সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে বৃদ্ধ বাবা-মাকে কবরস্থানে ফেলে গেলেন পাঁচ ছেলে!

সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে বৃদ্ধ বাবা-মাকে কবরস্থানে ফেলে গেলেন পাঁচ ছেলে!

রাজশাহী

স্টাফ রিপোর্টারঃ

সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে এক বৃদ্ধ দম্পতিকে কবরস্থানের পাশে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের পাঁচ ছেলের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী দম্পতি হামিদ মোল্লা ( ৮৬) ও ফজিলা খাতুন (৭৭) চৌহালী উপজেলার দুর্গম উমারপুর ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

তাদের পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। তাদের মেয়ে মনোয়ারা খাতুন বলেন, আমার ভাইয়েরা কেউ বাবা-মায়ের দায়িত্ব নেবে না। এজন্য আমার বাড়ির পাশের সম্ভুদিয়া কবরস্থানে কাউকে না জানিয়ে ভাইয়েরা তাদের রেখে গেছেন। বাবা-মাকে ভরণপোষণ দেওয়া আমার জন্য কঠিন। তবে এ বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন জানতে পেরে আমার অসহায় বৃদ্ধ বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই দম্পতির পাঁচ ছেলে দীর্ঘদিন ভাগাভাগি করে তাদের ভরণপোষণ করে আসছিলেন। কিন্তু যমুনার ভাঙনে তাদের বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় একেক ছেলে একেক স্থানে চলে যান। এতেই শুরু হয় বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানদের অযত্ন-অবহেলা। এ নিয়ে চলে বেশ দেনদরবার, কোন সন্তানের বাড়িতে থাকবেন বৃদ্ধ বাবা-মা।

এক পর্যায়ে সেজো ছেলের স্ত্রী মানিকগঞ্জের বাড়ি থেকে হাপানিয়া চরে পাঠিয়ে দেন শ্বশুর-শাশুড়িকে। চরে বৃদ্ধর ভাগ্নের বাড়িতে কিছুদিন আশ্রয় পেয়েছিলেন। তবে কিছুদিন যেতে না যেতে তারাও অবহেলা করতে থাকেন। সর্বশেষ কয়েক দিন আগে পাশের চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নে ওই দম্পতির মেয়ের বাড়ি সংলগ্ন সম্ভুদিয়া কবরস্থানে কাউকে না জানিয়ে রেখে যান স্বজনরা। পরে ওই দম্পতির কান্নাকাটি দেখে স্থানীয়রা তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তারা জানান, এখানে তাদের মেয়ের বাড়ি। খবর পেয়ে বৃদ্ধার মেয়ে মনোয়ারা খাতুন এসে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান।

এদিকে মেয়ে বিধবা হয়েছেন কয়েক বছর আগেই। এ অবস্থায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়েন তিনি।

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুব হোসেন জানান, ওই বৃদ্ধ দম্পতির এমন কষ্টের বিষয়টি জানার পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি), স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও একজন চিকিৎসককে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তারা গিয়ে ওই বৃদ্ধ দম্পত্তির সঙ্গে কথা বলে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম কবরস্থানের পাশে সন্তানদের ফেলে যাওয়া বাবা-মাকে তাদের বিধবা মেয়ে আশ্রয় দিয়েছেন। কিন্তু তারও সামর্থ্য নেই বাবা-মায়ের ভরণপোষণ করার। এজন্য আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ ওই দম্পতির কাছে গিয়েছিলাম। প্রাথমিকভাবে তাকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। তারা যেহেতু ভূমিহীন, আমরা তাদের জন্য সরকারিভাবে জায়গা ও ঘরের ব্যবস্থা করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *