ভুক্তভোগী বিধবা জাহানারা বেগম।
এই বিষয় নিয়ে ইউএনও স্যারের সাথে বসা হলে ইউএনও স্যার সবকিছু দেখে শুনে রায় দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী জাহানারা বেগমের পক্ষে। এই হল ঘটনা এমনটাই বলছিলেন স্থানীয় চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফারুক হোসেন বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন একটি পক্ষ। তদন্ত করে সঠিক আইনানুগভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।