স্টাফ রিপোর্টারঃ
বগুড়ার শেরপুরে পোশাক শ্রমিককে অপহরণের পর ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্তদের কাছ থেকে ‘শাস্তি’ হিসেবে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন প্রভাবশালী গ্রাম্য মাতব্বররা। পরবর্তীতে জরিমানার সেই টাকা ভুক্তভোগী পরিবারকে না দিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে ভুক্তভোগী পরিবারের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু গ্রামের প্রভাবশালী মাতব্বরদের ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না তারা।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, তারা গরিব মানুষ। গ্রামের বিচার না মানলে অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এমনকি গ্রামছাড়া করারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের এক তরুণী ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তিনি ছুটি নিয়ে ৩১ আগস্ট দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ি যাওয়ার জন্য শেরপুর শহরের ধুনটমোড় টার্মিনালে নামেন। এরপর বাড়ি যাওয়ার জন্য একটি অটোরিকশায় ওঠেন। এ সময় তার সঙ্গে যাত্রীবেশী আরও চারজন বখাটেও ওঠেন ওই অটোরিকশায়। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারেননি তরুণী।
শেরুয়া বটতলা বাজার এলাকায় পৌঁছালেই যাত্রীবেশী বখাটেরা তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করেন। পাশাপাশি শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাতও দেন তারা। এমনকি অটোরিকশা থেকে ওই নারীকে নামিয়ে হাওয়াখানা নামক স্থানে নিয়ে তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালান বখাটেরা। মেয়েটি চিৎকার করলে বখাটেরা পালিয়ে যান।
ঘটনার দুদিন পর শনিবার রাতে ঘটনাটি জানিয়ে ধড়মোকাম গ্রামের আব্দুল মোমিন, ছহির উদ্দিনসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও দুজনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী তরুণী নিজেই থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এরপরই ঘটনাটি প্রকাশ পায়।
এদিকে অভিযুক্তদের বাঁচাতে মাঠে নামে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বিশেষ করে গ্রামের প্রভাবশালী তিন-চারজন মাতব্বর। এরই ধারাবাহিকতায় ঘরোয়াভাবে গ্রাম্য সালিশ ডেকে অভিযুক্তদের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন তারা। কিন্তু জরিমানার টাকা ভুক্তভোগীর পরিবারকে না দিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে মাতব্বরদের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী তরুণীর মা অভিযোগ করে বলেন, সালিশে ১ লাখ টাকা আদায় করা হয়। শুধুমাত্র দুই হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে মেয়েকে ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর কোনো টাকা পাইনি। পাশের গ্রামের প্রভাবশালী মাতব্বর শফি কামাল ও ছহির উদ্দিন এসে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে গেছেন। এমনকি ঘটনাটি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে গ্রাম থেকে উচ্ছেদের হুমকি দিয়ে গেছেন। এতে করে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি। ভয়ে আইনের আশ্রয়ও নিতে পারছি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শফি কামাল ও ছহির উদ্দিন নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বলেন, তাদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। সেটি সমাধান করা হয়েছে। শ্লীলতাহানির চেষ্টা বা জরিমানা আদায়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এসব গুজব।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফেরদৌস জানান, ঘটনাটি আমি শুনেছি। তবে আপস-মীমাংসার বিষয়ে আমার জানা নেই। থানায় অভিযোগ হয়েছে আইন অনুযায়ী দোষীদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে শেরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগটি তদন্তাধীন। তাই কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে ভুক্তভোগীর মার অভিযোগ, তাকে বিভিন্ন কায়দায় হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।