নাটোরে ধর্ষণের শিকার হয়ে ১১ বছরের শিশু ১০ মাসের অন্তঃসত্ত্বা!

নাটোরে ধর্ষণের শিকার হয়ে ১১ বছরের শিশু ১০ মাসের অন্তঃসত্ত্বা!

রাজশাহী

স্টাফ রিপোর্টারঃ

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তামান্না (ছদ্মনাম)। বয়স ১১ বছর। আগামী নভেম্বরে তার বার্ষিক পরীক্ষা। এ সময় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েই ব্যস্ত থাকার কথা ছিল শিশুটির। অথচ এখন তার জীবনটাই যায় যায় অবস্থা। ধর্ষণের শিকার হয়ে ১০ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তামান্না। এ অবস্থায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে সে।

শিশু তামান্নার বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায়। ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির দাদি বাদী হয়ে গত ১৮ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। তবে অভিযুক্তকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

অভিযুক্তের নাম জাহিদুল খাঁ (৫৫)। তিনি গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দক্ষিণ নাড়িবাড়ি গ্রামের কালু খাঁর ছেলে। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বিকেলে বাড়িতে বসে শিশু তামান্না জানায়, ঘটনার দিনটি ছিল শুক্রবার। দুপুরে গোসলের পর বাড়ির ভেতর কাপড় পরিবর্তন করছিল সে। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে জাহিদুল পেছন থেকে তাকে জাপটে ধরে মুখে গামছা পেঁচিয়ে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে জানালে গলা কেটে হত্যার হুমকি দেন। ওই ঘটনায় দুদিন ধরে সে অসুস্থ ছিল। ভয়ে বিষয়টি কাউকে জানায়নি তামান্না।

শিশুটির চাচি জানান, ঘটনার সাতমাস পর তার দৌহিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। জিজ্ঞাসা করলে তামান্না কোনো উত্তর দিতো না। তবে পরীক্ষার পর প্রাথমিকভাবে গর্ভে সন্তান থাকার বিষয়টি জানতে পারেন তারা। এরপর স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে আলট্রাসনোগ্রাফি করার পর চিকিৎসক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এখন প্রসবের সময় এগিয়ে আসায় শিশুটি ভীত হয়ে পড়েছে।

শিশুর চাচা জানান, শিশুটির বাবা-মা দুজনই পৃথকভাবে বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। ছোট থেকে শিশুটিকে তারাই লালন পালন করছেন। স্থানীয় একটি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে সে। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় বিদ্যালয়ে যাওয়া এবং পরীক্ষা দেওয়া কোনোটিই হচ্ছে না তার।

তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর গ্রাম্য সালিশে রফা করতে চেয়েছিলেন অভিযুক্ত জাহিদ। কিন্তু তা হয়নি। মামলা করা হলেও পুলিশ এখনো তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এখন প্রতিবেশীদের কটু কথা শুনতে হচ্ছে তাদের।

এ বিষয়ে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় বলেন, ‘এমন দুঃখজনক ঘটনা গুরুদাসপুরে এটিই প্রথম। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অন্তঃসত্ত্বা শিশুটির দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, অপ্রাপ্ত বয়সে মা হতে গিয়ে জরায়ু ছিঁড়ে যাওয়াসহ জরায়ুতে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য সরকারিভাবে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশুটির গর্ভপাত ঘটানো হবে।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, আসামি পলাতক থাকায় এখনো তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযান অব্যাহত আছে।

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বলেন, শিশুর পেটে শিশু জন্ম নেওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক। অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিশুটির খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *